এখন আর দলবদল নিয়ে আগের মতো হইচই হয় না। সাড়া পড়ে না, চমকও থাকে না। ঢাকার ক্লাব নিয়ে ভক্ত ও সমর্থকদের আগ্রহই যে গেছে কমে। তাই কে কোন দলে যোগ দেবেন, কোন দল কেমন হবে? এসব নিয়ে মাতামাতি খুব কম।
আর দলবদলে নাটকীয়তা ও চমকও শূন্যের কোটায় এসে দাঁড়িয়েছে। শীর্ষ তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদের কে কোথায় খেলবেন, তা অনেকেই জেনে গেছেন আগে।
মোহামেডান, আবাহনী, প্রাইম ব্যাংক, গাজী গ্রুপ, শেখ জামাল, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ, শাইনপুকুরের দল কেমন হবে সেটাও আগে থেকেই জানা হয়ে গেছে সবার। আজ শনিবার শেষ দিন মোহামেডানসহ কয়েকটি দলের কেবল আনুষ্ঠানিকতা ছিল বাকি। তা সারতেই আজ সকাল সকাল মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সিসিডিএম কার্যালয়ে এসে মোহামেডানে সই করেন দেশসেরা তারকা সাকিব আল হাসান।
সাকিব মোহামেডানে নাম লেখানোর আগে আরও একজন সাদাকালো শিবিরে যোগ দিলেন, তিনি মোহাম্মদ আশরাফুল। এক সময়ের সেরা তারকা নীরবে-নিভৃতে তার পুরোনো দল মোহামেডানে এ বছরই ফিরবেন, এমন কথা ছিল না। গতকাল মোহামেডান কর্তারা তাদের নতুন ও পুরোনো মিলে পুরো স্কোয়াডের যে তালিকা দিয়েছেন, তাতেও আশরাফুলের নাম ছিল না।
ক্যারিয়ার সায়াহ্নে দাঁড়ানো আশরাফুল একদম শেষ মুহূর্তে তার পুরোনো ক্লাবে ফিরলেন। মোহামেডানে আগেও আরও তিনবার খেলেছেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। তবে আজকের ফেরাটা অন্যরকম। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে সম্ভবত এটাই হবে আশরাফুলের শেষ দলবদল।
জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে আশরাফুল জানিয়েছেন, ‘আমি এ বছর প্রিমিয়ার লিগ খেলেই খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানতে চাই। কাজেই ধরে নেন, এ বছরটাই হবে প্রিমিয়ার ক্রিকেটে আমার শেষ বছর।’
সেই ২০০০ সালে সদ্য কৈশোর পার করা ১৭ বছরের যুবা আশরাফুল ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের শীর্ষ আসর প্রিমিয়ার লিগ খেলতে শুরু করেন। তার প্রথম দল ছিল তখনকার প্রতিষ্ঠিত শক্তি সূর্যতরুণ।
প্রিমিয়ার লিগ খেলার আগে মাত্র ১৪ বছর বছর বয়সে অংকুর ক্রিকেট একাডেমির হয়ে তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগে অংশ নেন কিশোর আশরাফুল। এরপর ১৯৯৮-১৯৯৯ ‘তে যোগ দেন দ্বিতীয় বিভাগের দল অমরজোতিতে। আজকে দেশের ক্রিকেটের অনেক বড় নাম খালেদ মাহমুদ সুজন ছিলেন তখন অমরজোতি ক্লাবের তত্ত্বাবধানে।
কয়েক বছর পর ২০০৪-২০০৫ এর দিকে আশরাফুল প্রথম যোগ দেন মোহামেডানে। ২০০৮ সালে মোহামেডান যেবার শেষবার প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়, সেই দলের অন্যতম সদস্যও ছিলেন আশরাফুল।
ম্যাচ গড়াপেটার জন্য নিষেধাজ্ঞায় পড়ার পর মুক্ত হয়ে ২০১৭ সালে আশরাফুল ফের যোগ দেন মোহামেডানে। ২ বছর খেলেন। এরপর আরেকটি বিরতি দিয়ে এবার ফেরা।
২ যুগ পর এ ঐতিহ্যবাহী ক্লাব থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি ঘটাতে চাচ্ছেন আশরাফুল। তার কথা, ‘মোহামেডান সবসময়ই আমার প্রিয় দল। আমি মোহামেডানে আগে আরও তিনবার খেলেছি। মোহামেডান যেবার শেষ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়, সেবারও আমি ছিলাম দলের অন্যতম পারফরমার। এবার ক্যারিয়ারের বিদায়ী বছরও অনেক আশা নিয়ে মোহামেডানে এসেছি।’
‘মোহামেডানের অন্যতম কর্মকর্তা সাব্বির ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। মনে আশা এ বছর মোহামেডান আবার হারানো শিরোপা ফিরে পাবে। আর আমিও ভালো খেলে মোহামেডানের সাফল্যে অবদান রাখতে পারবো। যদি তা হয়, তাহলে আমার ক্যারিয়ারের সফল পরিসমাপ্তি ঘটবে। আমি খুশি মনে খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানতে পারব’-যোগ করেন আশরাফুল।
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কী করতে চান? আশরাফুলের ইচ্ছে কোচিংয়ে যুক্ত হওয়ার। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে প্রশিক্ষক হিসেবে ক্রিকেটের সাথেই সম্পৃক্ত থাকার ইচ্ছে আছে। মোহামেডান চাইলে এই দলেই কোচিং করানোর ইচ্ছে রাখি।’