Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অভিশংসন ঝুঁকির মুখে ডোনাল্ড ট্রাম্প

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫৭ PM
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:০২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বিতর্ক এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প- যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মার্কিন রাজনীতির ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত বিতর্ক সৃষ্টিকারী প্রেসিডেন্ট মনে হয় আর একটিও নেই। সোশ্যাল মিডিয়াতে আক্রমণাত্মক স্ট্যাটাস কিংবা ছবি পোস্ট করা থেকে শুরু করে মার্কিন কংগ্রেস- সবখানেই তার বিচরণের মাঝে রয়েছে উদ্ভট আচরণ।

ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন শব্দটির সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিচয় পুরনো। ২০১৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হবার পরপরই গুঞ্জন শোনা যায় যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হবার পেছনে সহায়তা করেছে রাশিয়া সরকার। বিষয়টি কংগ্রেসের উপর ছেড়ে দেওয়ার পর কয়েক মাস আগে তাকে নির্দোষ সাব্যস্ত করা হয়। অর্থাৎ, অভিশংসনের ছোবল থেকে কোনমতে বেঁচে ফেরেন তিনি। এরই রেশ কাটতে না কাটতেই আবার অভিসংশনের ঝুঁকির মুখে পরার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

অভিশংসন বিতর্ক

এবারের বিতর্কে তার সাথে যুক্ত হয়েছে যার নাম, তিনি হলেন আসন্ন ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তারই সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন; যিনি কিনা বারাক ওবামার শাসনামলে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর বিতর্কের কারণ? কারণ লুকিয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কমপক্ষে পাঁচ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত দেশ ইউক্রেইনে। বিতর্কের গভিরে লুকিয়ে আছে তেল ও গ্যাস ব্যবসার স্বার্থ।

আরেকটু সহজ ভাষায় যদি বলি, জো বাইডেনের পুত্র হান্টার বাইডেন  ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অভিযোগ ছিল যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন যেন তারা বাইডেন পরিবারের কথিত 'দুর্নীতির' ব্যাপারে তদন্ত করে। মি ট্রাম্প চাপ প্রয়োগের কথা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু তিনি এটা স্বীকার করেছেন যে জুলাই মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে ফোনে কথা বলার সময় তিনি জো বাইডেন এবং তার ছেলে হান্টারের 'দুর্নীতির' প্রসঙ্গ তুলেছিলেন।

ট্রাম্প-বাইডেন দ্বন্দ্বের ইতিহাস 

সেটা ২০১৪ সালের কথা। তখন জো বাইডেন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট, এবং ইউক্রেনের ব্যাপারে মার্কিন নীতি কি হবে তার একজন মুখ্য নির্ধারক। আর ঠিক সে সময়ই তার ছেলে হান্টার বাইডেন ইউক্রেনের প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি বুরিসমার একজন পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল যে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের ছেলে যদি ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির পরিচালক হন - তাহলে এক্ষেত্রে বাইডেন পক্ষপাতহীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কি না, অর্থাৎ এখানে একটা 'স্বার্থের সংঘাত' হচ্ছে কিনা। তখন ইউক্রেন রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্ট সদ্য ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। সেই সময়টা জো বাইডেন ঘন ঘন ইউক্রেন সফরে যাচ্ছিলেন।

২০১৬ সালে বাইডেন ইউক্রেন সরকারের ওপর চাপ দিয়েছিলেন - যাতে তারা তাদের শীর্ষ কৌঁসুলি ভিক্টর শোকিনকে বরখাস্ত করে। বাইডেন নিজেই বেশ গর্ব করে এই চাপ দেবার কথা স্বীকার করেছিলেন এক বক্তৃতায়।

তিনি বলেছিলেন, "আমি ওদের (ইউক্রেনীয়দের) বললাম, আমি এখানে ৬ ঘন্টা আছি। তোমরা যদি শোকিনকে বরখাস্ত না করো, তাহলে তোমাদের যে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ পাবার কথা, তা দেয়া হবে না। এ চাপের কারণ কী? কারণ হলো বুরিসমা কোম্পানির মালিকের দুর্নীতির তদন্ত করছিলেন এই শোকিন। ট্রাম্প এবং তার মিত্রদের অভিযোগ, বাইডেন তার ছেলেকে সুরক্ষা দেবার জন্যেই এ কাজ করেছিলেন।

