Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘আমি শারীরিকভাবে মিলিত হয়েছি, আমাকে অর্থ পরিশোধ করেনি’

বিবিসির প্রতিবেদন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২২, ১০:৪০ AM
আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২২, ১০:৪০ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


আমি যা করছি তার জন্য আমি লজ্জিত। কিন্তু আমি কী করতে পারি? এভাবেই বলছিলেন তেহরানের ডিভোর্সি নারী নেদা (ছদ্মনাম)। 

দিনের বেলা নেদা একটি হেয়ারড্রেসারে কাজ করেন। কিন্তু রাতে তিনি পতিতা হিসেবে কাজ করেন। তিনি জানান, শুধু খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য শরীর বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। 

নেদা বলেন, আমি এমন একটি দেশে বাস করি যেখানে নারীদের সম্মান করা হয় না। অর্থনীতি ধসে যাচ্ছে। সবকিছুর মূল্য প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। 

তিনি বলেন, আমি সিঙ্গেল মাদার। আমাকে আমার ছেলের যত্ন নিতে হবে। পতিতাবৃত্তিতে ভালো অর্থ পাওয়া যায়। এখন আমি শহরের উপকণ্ঠে ছোট্ট একটি বাড়ি কেনার পরিকল্পনাও করছি। এটা আমার জীবনের করুন বাস্তবতা। আক্ষরিক অর্থেই আমি আমার আত্মা বিক্রি করছি। 

২০১২ সালে পতিতাবৃত্তি ঠেকাতে ইরান সরকার জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করে। তবে বেসরকারি, বিশেষ করে এনজিওর প্রতিবেদন এবং গবেষকদের তথ্যমতে,  পতিতাবৃত্তিতে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যদিও ইরানের রক্ষণশীল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে যৌন কর্মী আছে এই  বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে অস্বীকার করে আসছে। শুধু তাই নয়, উল্টো দেশটি পতিতাবৃত্তিকে যুবকদের কলুষিত করার পশ্চিমাদের একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখে বা দুশ্চরিত্রের পুরুষের খারাপ উদ্দেশ্যে পতিত হয় বলে নারীদের দোষারোপ করে। 

বেসরকারি তথ্য এও ইঙ্গিত করে যে, ইরানে তরুণ যৌন কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন এনজিওর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ১২ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সী মেয়েরা পতিতাবৃত্তিতে জড়ায়।

ইরানে মাদকাসক্ত নারীদের নিয়ে কাজ করা আফতাব সোসাইটি নামে একটি এনজিও জানায়, ২০১৯ সালে রাজধানী তেহরানে অন্তত ১০ হাজার নারী যৌন কর্মী ছিল। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ ছিল বিবাহিত।

আমির মাহমুদ হারিচি (ছদ্মনাম) নামে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণের এক অধ্যাপকের মতে, তেহরানে নারী যৌন কর্মীরা সংখ্যা উল্লেখিত সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুন বেশি হতে পারে। 

ইরানে পুরুষের চেয়ে নারীরা তুলনামূলকভাবে কাজের সুযোগ কম পান এবং লিঙ্গ সমতা না থাকায় অনেক নারী দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন। যা অনেককে অর্থের বিনিময়ে শরীর বিক্রি করতে বাধ্য করে। যদিও তা তাদের জন্য বিশাল ঝুঁকিও বয়ে আনে।  

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহনাজ (ছদ্মনাম) নামে এক শিক্ষার্থী এবং খণ্ডকালীন যৌনকর্মী বলেন, পুরুষরা জানে ইরানে পতিতাবৃত্তি অবৈধ এবং এই জন্য নারীদের শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। সুতরাং পুরুষরা এটার সুযোগ নেয়। 

তিনি বলেন, আমার সঙ্গে বেশ কয়েকবার এমন ঘটেছে যে, আমি কারও সঙ্গে শারীরিকভাবে মিলিত হয়েছি কিন্তু তিনি আমাকে অর্থ পরিশোধ করেননি। কারণ তারা জানেন আমি তো কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে পারবো না। 

মাহনাজ বলেন, তেহরানে বসবাস খুব ব্যয়বহুল যা অন্য কাজ করে পরিশোধ করা যায় না। 

Bootstrap Image Preview