লন্ডন ব্রিজ হামলার পর নতুন বিতর্কের মুখে পড়েছে ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ সরকার। হামলার ঘাতক উসমান খানসহ সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত আরও অন্তত ৭৪ জনকে সম্প্রতি আগাম মুক্তি দেয়া হয়। এ নিয়ে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।
সেই সঙ্গে ক্ষোভ বাড়ছে জনমনে। প্রশ্ন উঠছে, অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা কিভাবে জেল থেকে মুক্তি পেল। বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে সাজা শেষ হওয়ার আগেই কারামুক্তির বিষয়টি পর্যালোচনা শুরু করেছে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়।
এদিকে লন্ডন হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। শনিবার নিজেদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি দাবি করে, তাদেরই এক সদস্য শুক্রবার লন্ডন ব্রিজে ওই হামলা চালায়। তবে বরাবরের মতো দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা।
হামলাকারী উসমান খান সম্পর্কে নতুন তথ্য দিয়েছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। জম্মু-কাশ্মীরেও হামলার ছক ছিল উসমানের। ২০১২ সালে একটি মামলায় লন্ডনের একটি আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। সেই সময় রায়ে এমনটাই জানিয়েছিলেন বিচারক।
শুক্রবার লন্ডন ব্রিজে ছুরি হামলা করে দু’জনকে হত্যা করে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অভিযুক্ত সন্ত্রাসী উসমান খান। পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সে। এর পর থেকেই নতুন এক বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে ব্রিটেনজুড়ে।
সরকারের একজন শীর্ষ আইনজীবী জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের আগাম মুক্তির ঝুঁকির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে সতর্ক করা হয়েছিল। অনুরোধ ছিল, আসামিদের সন্ত্রাস থেকে ফিরিয়ে আনতে কারাগারেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার। কিন্তু আইনজীবীর এই হুশিয়ারিতে কর্ণপাত করেননি তিনি।
উল্টো বলেছিলেন, ‘সন্ত্রাসীদের বসিয়ে বসিয়ে খাইয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার মতো এত টাকা সরকারের নেই।’
পুলিশ জানিয়েছে, উসমান খান ২০১২ সালে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে বোমা হামলা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে জেলে ছিল। কিন্তু শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পায় সে। এরপর ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
সরকারের এই দণ্ডনীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধান বিরোধী দল লেবার নেতা জেরেমি করবিন। জোরের সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘সরকারের এই দণ্ডনীতির পরিপূর্ণ তদন্ত ও পর্যলোচনা হতে হবে।’
লন্ডন ব্রিজ হামলাকে ‘বড় বিপর্যয়’ অভিহিত করে তিনি আরও বলেন, বিদেশে ব্রিটেনের সামরিক আগ্রাসনই দেশের ভেতরে হামলার ঘটনা বাড়াচ্ছে। বিরোধীদের এই সমালোচনার মুখে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা কিভাবে জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছে তা নিয়ে শনিবার থেকে জরুরি ভিত্তিতে পর্যালোচনা শুরু করেছে সরকার।
উদ্ভূত পরিস্থিতি শামাল দিতে বরিস জনসন বলেছেন, আগে-ভাগেই জেলমুক্তি থামানো গেলে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা যেত। তবে বিরোধী লেবার দলনেতা জেরেমি করবিন এ জন্য বাজেট কর্তনকে দায়ী করেছেন। বলেছেন, বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ হারিয়েছে বাজেট কর্তন।
২০১২ সালে স্টক এক্সচেঞ্জে বোমা হামলা পরিকল্পনার জন্য উসমান খানকে অভিযুক্ত করে জেল দেয়া হয়।
জননিরাপত্তার জন্য তাকে অনির্ধারিত সময়ের জন্য জেল দেয়া হয়। তবে এই জেলের মেয়াদ সর্বনিু আট বছর। এই শাস্তির ফলে তাকে সর্বনিু সময় পর্যন্ত জেলে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে কোর্ট অব আপিল ওই শাস্তি বাতিল করে দেয়।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দেয়া হয় জেল থেকে। মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার নেইল বসু বলেছেন, এসব শর্তের মধ্যে বেশ কিছু কড়া কড়া শর্ত ছিল। ‘আমার জানা মতে, সে এসব শর্ত মেনে চলছিল।’