চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আক্রান্ত শিশু ও নবজাতকদের রাখার আলাদা ব্যবস্থা নেই। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই শারীরিক ত্রুটিপূর্ণ শিশুদের নবজাতক ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নবজাতক ওয়ার্ডে করোনা পজিটিভ নবজাতকদের চিকিৎসা দেওয়ায় চিকিৎসাধীন অন্য নবজাতকরাও সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়েছে। এ পর্যন্ত দশ বছর বয়স পর্যন্ত ২০৫৭১ জন শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
গর্ভবতী মায়ের করোনা শনাক্ত হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নবজাতকেরও করোনা হচ্ছে। আবার কম বয়সী শিশুরাও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যালের নবজাতক ওয়ার্ডে করোনা পজিটিভ কয়েকজন নবজাতক ভর্তি রয়েছে। ফলে অন্য নবজাতকদের চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা জানান, ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত প্রচুর শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত শিশু আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
চিকিৎসকরা আরও জানান, চট্টগ্রামে কয়েকজন করোনা আক্রান্ত প্রসূতি সন্তান জন্মদানের সময় মারা গেছেন। মা করোনায় আক্রান্ত থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গর্ভের শিশুও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যালের গাইনি ওয়ার্ডে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রসূতিদের ডেলিভারির জন্য আনা হচ্ছে। শহর ছাড়াও এখন গ্রাম পর্যায়ে করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে করোনার উপসর্গ থাকলেও অনেক প্রসূতির করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। পরে হাসপাতালে ভর্তি হলে করোনার উপসর্গ থাকলে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এতে কারো কারো করোনা পজিটিভ হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. শর্মিলা বড়ুয়া বলেন, ‘হাসপাতালে করোনা পজিটিভ প্রচুর প্রসূতি ভর্তি হচ্ছে। ডেলিভারির পর কোনো নবজাতকের শারীরিক সমস্যা থাকলে নবজাতক ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’
চট্টগ্রাম মেডিক্যালের গাইনি ওয়ার্ডে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে যারা একটু দুর্বল এমন প্রসূতিরা ডেলিভারি করতে আসেন। নবজাতক ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, এখনো করোনা পজিটিভ তিন নবজাতক ভর্তি রয়েছে। ইতিপূর্বে কয়েকজন সুস্থ হয়ে চলে গেছে। নবজাতক ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্তদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা না থাকায় এক সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে চিকিৎসাধীন অন্য নবজাতকরা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
নবজাতক ওয়ার্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ বলেন, করোনা পজিটিভ নবজাতকদের নিয়ে আমরা সমস্যায় পড়েছি। করোনা পজিটিভ মায়ের কারণে নবজাতকের পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। শিশুদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় এক সঙ্গে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড জরুরি হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ূন কবির বলেন, করোনা পজিটিভ নবজাতকদের আলাদা চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টা আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। আমি শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের নিয়ে আলোচনা করেছি। দ্রুত আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে সবচেয়ে বেশি শিশু চিকিৎসা নিয়েছে আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাহিম হাসান রেজা ইত্তেফাককে বলেন, এই পর্যন্ত ৯০ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। আমাদের হাসপাতালে করোনা পজিটিভ শিশুদের আলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পজিটিভ শিশুদের কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়ায় অন্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে না। পার্কভিউ হাসপাতালের এমডি ডা. রেজাউল করিম বলেন, গত দুই দিন আগে করোনায় আক্রান্ত ১২ বছর বয়সী এক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল হাসপাতালের এমডি ডা. মো. ইউসুফ বলেন, আমাদের হাসপাতালে করোনা পজিটিভ এ ধরনের আট জন প্রসূতির সিজারিয়ান হয়েছে। তবে নবজাতকদের করোনা পজিটিভ হয়নি।