অতিরিক্ত খাবার মানেই অতিরিক্ত ক্যালরি আর অতিরিক্ত ক্যালরি মানেই অতিরিক্ত ওজন। বেশি ক্ষুধা পেলে বেশি খেয়ে ফেলাটা স্বাভাবিক। এতে যেমন বেড়ে যায় ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা, তেমনি বেড়ে যায় হজম সংক্রান্ত নানা অসুখ-বিসুখ হবার সম্ভাবনা। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রথমেই যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হলো, খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে লোভ সংবরণ করা। তবে খাবার খাওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করার সময় এ কথাটি অবশ্যই মনে রাখতে হবে, দেহের প্রয়োজনীয় অংশটি যেন পূর্ণ হয়।
দেহ সুস্থ রেখে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের জন্য রইলো কিছু পদ্ধতি-
খাবার অল্প পরিমাণে কিন্তু বারবার গ্রহণ-
আমাদের দেহে খাবারের প্রয়োজন হয় শক্তি অর্জন, ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু ও পেশির ক্ষয় পূরণ এবং চলমান রাখার জন্য। এ কাজগুলো করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন। যদি একবারে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা হয় তাহলে সেগুলো হজম ও পরিশোষণের সময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে হজমের সমস্যাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু যদি অল্প পরিমাণে খাবার কিছুক্ষণ পর পর গ্রহণ করা হয় তাহলে দেহের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না। ফলে রক্তের গ্লুকোজ লেবেল, রুচি ঠিক থাকে এবং দেহে সঠিকভাবে শক্তি সঞ্চালিত হয়। ফলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কমে যায়। অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার খাবার খাওয়ার ফলে পেট ভরা থাকে। তাই অতিরিক্ত ক্ষুধাও পায় না।
সময়মতো খাবার গ্রহণ-
ছোট-বড় সব ধরনের খাবার মিলিয়ে দিনে মোট ছয় বার খাবার গ্রহণ করা উচিত। এর মধ্যে তিনবার মোটামুটি হালকা এবং তিনবার কিছুটা ভারী খাবার গ্রহণ করা উচিত। এই খাবারগুলো গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে। কারণ একবেলা না খেলে আরেক বেলায় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে শরীরে বাড়তি ক্যালরি প্রবেশ করে এবং ওজন বেড়ে যায়। কোনো বেলার খাবার যেন বাদ না পড়ে সেজন্য প্রথমে সকালে খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সকালের খাবারটি খাদ্যাভ্যাসের দিক থেকে সারাদিনের তুলনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সারারাত অভুক্ত থাকার ফলে পুষ্টির অভাব হয়, রক্তের গ্লুকোজ লেবেল নিচে নেমে যায়। এগুলোকে ঠিক রাখার জন্য সকালের খাবার গ্রহণ খুবই জরুরি। সকালের খাবার না খেলে মস্তিষ্কে গ্লুকোজের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়, শক্তির অপচয় হয়।
খাবারে অতিরিক্ত শাকসবজি ও আঁশযুক্ত শর্করা গ্রহণ-
শাকসবজি ও ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল, যা দেহকে সুস্থ ও নীরোগ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শাকসবজি ও ফলে ক্যালরি থাকে খুবই কম কিন্তু সে তুলনায় খাদ্যআঁশ থাকে প্রচুর। তাই এসব খাদ্য সহজেই পাকস্থলী পূর্ণ করে কোনো রকমের ক্যালরি ছাড়াই। তাই খাদ্যতালিকায় শাকসবজি ও ফল বেশি করে রাখুন। এসব খাবার ধীরে হজম হয় বলে দ্রুত ক্ষুধাও লাগবে না। মূল খাবারের মাঝে স্ন্যাক্স খান। এতে ক্ষুধাও মিটবে আবার অতিরিক্ত ক্যালরিও যোগ হবে না।
অতিরিক্ত সময় ধরে না ঘুমানো-
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা দৈনিক গড়ে ৫ ঘণ্টা ঘুমায় তারা ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো অভ্যাসের লোকদের চেয়ে বেশি সুস্থ ও কর্মঠ। তাছাড়া যারা ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমায় তাদের মধ্যে স্থূল ব্যক্তির সংখ্যা বেশি। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অতিরিক্ত সময় ধরে ঘুমালে ক্ষুধা বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই পরিমিত ঘুমানোর অভ্যাস করুন। এতে ক্ষুধা থাকবে নিয়ন্ত্রণে, ফলে খাবার চাহিদাও থাকবে কম এবং ওজনও বাড়বে কম।
খাবার গ্রহণের আগে পানি পান-
খাবার গ্রহণের আগে পানি পান করলে ক্ষুধা স্বাভাবিকভাবেই কমে আসে। খাবার গ্রহণের অন্তত ২০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি পান করুন। এতে কম খাবারেই আপনার পেট ভরে যাবে এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যাবে। শরীরে ক্যালরি কম প্রবেশের ফলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে যাবে।
অতিরিক্ত পানি পান-
অতিরিক্ত পানি গ্রহণ তৃষ্ণা দূর করে ও ক্ষুধা নিবারণ করে। তাই হালকা ক্ষুধা পেলেই পানি বা অন্য কোনো পানীয় গ্রহণ করুন। সেটা হতে পারে শরবত, ডাবের পানি বা হারবাল চা। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষে দৈনিক গড়ে ২ লিটার পানি পান করা উচিত। ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে একটু অতিরিক্ত পানি পান করুন। এতে আপনার শরীরও থাকবে রোগবালাই মুক্ত।