Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ মঙ্গলবার, জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

পর্দার অন্তরালে থাকা নারীরা কি পুরুষদের দেখতে পারবে?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২২, ১০:৫৫ AM
আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২২, ১০:৫৫ AM

bdmorning Image Preview


ইসলামে পর্দার বিধান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পর্দার অন্তরালে থাকা নারীরা কি পুরুষদের দেখতে পারবে? দৃষ্টি সংযত রাখার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের বিধান কি এক, নাকি কোনো পার্থক্য আছে? এ প্রশ্নের সহজ জবাব হলো, অন্তরের পবিত্রতার জন্য নারী-পুরুষ উভয়ই নিজের দৃষ্টি সংযত রাখবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য উত্তম।

তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩০-৩১)

নারীরা পুরুষদের দেখতে পারবে?

ইসলামের দৃষ্টিতে গাইরে মাহরাম তথা এমন পুরুষ যার সঙ্গে নারীর বিয়ে বৈধ, তার প্রতি নারীর দৃষ্টিপাত কয়েক প্রকার হতে পারে এবং তার বিধানও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন—

১. অপ্রয়োজনীয় দৃষ্টি : গাইরে মাহরাম পুরুষের প্রতি তাকানোর প্রয়োজন না থাকলে নারী তার দৃষ্টি অবনত রাখবে। এটাই তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির অনুকূল। মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩০-৩১)

উম্মে সালামা (রা.) বলেন, একদা আমি নবী (সা.)-এর কাছে ছিলাম এবং তাঁর কাছে মায়মুনা (রা.)-ও ছিলেন। এ সময় ইবনে উম্মু মাকতুম (রা.) এলেন। ঘটনাটি পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পরের। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা তার থেকে আড়ালে চলে যাও। আমরা বললাম, হে আল্লাহ রাসুল! সে কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদের দেখতে ও চিনতে পারছে না। নবী (সা.) বললেন, যদিও সে অন্ধ কিন্তু তোমরা উভয়ে কি তাকে দেখছ না? (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪১১২)

২. প্রয়োজনীয় দৃষ্টি : ইসলাম অনুমোদিত প্রয়োজনে নারীরা গাইরে মাহরাম পুরুষের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে পারবে। শর্ত হলো ফিতনার আশঙ্কা না থাকা। এই ক্ষেত্রে দৃষ্টিপাতের সীমা হলো সাধারণভাবে পুরুষের দেহের যতটুকু প্রকাশ পায় ততটুকু। যেমন—চেহারা, মাথা, হাত ও পায়ের তালু ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে ফকিহদের দলিল হলো ফাতিমা বিনতে কায়সের হাদিস। মহানবী (সা.) তাঁকে বলেন, তুমি বরং ইবনে উম্মে মাকতুমের বাড়িতে গিয়ে ইদ্দত পালন করতে থাকো। কেননা সে একজন অন্ধ মানুষ। সেখানে প্রয়োজনবোধে তুমি তোমার পরিধানের (কম প্রয়োজনীয়) পোশাক খুলে রাখতে পারবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৫৮৯)

ফকিহরা বলেন, কারো বাড়িতে অবস্থান করতে হলে কমবেশি তাঁর দিকে তাকানোর প্রয়োজন হয়। যা দ্বারা প্রমাণিত হয়, প্রয়োজনের সময় যতটুকু স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায়, নারীরা পুরুষের ততটুকু দেখতে পারবে।

৩. মাহরামের প্রতি দৃষ্টি : নারীরা তাদের মাহরাম তথা এমন পুরুষের প্রতি তাকাতে পারবে যাদের বিয়ে করা হারাম। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা হলো পুরুষের নাভির ওপরাংশ এবং হাঁটুর নিম্নাংশ। কেননা নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশটি সতর আর মাহরাম ও গাইরে মাহরাম কারো সামনে সতর প্রকাশ করা বৈধ নয়। আমর বিন শোয়াইব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, পুরুষের নাভির নিচ থেকে তার উভয় হাঁটু পর্যন্ত হলো সতর। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৭৫৬)

তবে বর্তমানে মাহরাম পুরুষ যদি ফাসিক হয় এবং তার ভেতর আল্লাহভীতি না থাকে, তাহলে তার থেকেও নারীদের দূরে থাকার পরামর্শ দেন প্রাজ্ঞ আলেমরা। কেননা বর্তমানে মাহরাম পুরুষ দ্বারা নারীর আব্রু বিনষ্ট হওয়ার ঘটনা বিরল নয়।

৪. স্বামীর প্রতি দৃষ্টি : একজন নারী তাঁর স্বামীর সমস্ত শরীরই দেখতে পারে। এমনকি তার লজ্জাস্থানও দেখতে পারবে। তবে ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়কে পরস্পরের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাতে নিরুৎসাহ করে। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি কখনো নবীজি (সা.)-এর লজ্জাস্থানের দিকে তাকাইনি। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৩১২৩)

৫. যে দৃষ্টিতে ভয় নেই : কখনো নারীর দৃষ্টি গাইরে মাহরামের দিকে হলেও তাতে ভয় থাকে না। যেমন নাবালক ছেলেশিশুর দিকে তাকানো। এমন পরিস্থিতিতে নারীর দৃষ্টিপাত হারাম বা নিষিদ্ধ হবে না। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন হাবশিরা (বালক) তাদের বর্শা নিয়ে খেলা করছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে নিয়ে পর্দা করে তার পেছনে দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং আমি সেই খেলা দেখছিলাম। যতক্ষণ আমার ভালো লাগছিল ততক্ষণ আমি দেখছিলাম। এরপর আমি স্বেচ্ছায় সে স্থান ত্যাগ করলাম। সুতরাং তোমরা অনুমান করতে পারো কোন বয়সের মেয়েরা আমোদ-প্রমোদ পছন্দ করে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৯০)

৬. যে দৃষ্টিতে ভয় থাকে : যদি পরপুরুষের প্রতি নারীর দৃষ্টিতে জৈবিক কামনা থাকে অথবা কারো প্রতি তাকালে কামনা জেগে ওঠার ভয় থাকে, তবে এমন দৃষ্টি শরিয়তে দৃষ্টি হারাম। এমন পরিস্থিতিতে দৃষ্টি অবনত রাখা আবশ্যক। এ ছাড়া স্বামী ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের সতর দেখাও নারীর জন্য হারাম। চাই জৈবিক চাহিদা থাকুক বা না থাকুক। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘নারী যদি অপরিচিত পুরুষের দিকে জৈবিক চাহিদা নিয়ে তাকায় তবে তা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। পুরুষ যদি নারীর সতর এবং নারী যদি পুরুষের সতর দেখে তবে তাও সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। ’ (আল-মিনহাজ : শরহু সহিহ মুসলিম : ৬/১৮৪)

আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

Bootstrap Image Preview