পৃথিবী প্রতিদিনই পরিবর্তিত হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে না পেরে নানা রকম সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। সারা পৃথিবী থেকে সর্বাধিক সংখ্যক লোকজন চলতি বছর ইমিগ্রেন্ট হয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোতে স্থায়ীভাবে বসবাস ও চাকরি করার সুযোগ পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স, আর্থিক সামর্থ্যের মাপকাঠিতে নির্ধারণ হবে আপনার স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? আপনি আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং কিছু পদ্ধতি ও আইন মেনে আবেদন করে পরিবারসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই মাইগ্রেশন করার সুযোগ নিতে পারেন।
ঐতিহ্যবাহী যুক্তরাজ্যে কাজ ও পড়াশোনার সুযোগ
আনুমানিক প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ব্রিটিশ নাগরিক বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। যা মোট জনগণের প্রায় ১৩ শতাংশ। ইউকে সরকার ভিসার প্রক্রিয়াটিকে পয়েন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালনা করে থাকেন। যারা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ব্যবসায়ী বা খুবই দক্ষ, তাদের জন্য রয়েছে টায়ার-১ ভিসা। টায়ার-২ মূলত সেই সব দক্ষ শ্রমিকদের ভিসা, যাদের ইংল্যান্ডে খুঁজে পাওয়া যায় না। টায়ার-৩ ইতিমধ্যে আমাদের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ইউরোপিয়ান ইকোনোমিক এরিয়ার বাইরের দেশগুলোর ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার জন্য রয়েছে টায়ার-৪ ভিসা। অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, লন্ডন অব ইকোনোমিক্সসহ পৃথিবীর নামিদামি অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ রয়েছে দেশটিতে।টায়ার-৫ মূলত আমাদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভিসা প্রোগ্রাম।
ক্রিয়েটিভ বা দক্ষ খেলোয়াড় বা যারা চ্যারিটি কাজে সম্পৃক্ত বা যারা বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে যুক্ত বা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চুক্তির আওতায় যারা পড়েন বা ইউথ মোবালিটি স্কিম বা কাজের জন্য যারা ইউকেতে যেতে চায় তারাই মূলত এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
১২ থেকে ২৪ মাসের জন্য ভিসা দিয়ে থাকে এবং ভিসাটি নবায়নযোগ্য। বাংলাদেশের যে কোনও ব্যাংকে আবেদনকারীর শুধু ১৮৯০ পাউন্ড বা সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা ব্যাংকে জমা থাকতে হবে।বয়স হতে হয় ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ব্রিটেনের সব নাগরিক ফ্রি মেডিকেল কেয়ারের আওতায় থাকেন। অষ্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ড থেকে ইংল্যান্ডে লিভিং কস্ট অনেক কম।
গন্তব্য হতে পারে কানাডা
পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধিশালী দেশগুলোর একটি কানাডা। কানাডায় যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের এখনই সময়। নতুন ইমিগ্রেন্টদের জন্য এরই মধ্যে কানাডার ফেডারেল এবং প্রভিনশনাল সরকার তাদের কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী কাজ শুরু করেছে। ৬০টির ওপর কানাডায় ইমিগ্রেশন করার পদ্ধতি রয়েছে।
প্রফেশনালদের জন্য অনেকগুলো ক্যাটাগরি রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো ফেডারেল ও কুইবেক স্কিল্ড প্রোগ্রাম, প্রভিন্সশনাল নমিনি প্রোগ্রাম, কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাস, ফেডারেল সেলফ এমপ্লয়েড প্রোগ্রাম। এছাড়া রয়েছে ফ্যামিলি ক্লাস স্পন্সরশিপ প্রোগ্রামস। কানাডায় সর্বাধিক সংখ্যক আবেদনকারীএফএসডব্লিউ অ্যান্ড এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রামে আবেদন করছে।
কাজ করার জন্য অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় বৈধভাবে কাজ করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত প্রোগ্রাম সাব-ক্লাস-৪৮২, এই ভিসার ক্ষেত্রে ভিসাপ্রার্থীকে অবশ্যই টিএসএস ভিসার পেশা তালিকার জন্য একটি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মনোনীত হতে হবে। এই ভিসার জন্য আইইএলটিএসে প্রতিটি ব্যান্ডে ৫ বা সমমানের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে।
সাব-ক্লাস-৪৮২ পোগ্রাম-মূলত ডিগ্রি পাসধারী দক্ষ ও অভিজ্ঞ বাংলাদেশিদের জন্য এটা বিরাট সুযোগ। বাংলাদেশিরা যদি প্রথম থেকেই দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে ফাইল প্রসেস করে তবে স্বল্প সময়ে এই ভিসা পাওয়া নিশ্চিত। যেহেতু অস্ট্রেলিয়া ডিমান্ড লিস্টে ৪৩২টি পেশা রয়েছে, সুতরাং অনেকেই বিভিন্ন সাব-ক্লাসে আবেদন করে পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগটি নিতে পারেন।
যেমন: এমপ্লয়ার স্পন্সরশিপ, এমপ্লয়ার নমিনেশন স্কিম (১৮৬),স্কিল্ড ইনডিপেনডেন্ট ভিসা ১৮৯, ১৯০, স্কিল্ড রিজিওনাল ভিসা (সাব-ক্লাস ৪৮৯), রিজিওনাল ¯পন্সরড মাইগ্রেশন স্কিম (১৮৭)।
শান্তির দেশ নিউজিল্যান্ড
নির্দিষ্ট সময় পর পর স্কিলড মাইগ্রেশন ক্যাটাগরিতে ড্র অনুষ্ঠিত হয়। বছরে প্রায় কয়েক হাজার পরিবার এ প্রোগ্রামের আওতায় নিউজিল্যান্ডের স্থায়ী নাগরিকত্ব (পিআর) পেয়ে থাকেন। এই ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশিরাও নিউজিল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নিতে পারেন।
স্কিলড মাইগ্রেশন ক্যাটাগরি সম্পর্কেও এই আবেদনের শিক্ষাগত ও অন্যান্য যোগ্যতা সম্পর্কে জানানো হয় নিউজিল্যান্ডের সরকারি ওয়েবসাইটে। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা গ্রহণ করতে পারেন।
নিউজিল্যান্ডে সম্ভাব্য পেশার মধ্যে রয়েছে জেনারেল প্রেকটিশনার, প্যাথলজিস্ট, সাইকোথেরাপিস্ট, সোনোগ্রাফারসহ আরও কিছু খাত। নিউজিল্যান্ড সরকারের ওয়েবসাইটে দেশটিতে চাহিদা থাকা বিভিন্ন পেশার কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া স্টুডেন্ট ভিসা নিয়েও পড়াশোনা করতে পারেন দেশটিতে।