আর সবার মত তিনিও ফল এবং পারফরমেন্সে অসন্তুষ্ট। কথা-বার্তা ও শরীরি অভিব্যক্তি বলেই দিল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মনে হতাশা বাসা বেঁধেছে। এবার পাকিস্তান সফর থেকে ফিরে তাই মনে অনেক প্রশ্নই উকি-ঝুঁকি দিচ্ছে বোর্ড প্রধানের। তার মনে হচ্ছে মাঠে পরিকল্পনা প্রয়োগে সমস্যা হচ্ছে।
সবচেয়ে যে প্রশ্ন বেশি করে মনে হচ্ছে, তাহলো আসলে দলের নীতি নির্ধারক কে? কোচ, ক্যাপ্টেন, ম্যানেজার, নির্বাচক- সরাসরি কাউকে ইঙ্গিত না করে তিনি বলে ওঠেন, ‘আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না, আসলে সিদ্ধান্ত গুলো নিচ্ছে কে? এ বিষয়টাও ধোঁয়াশা।’
পাকিস্তানে দুই ম্যাচের আগে ও পরে ক্রিকেটারদের সাথে বসেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই বসায় কোন কিছু বেড়িয়ে আসেনি। আসলে নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্তগুলো ঠিক কোথা থেকে আসতে?
পরিষ্কার নয় বিসিবি বিগ বসের। তাই মুখে এমন কথা, ‘তাও প্রথম ম্যাচের পর তামিম ও রিয়াদকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওরা বললো ব্যাটিং উইকেট। পরের ম্যাচেও তাই; কিন্তু আমাদের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ ছিল অত্যন্ত রক্ষণাত্মক। ব্যাটিং অর্ডারও অবাক করেছে। শেষ দুই তিন ওভারে কেন সৌম্য-রিয়াদ ব্যাটিং করবে। যা বলার ওদেরকে বলেছি। রিয়াদ তো কথা একটু কম বলে। আমি এটাও বলেছি, তুমি ক্যাপ্টেন, কথাতো বলতে হবে তোমাকেই।’
পাশাপাশি হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর সাথে বসেও কথা বলতে চান নাজমুল হাসান পাপন। ‘কোচর সাথে কথা বলতে হবে। প্লেয়াররা কোচের কথা কিছু বলেনি। কে ডিসিশনগুলো দিচ্ছে, তা জানতে হবে। কোচের সাথে কথা বলতে হবে। টার্গেটটা কম হয়েছিলো। প্লেয়ারদের হয়তো অতি আত্মবিশ্বাস ছিলো। এটা কখনোই উচিত না। আজকের খেলা দেখেন- নিউজিল্যান্ড ও ইন্ডিয়া। লাস্ট চার বলে তিন রান নিতে পারেনি, অথচ সুপার ওভারে ২০ রান (১৭ রান হবে) নিয়ে। টি-টোয়েন্টিতে এতো কম রান করে জেতা যায়না এখন।’
ঠিক ব্যর্থতার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেননি। তবে দলের পারফরমেন্স বেশি অনুজ্জ্বল ও খারাপ হবার সম্ভাব্য কারণ খুঁজতে গিয়ে বিসিবি প্রধান আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করেছেন।
তার উপলব্ধি হলো, ‘নিকট অতীত ও সাম্প্রতিক সময়ে কটা গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের আগে লক্ষ্য করেছি আমাদের প্রতিষ্ঠিত, পরিণত, সিনিয়র, অভিজ্ঞ ও অন্যতম চালিকাশক্তি সাকিব, তামিম আর মুশফিককে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে সাকিবের কিছুই করার নেই। ভারত সফরে যাবার ঠিক আগে দিয়ে সাকিব আইসিসির নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ায় যেতে পারেনি।’
তামিম-মুশফিককে নিয়ে পাপন বলেন, ‘কিন্তু তামিম একদম শেষ মুহূর্তে গিয়ে না করে দিল। আর এবার পাকিস্তান যাবার আগে মুশফিকও না বললো। এরকম গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন চ্যালেঞ্জিং মিশনের আগে দলের অন্যতম চালিকাশক্তি ও অতি নির্ভরযোগ্য পারফরমারদের হঠাৎ খেলতে না যাবার একটা চরম নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, হচ্ছে।’
বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন সোজা সাপটা উচ্চারন, ‘আসলে একটা সিরিজ শুরুর আগে হঠাৎ হুট করে কেউ খেলতে যেতে না চাইলে সমস্যা হয়। তখন নতুন বিকল্প খুঁজতে হয়।’
বিসিবি সভাপতির কথা, ‘এখানে অনেক বিষয় আছে, যা আমরাও ফেস করছি। এখনো আমরা কয়েকটি বিষয়ে স্ট্রাগল করছি। যেমন ধরেন- ইন্ডিয়া সিরিজের ঠিক আগে, তিনদিন আগে শুনলাম সাকিব খেলতে পারবে না। এটা বড় ধাক্কা। ইন্ডিয়ার মতো দেশের সাথে সিরিজের আগে, ওই সময় সাকিবের রিপ্লেসমেন্ট পাওয়া কঠিন। ওর কোনো রিপ্লেসমেন্ট আমাদের নাই। তবে সেটা অবশ্য আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কারণে। এর সাথে তামিম গেলো না, এটা বড় ধাক্কা।’
পরক্ষণে তিনি বলেন, ‘ওপেনিংয়ে নতুন কাউকে খোঁজা দরকার ছিলো। আমরা নাঈমকে নামালাম। এবার আবার তামিম ফেরত এলো; কিন্তু মুশফিক বললো ও যাবে না। এখন চার নম্বর পজিশন নিয়ে সমস্যা হলো। আগে থেকে বললে, আমরা সমাধান করতে পারি; কিন্তু হঠাৎ করে তো হয় না। এখন সামনের টেস্টে নতুন কাউকে নিলাম। একটা টেস্টের জন্য। একটা টেস্টে খেলানো যায়? অন্ত তিনটা ম্যাচ তো খেলানো দরকার। এরপর জিম্বাবুয়ের সাথে মুশফিক খেলবে; কিন্তু তারপর আবার পাকিস্তানে টেস্ট। তখন আবার চেঞ্জ। প্রতি খেলার আগে পরিবর্তন করা খুব কঠিন।’