সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফের পাতা ছিঁড়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কি নিয়ে কুরিচিপূর্ন ও অশ্লীল মন্তব্য করেছে সেফাতউল্লাহ নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। অনেকেই তাঁর কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন।
নিজের ফেসবুক থেকে লাইভে এসে তিনি মহানবীকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করেন। একপর্যায়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফের পাতা ছিঁড়ে তা টয়লেটে ফেলে আসেন।
এ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সাধারন মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বেশিরভাগ মানুষ তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেন যেন ভবিষ্যতে কেউ কোন ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করতে না পারে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় বেশ আলোচনায় সেফাতউল্লাহ নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি। ফেসবুকে নানান ধরণের অশ্লীল, অসঙ্গতিপূর্ণ ও বিদ্বেষমূলক ভিডিওবার্তা ছড়িয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৯০ সাল থেকে অস্ট্রিয়ার রাজধানীর ভিয়েনায় অবস্থান করছেন সেফাতউল্লাহ ওরফে সেফুদা। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। লেখা-পড়া করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সেফাত উল্লাহর স্ত্রী জানান, ২৮ বছর আগে দেশ ছাড়েন তিনি। তারপর থেকেই পরিবার থেকে তিনি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। পরিবারের দাবি, বর্তমানে তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত। আর তার এমন কর্মকাণ্ডে পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজন বিব্রত।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে সেফাত উল্লাহ'র স্ত্রী বলেন, 'সবাই, আত্মীয়-স্বজনের কাছে আমাদের মুখ নাই। কেমন লাগতেছে আমরা জানি। এখন এগুলো কি বন্ধ করার কোনো পথ নাই? ইউটিউব কি এগুলো কোনো প্রতিকার করতে পারে না? আর উনি তো সিজোফ্রেনিয়া রোগী।'
তার বিষয়ে ভিয়েনা বাঙালি কমিউনিটির পরিচিত মুখ ও প্রবাসী সাংবাদিক ফিরোজ আহমেদ জানান, ‘ভিয়েনা বাংলাদেশ কমিউনিটির এক পারিবারিক ঝগড়ার কারণে কোর্টের রায়ে দীর্ঘদিন ভিয়েনায় জেল খাটেন সেফাতউল্লাহ। মুক্ত হবার পর অস্ট্রিয়ার আইন অনুযায়ী তার লিগ্যাল হবার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে। স্ত্রী সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন সেফাতউল্লাহ।’
আহমেদ ফিরোজ আরও জানান, ‘সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তার প্রতি মানুষের আগ্রহ তাকে আরো বেশি উন্মাদ করে তুলেছে। বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন সেফাতউল্লাহ।’
তিনি আরো জানান, ‘সেফাতউল্লাহকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অস্ট্রিয়া সরকার। ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া এগিয়ে আসার সময়েই তিনি বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল ভিডিওবার্তা দিচ্ছেন, যাতে বাংলাদেশি জনগণ তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। আর এই কারণ দেখিয়ে তিনি অস্ট্রিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার পথ সুগম করতে চান।’
এ বিষয়ে আহমেদ ফিরোজ বলেন, ‘ভিয়েনায় বাংলাদেশ দূতাবাস সেফাতউল্লার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অবগত আছেন। ভিয়েনায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। অচিরেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে সেফাতউল্লাহ আসলে মানসিক ভারসাম্যহীন কিনা সে বিষয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। ভিয়েনাতে তিনি চাকরি করছেন। তিনি যদি আসলেই সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত হন তাহলে কীভাবে চাকরি সামলাচ্ছেন? তিনি একাই একটি বড় বাসায় থাকেন। পরিপাটি হয়ে অফিসে যান। অনেকেই দাবি করছেন, অতিরিক্ত মদ পানের জন্যই এমন অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন তিনি। তার প্রচুর মদ পানের প্রমাণ মেলে ফেসবুক লাইভে। প্রায়ই লাইভে তাকে মদ পান করতে দেখা যায়।