Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সঙ্কটে সৌদি আর আমেরিকায় মাটির নিচে ৬৩ কোটি ব্যারেল তেলের মজুত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:০৪ PM আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:০৪ PM

bdmorning Image Preview


সৌদি আরবের দুটি তেল স্থাপনার ওপর ড্রোন হামলার পরই যখন তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল তখন আমেরিকান কর্মকর্তারা বলছিলেন, তেল সরবরাহে সংকট দেখা দিলে প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল 'জরুরি মজুতে' থাকা তেল কাজে লাগানো হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইট করেছিলেন, বাজারে তেলে সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সেই 'কৌশলগত মজুতের' তেল ব্যবহার করতে পারেন তারা।

এই মজুত আছে টেক্সাস এবং লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে মাটির নিচে লবণের স্তরের ভেতর তৈরি গুহায়। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোন জরুরি প্রয়োজন সামাল দেবার জন্য জমা করে রাখা আছে ৬৪ কোটি ব্যারেল তেল। আসলে সেই তেলের মজুত গড়ে তোলার ভাবনাচিন্তা করা হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময়কার তেল সংকটের পটভূমিতে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি এজেন্সির সব সদস্য দেশকেই অন্তত ৯০ দিন ব্যবহারের মত পেট্রোলিয়ামের আমদানি ধরে রাখতে হয়। তবে জরুরি প্রয়োজন মোকাবিলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভান্ডার গড়ে তুলেছে - তার মত বড় মজুত পৃথিবীর কোথাও নেই।

যুক্তরাষ্ট্রে মোট চারটি জায়গায় এই জরুরি তেলের মজুত রয়েছে। টেক্সাসের ফ্রিপোর্ট এবং উইনির কাছে, আর লুইজিয়ানায় লেক চার্লস আর ব্যাটন রুজে। মাটির তিন হাজার তিনশ' ফিট নিচে মানবসৃষ্ট অনেকগুলো গুহার মধ্যে এই তেল জমা করে রাখা আছে । ভূগর্ভস্থ লবণের স্তরের একটা অংশের লবণ গলিয়ে ফেলে তৈরি করা হয় এই গুহা - যাতে প্রাকৃতিক গ্যাস বা তেল মজুত রাখা যায়।

মাটির ওপরে ট্যাংকে তেল জমা রাখার চাইতে এই পদ্ধতি অনেক সস্তা, এবং নিরাপদ। ভূগর্ভস্থ লবণের রাসায়নিক গঠন এবং ভূতাত্বিক চাপ - দুই কারণেই এখান থেকে তেল বেরিয়ে যেতে পারে না। ফ্রিপোর্টের কাছে ব্রায়ান মাউন্ডে যে গুহাটি আছে তাদের ২৫৪ মিলিয়ন বা ২৫ কোটি ৪০ লাখ ব্যারেল তেল জমা রাখা যায়। উনিশশ' সত্তরের দশকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে সারা পৃথিবীতেই তেলের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছিল।

১৯৭৩এর আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নেয়ায় ওপেকের সদস্য ইরাক,কুয়েত, কাতার ও সৌদি আরব আমেরিকায় তেল রপ্তানি করতে অস্বীকার করে। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ মাত্র তিন সপ্তাহেই থেমে যায় কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল ১৯৭৪এর মার্চ পর্যন্ত। ফলে তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল প্রায় চারগুণ - ব্যারেল প্রতি ৩ ডলার থেকে ১২ ডলারের কাছাকাছি। পেট্রোলপাম্পগুলোয় পড়ে গিয়েছিল গাড়ির দীর্ঘ লাইন।

এর পরই ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলার চিন্তা থেকে মার্কিন কংগ্রেসে একটি আইন পাস করে কৌশলগত পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ গড়ে তোলা হয় । যুক্তরাষ্ট্রের এই মজুতের যে তথ্য যে ওয়েবসাইটে আছে তাতে জানা যাচ্ছে - ১৩ই সেপ্টেম্বর সর্ব মোট তেল মজুত ছিল ৬৪ কোটি ৪৮ লাখ ব্যারেল। মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের এক হিসেবমতে আমেরিকানরা ২০১৮ সালে গড়ে প্রতিদিন ২ কোটি ৫ লাখ ব্যারেল তেল ব্যবহার করেছে।

সে হিসেবে এই জরুরি মজুতে আমেরিকার ৩১ দিন চলবে। ১৯৭৫ সালের এক আইন অনুযায়ী এই জরুরি মজুতের তেল ব্যবহারের নির্দেশ শুধুমাত্র প্রেসিডেন্টই দিতে পারেন। অবশ্য এখান থেকে তেল বের করা সহজ নয়। প্রেসিডেন্টের আদেশ পেলেও এখান থেকে তেল বের করে তা বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে প্রায় দু সপ্তাহ লাগবে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

Bootstrap Image Preview