Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পরীমনিকে ধর্ষণের ঘটনার বিষয়ে জানতেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২১, ১২:৫৩ AM আপডেট: ১৪ জুন ২০২১, ১২:৫৩ AM

bdmorning Image Preview


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মা সম্বোধন করে ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢালিউডের আলোচিত নায়িকা পরীমনি।

স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রীকাছে বিচার চাইলেন এ চিত্রনায়িকা। যেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাকে ধর্ষণ ও এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি নির্যাতিত হয়েছেন।

তবে স্ট্যাটাসের কোথায় অভিযুক্তের নাম লেখেননি তিনি।  

রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে এসব অভিযোগ করেছেন পরীমনি, যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় চলছে।

পরীমনি জানিয়েছেন, গত চার দিন ধরে থানা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র বন্ধুদের কাউকে পাশে পাননি তিনি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতেও অভিযোগ নিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রতিকার পাননি। যাদেরকে পেয়েছেন সবাই বিস্তারিত ঘটনা জেনে ‘দেখছি’ বলে চুপ হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।

পরীমনির এমন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জায়েদ খানও।

এক গণমাধ্যমকে তিনি বলেন,  ‘পরীমণি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিচার চান তিনি।’ তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় পরীমনি কতটা ভুক্তোভোগী হয়েছেন বা ঘটনাটি কি সে বিষয়ে কিছু জানাননি জায়েদ খান।

তবে এটাই স্পষ্ট যে, জায়েদ খানসহ শিল্পী সমিতির কেউ কেউ ঘটনার প্রসঙ্গে অবগত আছেন।

এদিকে আজ রোববার রাতে সাংবাদিকদের কাছে নির্যাতনকারীদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেছেন পরীমনি। তিনি দুজনের নাম উল্লেখসহ ঘটনার কিছু বিবরণ দেন।

পরীমনি বলেন, ‘তাদের একজন রাজধানীর উত্তরা ক্লাব লিমিটেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাছির ইউ. মাহমুদ এবং অন্যজন তার কস্টিউম ডিজাইনার জেমীর স্কুল ফ্রেন্ড অমি নামের এক ব্যবসায়ী।’

পরীমনি বলেন, ‘গত বুধবার রাত ১২টায় আমাকে বিরুলিয়ায় নাছির ইউ. মাহমুদের কাছে নিয়ে যায় অমি। সেসময় নাছির ইউ. মাহমুদ নিজেকে ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে নাছির ইউ. মাহমুদ আমাকে মদ খেতে অফার করে। আমি রাজি না হলে আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোরর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আমাকে চড় থাপ্পড় মারে। তারপর এক নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টা করেন। অমিও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’

এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে বনানী থানায় গিয়েছিলেন জানিয়ে পরীমনি বলেন, ‘থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার অভিযোগ শুনলেও, লিখিত কোনো কাগজপত্র নেয়নি। থানা থেকে তেমন কোনো সাড়া না পেয়ে চলে আসি।’

আমি শিল্পী সমিতির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান তাকে আশ্বস্ত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন।

এর আগে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মুঠোফোনে পরীমনি কাঁদতে কাঁদতে জানান,  তার স্ট্যাটাসটি সত্য। অনেক ভেবেচিন্তেই এই স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার সঙ্গে অনেক খারাপ কিছু ঘটেছে যে স্ট্যাটাস দিতে বাধ্য হয়েছেন।

পরীমনি বলেন, ‘আপনাদের জানানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। গত কদিনে আমি শিল্পী সমিতি, থানা সব জায়গায় গিয়েছি। শেষ পর্যন্ত ফেসবুকে পোস্ট দিতে বাধ্য হয়েছি। আপনাদের মুখোমুখি হয়ে সব বলতে চাই আমি।’

কে বা কারা তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেছে? সেই প্রশ্নের জবাবে পরীমনি বলেন, ‘এটা আমি অবশ্যই বলব। তবে ফোনে বলা যাবে না। আপনারা সাংবাদিকরা আসেন। আমি সবার সামনে, ক্যামেরার সামনে বলতে চাই। আমি সবাইকে জানাতে চাই। আমার ভরসা নষ্ট হয়ে গেছে। আমি কাউকে ভরসা করতে পারি না ভাই। আজ রাতে আমার যদি কিছু হয়ে যায় তার দায়িত্ব কে নেবে? আমি এজন্য ফোনে কিছু বলব না।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্ট্যাটাস দেন পরীমনি, যা পোস্টের কয়েকমিনিটের মধ্যেই ভাইরাল হয় যায়।

পোস্টের পর ১ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে প্রায় ৫০ হাজার লাইক জমা পড়েছে তাতে। মন্তব্য জমা পড়েছে ১৪ হাজারের বেশি। শেয়ার হয়েছে প্রায় দেড় হাজার।

সিনেপ্রেমীদের প্রশ্ন, হঠাৎ কেন এমন স্ট্যাটাস দিলেন পরীমনি? কে বা কারা নির্যাতন করেছেন এই চিত্রনায়িকাকে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব কেন?

ওই স্ট্যাটাসে পরীমনি লেখেন, ‘বরাবর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমণি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

‘এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধু বেনজীর আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না মা। যাদের পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনার বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়!’

পরীমণি আরও লেখেন, ‘আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পড়ে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারোর কি করার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’

‘আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহূর্ত মাকে খুব দরকার এখন, মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা আমি বাচঁতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।’

Bootstrap Image Preview