Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘শ্রীলঙ্কার সরকার চীনকে সব বেচে দিয়েছে’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ০১:১৮ AM
আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ০১:১৮ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


রাজাপাকসে সরকার চীনের কাছে সব বিক্রি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে শ্রীলঙ্কার আন্দোলনরত ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, দেশে কিছুই নেই, বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ করে সবকিছু কেনা হচ্ছিল।

ব্রিটেনের কাছ থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে পৌঁছানোয় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার। ফল বিক্রেতা ফারুক বলেন, ‘তিন থেকে চার মাস আগেও আপেলের কেজি ছিল ৫৭১ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১১৪২ টাকায়। আগে নাশপাতির কেজি ছিল ৮০০ টাকা, এখন তা এক হাজার ৭১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ মানুষের হাতে টাকা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার চীনের কাছে সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছে। এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। সবকিছু বিক্রি করে দেয়ায় সরকারের কাছে কোনো টাকা নেই। অন্য দেশ থেকে ঋণ নিয়ে সবকিছু কিনছে।’

এমন অভিযোগ করেছেন আরও অনেক ব্যবসায়ী। তারা বলছেন, প্রতিদিনই দাম বাড়ছে, কিন্তু মানুষের হাতে নগদ টাকা নেই।

খাবার বিক্রেতা রাজা বলেন, ‘কোনো ব্যবসা নেই। গোটাবায়া আমাদের জন্য কিছুই করেননি। তাকে সরে যেতে হবে।’

এমন সংকটের মুখে শ্রীলঙ্কার প্রধানবিরোধী দল সমগী জনা বালাওয়েগয়ার (এসজেবি) নেতা সজিথ প্রেমাদাসা নির্বাহী রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন।

পার্লামেন্টে মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে প্রতিটি নেতা নির্বাহী প্রেসিডেন্সি বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। কিন্তু কেউ তা করেনি। বরং এটিকে তারা শক্তিশালী করেছেন।’

শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় শ্রীলঙ্কায় জারি করা ৩৬ ঘণ্টার দীর্ঘ কারফিউ সোমবার সকাল ৬টায় প্রত্যাহার করা হলেও, দেশটিতে এখনও জরুরি অবস্থা বহাল আছে।

করোনা মহামারি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে দুষছেন অনেকে। কারণ প্রতিবেশী ভারত এবং বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি দারুণ দক্ষতায় মোকাবিলা করেছে।

মহামারি শুরুর পর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির অন্যতম উৎস রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যায়। আরেক গুরুত্বপূর্ণ খাত পর্যটনশিল্প ভেঙে পড়ে। এই দুই খাত থেকে বিপুল ডলার আয় করে সরকার।

বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে ২০২০ সালের মার্চে আমদানিতে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয় রাজাপাকসে সরকার। এরপরও বিপদ এড়ানো যায়নি। গত মাসে খাদ্যের দাম পাঁচ ধাপে ২৫ শতাংশ বেড়েছে; সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি ১৭.৫ শতাংশ।

থার্মাল জেনারেটরের তেলের ঘাটতিতে এলাকাভিত্তিক সংকোচনমূলক বিদ্যুৎ সরবরাহের কৌশল নিয়েছে সরকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাকে আরও বেশি সংকটে ফেলেছে। সম্প্রতি দেশটিতে জ্বালানির দাম কয়েক দফায় লিটারে বেড়েছে ২০ শতাংশ।

শ্রীলঙ্কা চলতি মাসের শুরুতে ঘোষণা দেয়, তারা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বেলআউট চাইবে। এ ব্যাপারে ওয়াশিংটনে আলোচনা হতে পারে এপ্রিলে।

সরকারে ভাঙন

দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষভের মুখে রোববার রাজাপাকসে সরকারের ২৬ মন্ত্রী একযোগে পদত্যাগ করেন। পরদিন সোমবার নতুন চার জনকে মন্ত্রীপদে নিয়োগ দিলেও, একদিনের ব্যবধানে মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন একজন। এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিলে, বিরোধীতা তা প্রত্যাখ্যান করে প্রেসিডেন্টের অপসারণ চায়।

পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত

প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকারের সম্পর্ক উষ্ণ। উদ্ভুত পরিস্থিতে শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুৎ সংকট কমাতে শনিবার বাকিতে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করছে দিল্লি। গত ৫০ দিনে দেশটিতে প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি সরবরাহ করেছে দিল্লি।

Bootstrap Image Preview