আশ্বাস দিলেও সৌদি আরব যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের পাসপোর্ট জমা নেয়নি দূতাবাস। রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতিনিধিরা আজ সোমবার দিনভর অপেক্ষা করেও পাসপোর্ট জমা দিতে পারেননি। এদিকে এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি ও মহাসচিব মহাসচিব সমকালকে বলেছেন, যোগাযোগের ঘাটতিতে জমা নেয়নি। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে নেবে।
সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাকরি নিয়ে বিদেশে যাওয়া আট লাখ ৭৪ হাজার ৭৩৯ জন বাংলাদেশি কর্মীর পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ৬৫৩ জনের গন্তব্য ছিল সৌদি আরব।
গত ১২ অক্টোবর শাপলা গ্লোবাল সার্ভিস নামের প্রতিষ্ঠানের চিঠিতে বায়রাকে জানানো হয়, ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসে বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের ভিসার আবেদন আর সরাসরি গ্রহণ করা হবে না। দূতাবাস 'শাপলা সেন্টারকে' ওয়ান স্টপ ভিসা সার্ভিস সেন্টার হিসেবে নিয়োগ করেছে। এ নিয়োগকে বহুল প্রতীক্ষিত এবং সব পক্ষের জন্য লাভজনক আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞপ্তিতে।
তবে রিক্রুটিং এজেন্সি বলছে, এতে অভিবাসন ব্যয় বাড়বে। গত শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বায়রা জানায়, শাপলা সেন্টারে পাসপোর্ট জমা দেবে না। গত রোববার সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, কনস্যুলেট জেনারেলসহ দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বায়রা সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার, মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
বৈঠকের পর বায়রা জানান, সোমবার থেকে পাসপোর্ট জমা নেবে দূতাবাস। যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নম্বর থেকে ১ থেকে ৫০০; সেগুলোর দেওয়া পাসপোর্ট প্রতি রোববার জমা নেওয়া হয়। ৫০১ থেকে ১০০০ নম্বরের এজেন্সির পাসপোর্ট নেওয়া হয় প্রতি সোমবার। এই সূচি অনুযায়ী, সোমবার সকাল সাড়ে আটটায় গুলশানের সৌদি দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিতে যান এজেন্সি প্রতিনিধিরা।
বারাকাত ইন্টারন্যশনালের (লাইসেন্স নম্বর ৫৮৭) প্রতিনিধি তোফাজ্জল হোসেন সমকালকে জানিয়েছেন, ১১ জন কর্মীর ভিসার জন্য পাসপোর্ট নিয়ে গিয়েছিলেন। পুলিশ দূতাবাস পর্যন্ত যেতে দেয়নি। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। বায়রা নেতাদের জানালে, দূতাবাস পর্যন্ত যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু ফটক থেকে বলা হয়, পাসপোর্ট জমা নেওয়া হবে না। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। ওই সময় কনস্যুলেট জেনারেল নিজেই বেরিয়ে এসে বলেন, এজেন্সি প্রতিনিধিদের চলে যেতে বলেন।
প্রতিনিধিরা জানান, সোমবার ৩০০ থেকে ৩৫০ এজেন্সি পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মীর ভিসার জন্য পাসপোর্ট নিয়ে গিয়েছিল। শাপলা সেন্টারে পাসপোর্ট প্রতি তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। বছরে পাঁচ লাখ কর্মী সৌদি গেলে প্রতিষ্ঠানটি ১৫০ থেকে ২০০ কোটি পাবে এ বাবদ। এজেন্সি মালিকদের শঙ্কা কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফি ৫০০ থেকে বেড়ে যেভাবে ১০ হাজার টাকা হয়েছে, ভিসা সেন্টারের খরচও একইভাবে বাড়তে পারে। এতে ক্ষতি হবে কর্মীদের। তাঁদের পকেট থেকে যাবে বর্ধিত অভিবাসন ব্যয়।
বায়রার বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উদ্ভূত সমস্যা রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, মঙ্গলবার থেকে নির্ধারিত শিডিউলে পাসপোর্ট জমা নেওয়া হবে।
বায়রা সভাপতি সমকালকে বলেছেন, বিষয়টি সুরাহার অপেক্ষা করছেন। কোনো অবস্থাতেই তৃতীয় পক্ষের কাছে পাসপোর্ট জমা দেওয়া হবে না। জনশক্তি ব্যবসায়ীদেরই একটি অংশ নিজেরা লাভবান হতে দূতাবাসকে ভুল বুঝিয়ে সার্ভিস সেন্টার খুলে একচেটিয়া ব্যবসার করার পায়তারা করছে।