Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশকে ১৫ লাখ লোক ‘ফেরত’ নিতে বলবে আসাম: বিজেপি নেতা ও অর্থমন্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৭ PM
আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বিজেপি নেতা ও আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, বাদ পড়া ১৯ লাখ মানুষের মধ্যে ১৪-১৫ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত নিতে বাংলাদেশ সরকারকে বলবেন তারা।

আসামের চূড়ান্ত নাগরিকপুঞ্জি প্রকাশের পরদিন রোববার ভারতের গণমাধ্যম নিউজ১৮-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এতথ্য জানান বিজেপি নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সম্বয়ক শর্মা।

তিনি বলেন, ‘জাল দলিল প্রতিরোধে’ নাগরিকদের তালিকা হালনাগাদের এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে ততদিন, যতদিন আসামের একজন আদিবাসীও তাদের আবাস খুঁজে না পাবে। ১৯৭১ সালের পরে যারা শরণার্থী হিসেবে এসেছে, তারা সমস্যার সম্মুখীন হবেন। আমরা তাদের প্রতি সহমর্মী। কিন্তু তালিকার মধ্যে অনেকে আছেন, যারা নাগরিক নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছেন এবং আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

এজন্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর অন্তত ২০ শতাংশ এবং বাকি আসামের ১০ শতাংশ নাগরিকদের পুনঃযাচাইয়ের অনুমতি দিতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে দাবি জানান আসামের অর্থমন্ত্রী।

শর্মা বলেন, আমরা কিছু অবৈধ অভিবাসী পেয়েছি এবং আমরা এ অনুসন্ধান চালাতে থাকব। আসামের প্রত্যেকটি আদিবাসী তাদের জায়গা খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলবে। আমরা ১৪ থেকে ১৫ লাখ বিদেশি শনাক্ত করেছি, এটা প্রমাণিত হয়েছে। মমতা ব্যানার্জি যাই বলুক না কেন তা আমরা আমলে নিচ্ছি না। কারণ অবৈধ বিদেশিরা তার ভোট ব্যাংক।

প্রায় চার বছর ধরে যাচাই-বাছাইয়ের পর আসাম সরকার শনিবার সকালে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স-এনআরসির (নাগরিকপুঞ্জি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। তালিকায় ৩ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জন জায়গা পেয়েছেন, বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন। ওই তালিকায় এক লাখের বেশি গোর্খা আদিবাসীর নাম নেই বলে রোববার জানিয়েছেন নাগরিকপুঞ্জির কড়া সমালোচক প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এক টুইটে তিনি বলেন, চূড়ান্ত ব্যর্থ এ নাগরিকপুঞ্জি নিয়ে শুরুতে আমি মাথা ঘামাইনি। কিন্তু যখন একের পর এক তথ্য আসতে থাকলো, আমরা হতবাক হয়ে দেখলাম একলাখের বেশি গোর্খা জনগোষ্ঠীকে তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্য আসামের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও ভারতের সরকারি বক্তব্য অনুযায়ী বিষয়টিকে ‘অভ্যন্তরীণ’ আখ্যা দিয়ে আশ্বস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সরকারের দুজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী।

রোববার ঢাকা ক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারত অঙ্গীকার করেছে, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এটা কোনোভাবে বাংলাদেশকে অ্যাফেক্ট করে না। বাংলাদেশ ভারতের অঙ্গীকার বিশ্বাস করতে চায়। আমরা এখন শুধুই পর্যবেক্ষণ করছি। এ নিয়ে এখনও আমাদের নিজেদের কোনো বক্তব্য নেই।

এর আগে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তারা যদি আমাদের সঙ্গে কিছু বলে তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়াটা আমরা জানাব।

তবে দুই মন্ত্রীই জোর দিয়ে বলেছেন, ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশ থেকে কেউ ভারতে গিয়ে শরণার্থী হয়নি। যা আসা-যাওয়া হয়েছে দুই দেশের মধ্যে, তা স্বাধীনতার আগে হয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।

তবে আসামের এই মন্ত্রী রোববার সাক্ষাৎকারে যে কথা বলেছেন, তাতে বাংলাদেশের জন্য চিন্তার যথেষ্ট কারণ থাকতে পারে।

শর্মা বলেন, তালিকায় বাদ পড়াদের ক্ষেত্রে কোনো মানবাধিকার ল ঙ্ঘনের ঘটনা ঘটবে না বা কাউকে আটকও করা হবে না। আমরা বাংলাদেশকে বলব, তাদের লোকদের ফেরত নিতে। তবে এ সময়ের মধ্যে তাদের ভোটাধিকার থাকবে না। তবে তাদের কিছু বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ভারতের বন্ধু বাংলাদেশ সব সময় তাদেরকে সহযোগিতা করে আসছে। অবৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে তারা তাদের নাগরিকদের বরাবরই ফেরত নেয়। এ সংখ্যা কখনও ‍খুব বেশি ছিল না। কিন্তু এখন তাদের চিহ্নিত করতে একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তবে তালিকায় কারও নাম না থাকলেই যে তাকে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে তা নয়। এর জন্য আইনি প্রক্রিয়া আছে। সেটা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ভারতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না।

তালিকায় যাদের নাম নেই,তাদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে বলা হয়েছে ১২০ দিনের মধ্যে। এ বিষয়ে শুনানির জন্য রাজ্যজুড়ে ১ হাজার ট্রাইব্যুনাল গড়ে তোলা হবে বলে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই ১০০ ট্রাইব্যুনাল খোলা হয়েছে। আরও ২০০টি ট্রাইব্যুনাল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই খোলার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

Bootstrap Image Preview