দীর্ঘ ৪ মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা জম্ম ও কাশ্মিরে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বিশেষ ফোর্স মোতায়েন করেছে ভারত সরকার। অবরুদ্ধ কাশ্মিরে স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযান চালাতে চায় হিন্দ্যুত্ববাদী কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে এখবর দিয়েছে দেশটির প্রভাশালী গণমাধ্যম এনডিটিভি।
এই প্রথম এই উপত্যকায় এই বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এই বিশেষ বাহিনীর মধ্যে রয়েছে, সেনাবাহিনীর প্যারা স্পেশাল ফোর্স, নৌবাহিনীর মেরিম কমান্ডো এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর গরুর বাহিনী।
সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, প্রতিরক্ষার তিনটি বাহিনীকে মিশিয়ে সম্প্রতি গঠন করা হয়েছে আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল অপারেশন ডিভিশন। এই ডিভিশনকেই এই প্রথমবার নিয়োগ করা হল কাশ্মীরে। কাম্মিরের যে সব জায়গা স্বাধীনতাকামীদের আধিপত্য সেই সব জায়গাগুলোতেই আপাতত কাজ করবে তিন বাহিনী একসঙ্গে। আর্মির প্যারা স্পেশাল ফোর্সের পাশাপাশি খুব শিগগিরই মেরিন কম্যান্ডোস এবম গৌড় বাহিনীকে কাশ্মিরে পুরোপুরি ভাবে নিয়োগ করা হবে।
শ্রীনগরের কাছে বিশেষ কিছু এলাকায় এরইমধ্যে তিন বাহিনীর স্পেশাল ফোর্স কাজ শুরু করেছে বলে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ আগস্ট একতরফা ও বিতর্কিত ভাবে জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনসহ বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করে দুই ভাগ করে নাদালকে বিচ্ছিন্ন করে কেন্দ্রীয় সরকার। সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫-এ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর রাজ্য জুরে কারফিউ জারি করা হয়।
রাস্তাঘাট, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, ইন্টারনেট, টেলিফোন সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়। পথে পথে টহল দেয় পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারির গাড়ি। কাঁটাতার আর ব্যারিকেড ফেলে বন্ধ করা হয় সব রাস্তাঘাট। নিষিদ্ধ করা হয় বিক্ষোভ-সমাবেশ।
কাশ্মিরি হাজার হাজার নেতাদের গ্রেফতার ও গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। দুই-তিন জনকে এক সাথে দেখলে গ্রেফতার করা হচ্ছিল। বাড়ি বাড়ি থেকে যুবকদের তুলে নিয়ে যায় ভারতীয় বাহিনী। পুরো রাজ্যটাই যেন কারাগারে পরিণত করা হয়। মূলত এখনও কাশ্মিরকে বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে ভারত সরকার।
সংবিধানের ৩৭০ ধারায় জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। পররাষ্ট্র, যোগাযোগ ও প্রতিরক্ষা ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ওই রাজ্যকে দেয়া হয়েছিল। তাদের আলাদা পতাকা ছিল। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ছিল সংবিধান। কালে কালে সব হারিয়ে অবশিষ্ট ছিল সাংবিধানিক ধারা ও কিছু বিশেষ ক্ষমতা। তাও বাতিল করা হলো। অনেকটা ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদার ইহুদিবাদী বন্ধুরাষ্ট্র ইসরায়েলের পথ বেছে নিয়েছে ভারত।
ভারত সরকার আটককৃতদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে না বললেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বিগত একমাসে জম্মু-কাশ্মীরে গ্রেফতারকৃতদের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি ছাড়িয়ে গেছে।
ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণ মতে, নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সরকারের নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলটি এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারাগারে পরিণত হয়েছে।