সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে বেসামরিক প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার দাবিতে সুদানের ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের ফলে এ পর্যন্ত অন্তত ৭ জন পরলোক গমন করেছেন।
রবিবার (৩০ জুন) দেশটির রাজধানী খার্তুমে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে। এতে নগরীর কয়েকটি এলাকায় লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে সামরিক শাসন বিরোধী মিছিল নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে এগিয়ে যায়।
অপরদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্স সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলাকালে অন্তত সাত জন নিহত ও বহু লোক আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছে ও অভিজাত রিয়াদ আবাসিক এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদুনে গ্যাসও নিক্ষেপ করে।
এছাড়াও ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিলের উপ-প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো গুলি ছোঁড়ার বিষয়ে জানিয়েছেন, অজ্ঞাত স্নাইপাররা বেসামরিক ও সৈন্যদের দিকে গুলি ছুঁড়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিবের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলাকালে অন্তত সাত জন পরলোক গমন করেছেন। এছাড়াও আরও ১৮১ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২৭ জন গুলিতে হতাহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে ১০ জন নিয়মিত বাহিনীগুলোর সদস্য বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। এদের মধ্যে জেনারেল দাগালোর নেতৃত্বাধীন র্যা পিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) সদস্য তিন সৈন্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, বাকী সাত জন বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সরকারবিরোধীদের সমর্থক চিকিৎসকদের একটি গোষ্ঠী জানিয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে বেশ কয়েকটি শহরে অন্তত পাঁচ জন বিক্ষোভকারী পরলোক গমন করেছেন ও বহু বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন।
হতাহতের এসব দাবী স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
সুদানের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ চলার পর সামরিক বাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এরপর থেকে সামরিক বাহিনীর একটি কাউন্সিল দেশটি নিয়ন্ত্রণ করছে।
বিক্ষোভ বজায় রেখে বিরোধী গোষ্ঠীগুলো বেসামরিক প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার জন্য সামরিক বাহিনীকে চাপ দিচ্ছে। ৩ জুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘটরত বিক্ষোভকারীদের শিবিরে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সদস্যরা অভিযান চালালে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা ভেঙে যায়।
যে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সাবেক প্রেসিডেন্ট বশির ক্ষমতায় এসেছিলেন তার ৩০তম বর্ষপূর্তি ছিল রবিবার। এ দিনটি উপলক্ষে দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল সরকার বিরোধী জোট দ্য ফোর্সেস ফর ফ্রিডম এন্ড চেঞ্জ (এফএফসি) ।
বেসামরিক প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য এ দিনটিকেই সুদানের সামরিক শাসকদের জন্য চূড়ান্ত সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করেছিল আফ্রিকান ইউনিয়ন, অন্যথায় আরও নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করেছিল তারা।