দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ১৪ তম আসরের ফাইনাল যেন নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ ছিল। ক্ষণে ক্ষণে রং বদল। টানটান উত্তেজনা। শেষ বল পর্যন্ত গড়াল ম্যাচ। কিন্তু লিটন দাসের এক আউট নিয়ে বিতর্ক যেন তুঙ্গে। বিতর্ক যখন চারদিকে তখনি ভারতীয় গণমাধ্যম এবেলার শিরোনাম‘১৪ জনের কাছে হেরে গেল বাংলাদেশ’। যদিও তারা বাংলাদেশি একটি গণমাধ্যমের সূত্র দিয়ে এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ যদি এশিয়া কাপের ফাইনালটায় সহজেই হেরে যেত বিতর্কটা হয়তো কিছুটা কমে যেত। তেমনটা হয়নি। কারণ ভারতের বিপক্ষে টাইগাররা হেরেছে একেবারে শেষ বলে। এমন হারের পর আফসোসটা আরও বেড়ে গেছে।
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবেলা তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশি গণমাধ্যমের এমন শিরোনাম-নিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কাও করেছে।
গণমাধ্যমটি বলছে, এশিয়া কাপের ফাইনালে সবচেয়ে উজ্জ্বল ব্যাটসম্যানের নাম ছিল লিটন দাস। ঝকঝকে শতরানের পরে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। ১২১ রানের মাথায় আচমকাই কুলদীপ যাদবের বলে ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে যান লিটন। বলটা ছিল গুগলি। ফসকান লিটন। চকিতে তাঁকে স্টাম্পড করে দেন ধোনি। আম্পায়ার থার্ড আম্পায়ারের কাছে পরামর্শ চান। রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্তে আসতে বেশ সময় লেগেছিল আম্পায়ারের। নানা অ্যাঙ্গেলে বিষয়টি দেখা হয়। ক্রিজের দাগে পা ছিল লিটনের। কিন্তু সেই দাগ তিনি পেরোননি বলে নিশ্চিত হতেই তাঁকে আউট ঘোষণা করেন আম্পায়ার। প্রায় তিন মিনিট ধরে রিপ্লে দেখার পরেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ঘনিয়ে ওঠে বিতর্ক। যে বিতর্কের জের এখনও রয়েছে।
গণমাধ্যমটির খবরে আরও বলা হয়েছে, অতীতেও ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক হয়েছে। ২০১৫ সালের ম্যাচে রোহিত শর্মার আউট নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। পরবর্তী বেশ কয়েকটি ক্লোজ ম্যাচ হয় দু’দলের। বছরের শুরুতে নিদাহাস ট্রফিতে শেষ বলে পাঁচ রান বাকি থাকা অবস্থায় কার্তিকের মারা ছক্কায় ম্যাচ জেতে ভারত। তারও আগে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৩ বলে ২ রান বাকি থাকা সত্ত্বেও পর পর তিন বলে তিনটে উইকেট খুইয়ে বিশ্রীভাবে ম্যাচ হেরেছিলেন মুশফিকুররা। সেই জমকালো প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভিতরেই নতুন রং যোগ করল এবারের এশিয়া কাপের ফাইনাল। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ ও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত— দুটোই পাওয়া গিয়েছে এই ম্যাচে।
এদিকে গতকালে দুবাইয়ের মাটিতে এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশের ইনিংসের ২৪৬ তম বলে কুলদীপ যাদবের গুগলিতে বিভ্রান্ত হওয়ায় পা বের হয়েছিল লিটনের। পরে সেটিপেছনের নেওয়ার চেষ্টার সময়েই মাত্র ০.১৬ সেকেন্ডের মাথায় স্টাম্প ভেঙে দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
এরপর রিপ্লেতে দেখা গেছে, লিটনের পা লাইনে আছে। বেশ কয়েকটি অ্যাঙ্গেল থেকে দেখেও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছিলনা। এর ফলে ‘জুম ইন’ করে দেখার সিদ্ধান্ত নেন তৃতীয় আম্পায়ার রড টাকার।
দৃশ্যপট বড় করার পর দেখা যায়, লাইনের ওপরেই আছে লিটনের পা। তবে লাইনের পেছনে কোনো অংশে পা নেইতাঁর।
তৃতীয় আম্পায়ার নানা অ্যাঙ্গেল থেকে অনেকবার দেখে, জুম করেও সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলেন না। অবশেষে প্রায় তিন মিনিট পর সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো ‘আউট’। ব্যাটসম্যান ‘বেনিফিট অব ডাউট’ পেতে পারতেন কিনা, সেই প্রশ্ন থাকল।
ক্রিকেটের আইনের ৩৯তম ধারা স্টাম্পিং সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘একজন ব্যাটসম্যান আউট হবেন, যদি তিনি ক্রিজেরবাইরে থাকেন; অবশ্যই যদি বলটা নো না হয়।’ কুলদীপের বলটা যে নো ছিল না সেটা রিপ্লেতে দেখা গেছে। কিন্তু লিটনকি বাইরে ছিলেন? এ ব্যাপারে এ আইন কী বলে?
