Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যন্ত্রণা ও বেদনার প্রতিচ্ছবি হয়ে থমকে গেছেন যারা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০২:২০ PM আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০২:২০ PM

bdmorning Image Preview


আশিকুর রহমান বাধন অথবা মাহমুদুল হাসান লিমনের কথা মনে আছে? দুজনই এক সময় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের যুবাদের নেতৃত্বে ছিলেন আশিকুর আর ২০১০ সালে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাহমুদুল। ২০০৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আফতাব আহমেদ, নাফিস ইকবাল এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আশিকুরের নেতৃত্বে খেলেছিলেন।

সেবার স্বাগতিক বাংলাদেশ যুব বিশ্বকাপের প্লেট গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। নেতৃত্ব গুনের কারণে আশিকুরকে ধরা হচ্ছিলো বাংলাদেশ জাতীয় দলের ভবিষ্যত অধিনায়ক। ক্যারিয়ারের শুরুতে বিকেএসপিতে খেলার সময় নিজের নেতৃত্বের সামর্থ্য দেখিয়েছিলেন আশিকুর। এখন ক্রিকেটের সঙ্গেই নেই তিনি।

সম্প্রতি বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক 'ডেইলি স্টারের' সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। আশিকুর বর্তমানে একটি আইটি ফার্মে কর্মরত আছেন। তিনি বলেছেন, 'আমি এই মূহুর্তে এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না কারণ আমার অফিসের কেউ জানে না যে আমি একসময় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলাম এবং আমি তাদেরকে জানাতেও চাই না।'

আশিকুরের এই কথাগুলি যন্ত্রণা ও বেদনার প্রতিচ্ছবি হতে পারে, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেশের এক সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল একজন ক্রিকেটার এখন তাঁর অতীতকে আড়াল করতে চান এবং তার অর্জনগুলি স্মরণ করতেও চান না। কিন্তু কেন?

বয়সভিত্তিক দল পর্যন্ত সবকিছু ঠিকই ছিল তবে সবকিছু নাটকীয় ভাবে পরিবর্তন হতে খুব বেশি সময় নেয়নি। একসময়ের প্রতিভাবান ক্রিকেটার তাই হারিয়ে যেতেও সময় নেননি। 

মাহমুদুল অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১০  যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই দলের অনেকেই এখনও জাতীয় দল মাতাচ্ছেন। তবে হারিয়ে গেছেন সেই দলের দলনেতা। সৌম্য সরকার, এনামুল হক বিজয়, মুমিনুল হক এবং সাব্বির রহমান এক সময় মাহমুদুলের নেতৃত্বে খেলেছেন। তিনি এখনও ঘরোয়া ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন, স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় দলের হয়ে খেলার। 

মাহমুদুল মনে করেন, যুব বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ী আকবর আলীদের আসল পরীক্ষা শুরু হবে বয়ভিত্তিক দল থেকে বের হওয়ার পর। তাদের পড়তে হবে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে। যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে মাহমুদুলকেও। 

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'অনূর্ধ্ব -১৯ স্তর থেকে আসার এক বা দুই মৌসুম পর অনেক ক্রিকেটারের জন্য বিষয়গুলো কঠিন হয়ে উঠতে শুরু করে। তাদের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই প্রাথমিক ভাবে সব সমর্থন পাবেন এবং অনেকেই হাই পারফরম্যান্স দল, এমনকি 'এ' দলেও জায়গা পাবেন। আমি এমনও খেলোয়াড় দেখেছি যারা খেলাটাই ছেড়ে দিয়েছে।'

নিজ দলের দুজন ক্রিকেটারের উদাহরণ টেনে মাহমুদুল বলেছেন, 'আরমান বাদশার কথা মনে আছে? এই পেসার ২০১০ বিশ্বকাপে খেলেছিল। বছর দুয়েক পর খেলাই ছেড়ে দিয়েছিল ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে না পেরে। আরেকজন বাঁহাতি স্পিনার ছিল শাকুর আহমেদ। সে আমার অন্যতম অস্ত্র ছিল যুব বিশ্বকাপে। সে এখন অ্যামেরিকায় থাকে।'

বিপরীত উদাহরণও দিয়েছেন মাহমুদুল। তিনি বলেছেন, 'অবশ্যই তাদের মধ্যে কিছু খেলোয়াড় সফল হবে কিন্তু এক বা দুই বছর পারফরম্যান্স না করলে অনেকেই হারিয়ে যাবে।'

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের পর অনেক ক্রিকেটারই একা হয়ে যান। তারা তখন সম্পূর্ণ বিসিবির নিয়ন্ত্রণে থাকেন না। নিজেদের ফিট রাখতে তাদের অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়। অনেকসময় বিসিবির অবহেলার তারা হারিয়ে যায়।

পরিবারের কাছ থেকেও থাকে প্রত্যাশার চাপ। অবিভাবকরা বিশ্বাস করেন এক সময় তাদের সন্তান জাতীয় দলে খেলবে এবং অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। এটাই চাপে ফেলে দেয় তরুণ ক্রিকেটারদের। যখন তাদের ক্রিকেট ক্যারিয়ার এবং নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবা উচিত তখন এটা তাদের মনোযোগে কিছুটা হলেও বিঘ্ন ঘটায়।

যদিও অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে এসে সফলতার গল্পও লিখেছেন, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান এবং মেহেদী হাসান মিরাজরা। তারাও প্রত্যাশার চাপ এবং বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে সফল হয়েছেন। আকবরদেরও উচিত পূর্বসূরীদের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া এবং সফলতা থেকে অনুপ্রাণিত হওয়া।

Bootstrap Image Preview