Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘ভারত থেকে মুসলিম তাড়ানো নয়, বাঙালিদের কোণঠাসা করার চক্রান্ত হচ্ছে’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ জুলাই ২০১৯, ০৬:৪৯ PM
আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯, ০৬:৫২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


আসামের নাগরিক তালিকা সংশোধনের কাজ আরো এক মাস বাড়িয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু আদৌ কি তার পিছনে কোনো সদিচ্ছা কাজ করছে? নাকি এ আদতে বাঙালি খেদানোর ছক?‌‌ আসামের বৈধ বাসিন্দা কারা, আর কারাই বা বেআইনি বহিরাগত, তা শনাক্ত করার জন্য যে নাগরিক তালিকা সংশোধনের কাজ চলছে, তা শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩০ জুন, রবিবার। তার আগের দিন ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানালেন, যেহেতু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই কাজ শেষ করা যায়নি, এর মেয়াদ আরো একমাস বাড়িয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত করা হলো।

শুনে মনে হতেই পারে, ভারত সরকার আসলেই খুব আন্তরিক, যাতে বৈধ নাগরিকরা কেউ তালিকার বাইরে না থেকে যায়। যদিও প্রথম দফায় তৈরি খসড়া নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল আসামের ৪০ লাখ বাসিন্দার নাম, যাদের এক বড় অংশ কয়েক পুরুষ ধরে আসামের বাসিন্দা।

সেই নিয়ে বিস্তর বিতর্কের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ পাবে প্রত্যেকেই। সম্প্রতি জানানো হয়েছে, সেই আবেদনের মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার চিরতরে বাতিল হয়ে গেছে। নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্ব এরা প্রমাণ করতে পারেননি।

এই বেনাগরিক হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর জন্য খালি করা হয়েছে সবকটি জেলা কারাগার। বিরাট এলাকা জুড়ে তৈরি হচ্ছে বন্দি শিবির। এখানে কার্যত বিনা বিচারে আটক রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে হঠাৎ নাগরিকত্ব হারিয়ে ফেলা আসামবাসীদের। ভোটার তালিকার মধ্যেও ‘‌সন্দেহজনক’‌দের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে। 

তথাকথিত ওই ‘‌ডাউটফুল'‌, বা ‘‌ডি ভোটার’‌রাও নিজেদের প্রকৃত নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারলে, তাদের ঠিকানা হবে ওই বন্দিশিবির। আসাম রাজ্যজুড়ে এই যে ঝাড়াই-বাছাই চলছে, তার অন্তরালে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডাও সমান সক্রিয়।

প্রকাশ্যেই বিজেপির নেতারা বলছেন, অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের আসাম থেকে এবং ভারত থেকে তাড়ানো হবে। মুসলিম অনুপ্রবেশকারী বলে এক্ষেত্রে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে রুটি-রুজির খোঁজে আসা খেটে খাওয়া মানুষজন, যাঁদের অনেকেই বংশ পরম্পরায় আসামের লোক। বিজেপি নেতারা খোলাখুলিই বলছেন, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার হাবেভাবে বোঝাচ্ছে যে, বিতাড়িত হবে মুসলিমরা, আশ্রয় দেওয়া হবে হিন্দুদের।

কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই আদতে বাঙালিকে কোণঠাসা করার চক্রান্ত। হিন্দু বা মুসলিম নয়, বাঙালিদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে আসাম থেকে, যা আদৌ নতুন কিছু নয়। ডয়চে ভেলেকে বললেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য, যিনি দীর্ঘদিন ধরে এই বাঙালি বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব।

তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভারতের স্বাধীনতার পর থেকেই আসামে এই বাঙালি বিরোধী মানসিকতা সক্রিয়, যাতে ধারাবাহিকভাবে ইন্ধন জুগিয়ে গেছে প্রথমে কংগ্রেস এবং পরে বিজেপি সরকার। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে আসাম গণ পরিষদের মতো আঞ্চলিক দলকে, যাদের ঘোষিত কর্মসূচি ছিল ‘‌বাঙালি খেদা’‌। 

আজকে বিজেপি ঠিক সেই বিদ্বেষই কাজে লাগাচ্ছে, যার প্রাথমিক সাফল্যের তাগিদে হিন্দু বাঙালির সেন্টিমেন্টকে খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে। বোঝানো হচ্ছে, আসল প্রতিরোধ মুসলিমদের বিরুদ্ধে। এই বলেই ‘‌বিজেপি সমস্ত বাঙালি হিন্দুদের মগজধোলাই করতে সমর্থ হয়েছে,’ মন্তব্য করলেন তপোধীর ভট্টাচার্য।

এবং আশঙ্কা, নতুন যে বিলটা আনা হয়েছে, তাতেও ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনো আশাই নেই। বলা হচ্ছে, নিজেকে বিদেশি নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে এবং ভারতে ছয় ‌বছর থাকার পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে। কিন্তু সেটা আসলে আরো বড় এক ফাঁদ, যাতে বহিরাগতদের চিহ্নিত করতে সুবিধে হয়। 

কারণ, বিজেপির আসল উদ্দেশ্য, গোটা পূর্ব ভারতেই বাঙালিকে একঘরে, কোণঠাসা এবং শক্তিহীন করে দেওয়া। বিশেষত সেই বাঙালিকে, যে চিরকাল সাম্প্রদায়িকতার বিপদের বিরুদ্ধে সমাজকে সতর্ক করে এসেছে।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Bootstrap Image Preview