Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে কারণে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল ইরান

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ জুলাই ২০১৯, ০৩:২০ PM
আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯, ০৩:২০ PM

bdmorning Image Preview


পাশ্চাত্যের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার ৩৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ ৩০০ কেজির সীমা অতিক্রম করেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে ইউরোপীয় দেশগুলোর গড়িমসির কথা উল্লেখ করে ঘোষণা করেছেন, “নিজের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ইরান অত্যন্ত স্বচ্ছতা বজায় রেখে পরমাণু সমঝোতায় নিজের দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন স্থগিত রাখছে।”

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরান পরমাণু সমঝোতা অনুসরণ করেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়েছে; ফলে এর মাধ্যমে এ সমঝোতা লঙ্ঘিত হয়নি।  ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সদরদপ্তরে নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি ‘কাজেম গারিবাবাদি’ এ সম্পর্কে বলেছেন, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ তার ১৫টি ত্রৈমাসিক রিপোর্টে পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতির প্রতি ইরানের অটল থাকার কথা ঘোষণা করেছে।

এদিকে ইরান নিজের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এ সমঝোতার ২৬ ও ৩৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী গত ৮ মে থেকে এ সমঝোতার কিছু ধারার বাস্তবায়ন স্থগিত রাখার প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০১৮ সালের ৮ মে আমেরিকা অন্যায়ভাবে ও গায়ের জোরে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যায় এবং তার এক বছর পূর্তিতে ইরান ওই পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে ইরান একইসঙ্গে ইউরোপীয় দেশগুলিকেও এই বার্তা দিয়েছে যে, তারা যদি পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী ইরানকে তার অধিকার দিতে না পারে তাহলে এ ধরনের আরো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তেহরান।

পশ্চিমা দেশগুলো হয়তো ভেবেছিল, তারা পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন না করলেও ইরানকে চিরকাল এটি মেনে চলতে বাধ্য করা যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এ সমঝোতার মধ্যে থেকে ইরানের অনেক কিছু করার আছে যার মাত্র সামান্যই সম্পন্ন করেছে তেহরান।

এ সম্পর্কে ইরানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষক সাবা জাঙ্গানে বলেছেন, ইরান যতদিন পরমাণু সমঝোতার গঠনকাঠামোর মধ্যে থেকে তৎপরতা চালাবে ততদিন এ সমঝোতার সুবিধা পাওয়ার অধিকার তার থাকবে এবং পাশ্চাত্যের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রতিবাদে এর কোনো কোনো ধারার বাস্তবায়ন স্থগিত রাখতে পারবে।

পরমাণু সমঝোতায় বলা হয়েছে, ইরানে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পরিমাণ ৩০০ কেজির বেশি হতে পারবে না এবং ৩০০ কেজির বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বিদেশে রপ্তানি করতে হবে। কিন্তু আমেরিকা ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে অতিরিক্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বিদেশে রপ্তানির পথে বাধা সৃষ্টি করে মূলত পরমাণু সমঝোতাকেই অকার্যকর করে দিতে চেয়েছে।

ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি এ সম্পর্কে বলেন, পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী আমাদেরকে ৩০০ কেজির অতিরিক্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম হয় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অথবা বিদেশে রপ্তানি করতে হবে। কিন্তু আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ঘোষণা দিয়েছে, ইরানের কাছ থেকে কেউ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কিনতে পারবে না। মার্কিন সরকারের উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে ইরানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া। কিন্তু আমরা যখন অতিরিক্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বিক্রি করতে পারছি না তখন পরমাণু সমঝোতারই ৩৬ নম্বর ধারা মেনে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বেশি করে মজুদ করার পরিকল্পনা হতে নিয়েছি।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ অবশ্য এ সম্পর্কে বলে রেখেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি পরমাণু সমঝোতায় দেয়া তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে তাহলে ইরানও সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ আবার ৩০০ কেজির চেয়ে নীচে নামিয়ে আনবে। কিন্তু তারা যদি তা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে এ সমঝোতার ৩৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ইরান এতে দেয়া আরো বেশি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন স্থগিত রাখবে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, পরমাণু সমঝোতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য তেহরানকে ৩.৬৭ মাত্রার যে সীমা বেধে দেয়া হয়েছিল এর পরের বার ইরান সে মাত্রাও অতিক্রম করবে।

Bootstrap Image Preview