ঘরোয়া ক্রিকেটে এটা এখন ওপেন সিক্রেট। যার বড় প্রমাণ এবারের লিগে শেষ হওয়া ৭টি ম্যাচ। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ম্যাচগুলোতে আকাশি-নীলদের ২৯টি উইকেটের পতন ঘটলেও যেখানে দেওয়া হয়নি একটিও লেগ বিফোর উইকেট বা এলবিডব্লিউ। বোলার-ফিল্ডাররা যতই আবেদন করুক না কেন এ সময়ে আবাহনীর বিরুদ্ধে আম্পায়ারদের আঙুল উঠেনি একবারও।
ঢাকা আবাহনী লিমিটেড, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বড় পুত্র শেখ কামালের হাত ধরে যার জন্ম। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত একটি ক্লাব। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি মাঠের চারদিকে যাদের বিরচরণ, সমৃদ্ধ করেছে লাল সবুজের ক্রীড়াঙ্গনকে। যাদের শোকেসে শোভা পায় ঘরোয়া আন্তর্জাতিক অসংখ্য ট্রফি।
কিন্তু বছর দশেক ধরে, আবাহনীর এ গৌরব অনেকটাই নিচের দিকে। পাড় আবাহনী সমর্থকরাও এখন হরহামেশাই লজ্জায় পড়েন এ কর্তাদের জন্য। তবে, সেটা যতটা না মাঠের খেলার কারণে তার চেয়ে বেশি এর কর্তা ব্যক্তিদের মাঠের বাইরের কর্মকাণ্ডই হতাশ করেন সবাইকে।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে বেশ কয়েকবছর ধরেই আবাহনী মানে যেন ছায়া জাতীয় দল। বাংলাদেশ দলের অন্তত ৭ থেকে ৮ জন নিয়মিত থাকেন আকাশি-নীলদের স্কোয়াডে। কিন্তু তারপরও মাঠের খেলায় হরদমই জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে। যদিও, আবাহনী কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেন না কখনোই।
এ বছরের ডিপিএলেও নেই কোনো ব্যতিক্রম। ৭ ম্যাচ শেষ হতে না হতেই বেশ কয়েকবার আবাহনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। ম্যাচগুলোর স্কোরকার্ড বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় তার কিছুটা প্রমাণ। ৭ ম্যাচে ২৯ বার আকাশি-নীল ব্রিগেডের ব্যাটসম্যানরা আউট হলেও সেখানে নেই কোনো লেগ বিফোর উইকেট। ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন, আবাহনীর বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে দ্বিধায় থাকেন ফিল্ড আম্পায়াররা।
ঘটনাটা কাকতালীয় বলেই মেনে নেওয়া যেত, যদি না আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে সাকিব আল হাসানের ঘটনাটা না ঘটত। মুশফিক পরিষ্কার এলবিডব্লিউ হলেও তাতে সায় দেননি মাহফুজুর রহমান। এরপরেই তো বাধে বিপত্তি।
আবাহনীর ৭ ম্যাচে এখন পর্যন্ত মাঠের আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন ৬ জন। যাদের মধ্যে এক তানভীর আহমেদ ছাড়া কারোই নেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা। ঘরোয়াতে সবচেয়ে বেশি ৯০টা ম্যাচ পরিচালনা করেছেন মাহফুজুর রহমান। আর বাকিদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০টি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ম্যাচ চালিয়েছেন ইমরান পারভেজ। মোজাহিদুজ্জামানের অভিজ্ঞতা ৭ ম্যাচের, সোহরাব হোসেন ৬ এবং হাবিবুর রহমানের ঝুলিতে আছে ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
অথচ এ প্রিমিয়ার লিগেই দায়িত্ব পালন করছেন অন্তত এমন তিনজন আম্পায়ার যাদের রয়েছে আন্তর্জাতিক ম্যাচ চালানোর অভিজ্ঞতা। সরফুদ্দৌলা ইবনে সৈকত, মাসুদুর রহমান মুকুল, গাজী সোহেলরা অন্য দলের ম্যাচে থাকলেও তাদের দেওয়া হয় না আবাহনীর ম্যাচে।
তবে, আম্পায়ারদের এককভাবে দোষ দিতে চান না ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। কারণ, আবাহনীর ডাগআউট, সেখানে যে থাকেন বিসিবির প্রভাবশালী পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন।
এমনকি সিসিডিএমের চেয়ারম্যান, বিসিবির সভাপতিসহ আরো অসংখ্য পরিচালকদের গায়ে যে লেগে আছে আকাশি-নীলের পরিচালকের তকমাও। স্বার্থের এই সংঘাত এখন কত দিন চলে সেটাই দেখার বিষয়।