অভিশংসন নিয়ে তদন্তের বিস্তারিত

গড়পড়তা আমেরিকানদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে অত উত্তেজনা নেই। যতটা যা দেখা যায়, তাও ওই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছরে। কিন্তু চলমান অভিশংসন তদন্ত মোটাদাগে সবাইকে রাজনীতির প্রতি মনোযোগী করে তুলেছে। থ্যাংকসগিভিং ডের টার্কি খেতে খেতে অন্তত ৪০ শতাংশ আমেরিকান এ তদন্তের চুলচেরা বিশ্লেষণের জন্য নজর রাখবেন। আর প্রায় সব আমেরিকানেরই এ তদন্ত নিয়ে নিজস্ব অভিমত রয়েছে। এও উঠে এসেছে সিএনএনের জরিপেই। এই অংশটির দৃষ্টি অবশ্য ট্রাম্পের করা ন্যায়-অন্যায়ের দিকে নয়। তাদের প্রশ্নটি হলো, ‘ট্রাম্প কি অভিশংসিত হচ্ছেন?

তদন্তের অগ্রগতি দেখে বলার সুযোগ নেই ট্রাম্প অভিশংসিত হবেন কিনা। তবে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ডেমোক্র্যাটরা নিম্নকক্ষে অভিশংসনের প্রস্তাব পাস করাতে পারবেন বলে দৃঢ়বিশ্বাসী। আর তদন্তের প্রতিবেদনটি সামনে আসার সাথে সাথেই বিষয়টি আরও ভালভাবে বোঝা যাবে। যদি ডেমোক্র্যাটরা নিম্নকক্ষে অভিশংসনের প্রস্তাবটি পাস করাতে পারে তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প হবেন আমেরিকার ইতিহাসের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট, যিনি এই অসম্মানজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাবেন। সর্বশেষ অভিশংসিত হয়েছিলেন বিল ক্লিনটন ১৯৯৮ সালে। তারও অনেক আগে ১৮৬৮ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসনকেও পরতে হয়েছিল এমন পরিস্থিতিতে।  

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটদের অবস্থান

পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে যে, নিম্নকক্ষে ডেমোক্র্যাটরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হবার কারণে ডেমোক্রেটিক দলের পক্ষে বেশ শক্ত একটি প্রতিবেদনই দাখিল করা সম্ভব, যার ওপর দাঁড়িয়ে তারা প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন প্রস্তাব পাস করিয়ে নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য তাঁরা অন্তত একজন রিপাবলিকানকে পাশে পাবেন। তিনি হলেন ট্রাম্পবিরোধী হিসেবে পরিচিত মিশিগান থেকে রিপাবলিকান দলের হয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি জাস্টিন অ্যামাশ, চলতি বছরের শুরুর দিকে রিপাবলিকান দল ত্যাগ করেন। তবে ডেমোক্র্যাটরাও তাঁদের ১৮ জন সদস্যকে বিরোধী পক্ষে অবস্থান নিতে দেখতে পারেন। প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাব পাসে এটি বড় ব্যবধান না গড়লেও, সিনেটে প্রস্তাব পাসে এটি বিরাট প্রতিবন্ধকতা হয়ে দেখা দেবে। কারণ সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৬৭টি ভোট নিয়ে প্রস্তাবটি পাস করতে হলে, রিপাবলিকান দলের অন্তত ২০ জন সদস্যকে নিজ দলের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে। এ হিসাবে দাঁড়িয়ে ডেমোক্র্যাটদের রণেভঙ্গ দেওয়াই উচিত। কিন্তু তাতে বাধ সাধছে, খোদ সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককোনেল। প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের পক্ষে প্রস্তাব পাস হলে তিনি ‘বিচারকাজ’ শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কিন্তু বারবার এভাবে অভিশংসনের মুখে পড়া এবং তা থেকে কোনোভাবে পিছলে বেরিয়ে আসার একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমশালী দেশটির সর্বোচ্চ পদে আবারো বসানো উচিত হবে কি না, নিশ্চয়ই বিষয়টি ভেবে দেখবেন দেশটির সাধারণ মানুষ। তারপরও যদি আগামী বছর অনুষ্ঠেয় ওই নির্বাচনে ট্রাম্প পুনর্বার জয়ী হয়েই যান, তাহলে তার স্বেচ্ছাচারিতা আরো অনেক বেশি মাত্রা ছাড়াবে এটা নিশ্চিত। এখন দেশটির কংগ্রেস ট্রাম্পের ব্যপারে কি সিদ্ধান্ত নেয় আর দেশটির জনগণ এতকিছুর পরেও আবার ট্রাম্পকেই নির্বাচিত করে কিনা-সেটাই দেখার বিষয়।

Bootstrap Image Preview