পুরো এশিয়া কাপে ব্যাট হাতে পুরোপুরি ব্যর্থ ছিলেও গতকাল ফাইনালে নিজেকে চেনালেন লিটন দাস। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি তোলার পরও খেলছিলেন দারুণ। কিন্তু বিপত্তি ঘটে ১১৭ বলে। তখন বাংলাদেশের ইনিংসের ৫৪টি বল বাকি। আর সেসময় ৪১তম ওভারে স্টাম্পিং হয়ে যান লিটন দাস। কিন্তু এই আউট নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্কের। অনেকেই অনেক ধরণের কথা বলছেন। কিন্তু লিটন কি আসলেই আউট ছিলেন?
বাংলাদেশের ইনিংসের ২৪৬ তম বলে কুলদীপ যাদবের গুগলিতে বিভ্রান্ত হওয়ায় পা বের হয়েছিল লিটনের। পরে সেটি পেছনের নেওয়ার চেষ্টার সময়েই মাত্র ০.১৬ সেকেন্ডের মাথায় স্টাম্প ভেঙে দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
এরপর রিপ্লেতে দেখা গেছে, লিটনের পা লাইনে আছে। বেশ কয়েকটি অ্যাঙ্গেল থেকে দেখেও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এর ফলে ‘জুম ইন’ করে দেখার সিদ্ধান্ত নেন তৃতীয় আম্পায়ার রড টাকার।
দৃশ্যপট বড় করার পর দেখা যায়, লাইনের ওপরেই আছে লিটনের পা। তবে লাইনের পেছনে কোনো অংশে পা নেই তাঁর।
তৃতীয় আম্পায়ার নানা অ্যাঙ্গেল থেকে অনেকবার দেখে, জুম করেও সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলেন না। অবশেষে প্রায় তিন মিনিট পর সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো ‘আউট’। ব্যাটসম্যান ‘বেনিফিট অব ডাউট’ পেতে পারতেন কিনা, সেই প্রশ্ন থাকল।
ক্রিকেটের আইনের ৩৯তম ধারা স্টাম্পিং সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘একজন ব্যাটসম্যান আউট হবেন, যদি তিনি ক্রিজের বাইরে থাকেন; অবশ্যই যদি বলটা নো না হয়।’ কুলদীপের বলটা যে নো ছিল না সেটা রিপ্লেতে দেখা গেছে। কিন্তু লিটন কি বাইরে ছিলেন? এ ব্যাপারে এ আইন কী বলে?
বিবিসি এ আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, ‘স্টাম্পিং তখনই হবে যখন উইকেটরক্ষক বল ধরে ব্যাটসম্যানের শরীরের কোনো অংশ বা ব্যাট ব্যাটিং ক্রিজের পেছনে আনার আগে স্টাম্প ভেঙে ফেলতে পারেন। ব্যাট বা পায়ের গোড়ালি দিয়ে ব্যাটিং ক্রিজ ছুঁলেও (লাইনে থাকলে) ব্যাটসম্যান বাঁচতে পারবে না। অবশ্যই ক্রিজের পেছনে মাটিতে কিছু থাকতে হবে।’
আর ক্রিজের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘পপিং ক্রিজ হচ্ছে ক্রিজের দাগের পেছনের অংশটা (যে অংশ উইকেটরক্ষকের কাছে)। ফলে, ব্যাটসম্যানের ব্যাট বা পা ক্রিজের দাগে থাকল কিন্তু ক্রিজ মার্কিংয়ের পেছনের মাটি ছুঁল না, সে ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যান স্টাম্পড হবেন।’
এ ব্যাপারে জাতীয় দলের নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘অন দ্য লাইন এর সিদ্ধান্ত আম্পায়ারের ওপর। আর ‘বেনিফিট অব ডাউট’ ব্যাটসম্যানের পক্ষে যায়। মাঠের আম্পায়ার দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ারের সুযোগ আছে ভালোভাবে তা দেখার। যেহেতু বারবার দেখেছে, তার মানে আম্পায়ারের মনে দ্বিধা ছিল। আর সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত লিটনের পক্ষে যাওয়া উচিত ছিল।’
প্রসঙ্গত, এশিয়া কাপের ১৪তম আসরের ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়ে সপ্তমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত। আর ভারতের কাছে হেরে তৃতীয়বারের মতো এশিয়া কাপ জেতার স্বপ্ন ভঙ্গ হলো বাংলাদেশের। ভারতের বিপক্ষে ১২০ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপের পর বাংলাদেশের ২২২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
কিন্তু সহজ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে জয় তুলে নিতে ভারতকে খেলতে হয়েছে শেষ ওভারের শেষ বল পর্যন্ত। আর এ নিয়ে ৭ম বারেরমত শিরোপা উঠলো ভারতের হাতে।
ফাইনাল শেষে তাই লিটন কুমার দাসের ১২১ রানের ইনিংসটিই ম্যাচ সেরা বিবেচিত হলো বিচারকদের কাছে। শেষ পর্যন্ত ফাইনাল সেরার পুরস্কার উঠলো লিটনের হাতে।
আর ভারতের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান রোহিত শর্মার ৪৮, এছাড়া ৩৭ দিনেশ কার্তিকের, ধোনির ৩৬ এবং ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন কেদার যাদব।