বিবিসি এ আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, ‘স্টাম্পিং তখনই হবে যখন উইকেটরক্ষক বল ধরে ব্যাটসম্যানের শরীরেরকোনো অংশ বা ব্যাট ব্যাটিং ক্রিজের পেছনে আনার আগে স্টাম্প ভেঙে ফেলতে পারেন। ব্যাট বা পায়ের গোড়ালি দিয়েব্যাটিং ক্রিজ ছুঁলেও (লাইনে থাকলে) ব্যাটসম্যান বাঁচতে পারবে না। অবশ্যই ক্রিজের পেছনে মাটিতে কিছু থাকতে হবে।’
আর ক্রিজের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘পপিং ক্রিজ হচ্ছে ক্রিজের দাগের পেছনের অংশটা (যে অংশ উইকেটরক্ষকের কাছে)।ফলে, ব্যাটসম্যানের ব্যাট বা পা ক্রিজের দাগে থাকল কিন্তু ক্রিজ মার্কিংয়ের পেছনের মাটি ছুঁল না, সে ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানস্টাম্পড হবেন।’
এ ব্যাপারে জাতীয় দলের নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার বলেন, ‘অন দ্য লাইন এরসিদ্ধান্ত আম্পায়ারের ওপর। আর ‘বেনিফিট অব ডাউট’ ব্যাটসম্যানের পক্ষে যায়। মাঠের আম্পায়ার দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তুতৃতীয় আম্পায়ারের সুযোগ আছে ভালোভাবে তা দেখার। যেহেতু বারবার দেখেছে, তার মানে আম্পায়ারের মনে দ্বিধাছিল। আর সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত লিটনের পক্ষে যাওয়া উচিত ছিল।’
প্রসঙ্গত, এশিয়া কাপের ১৪তম আসরের ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়ে সপ্তমবারের মতো চ্যাম্পিয়নহলো ভারত। আর ভারতের কাছে হেরে তৃতীয়বারের মতো এশিয়া কাপ জেতার স্বপ্ন ভঙ্গ হলো বাংলাদেশের। ভারতেরবিপক্ষে ১২০ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপের পর বাংলাদেশের ২২২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
কিন্তু সহজ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে জয় তুলে নিতে ভারতকে খেলতে হয়েছে শেষ ওভারের শেষ বল পর্যন্ত। আর এ নিয়ে ৭ম বারেরমত শিরোপা উঠলো ভারতের হাতে।
ফাইনাল শেষে তাই লিটন কুমার দাসের ১২১ রানের ইনিংসটিই ম্যাচ সেরা বিবেচিত হলো বিচারকদের কাছে। শেষ পর্যন্তফাইনাল সেরার পুরস্কার উঠলো লিটনের হাতে।
আর ভারতের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান রোহিত শর্মার ৪৮, এছাড়া ৩৭ দিনেশ কার্তিকের, ধোনির ৩৬ এবং ২৩ রানেঅপরাজিত ছিলেন কেদার যাদব।