Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

স্বামী যেখানে ধর্ষণ করেন স্ত্রীকে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ মে ২০১৯, ১০:৩৭ AM
আপডেট: ০২ মে ২০১৯, ১০:৩৭ AM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী ছবি


আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে প্রতি ঘন্টায় ৪৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এমন কি সেখানে স্বামীরা পর্যন্ত স্ত্রীদের ধর্ষণ করেন। রাগের বশে স্ত্রীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা। নৃশংসভাবে তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে মিলিত হন। কোনো কোনো স্বামী একে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। খবর- বিবিসি।

বিবিসি সূত্রে জানা গেছে, কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় গ্রাম রুৎশুরুর বাসিন্দা মোইসেস বাগউইজা। তিনি সামান্য রেগে গেলেই স্ত্রীর সঙ্গে সহিংস যৌন মিলনে আবদ্ধ হন। তিনি স্বীকার করেছেন ‘তার সাথে যৌনমিলন করাটা ছিল একটা যুদ্ধের মতো।

সে যে কাপড়ই পরে থাকুক- আমি তা ছিঁড়ে ফেলে দিতাম।’ এ থেকেই বোঝা যায় তিনি যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সময় কি রকম আচরণ করতেন স্ত্রীর সঙ্গে।

পৃথিবীর যেসব দেশে যৌন সহিংসতার মাত্রা সবচেয়ে বেশি তার অন্যতম কঙ্গো। মোইসেস বাগউইজার স্ত্রীর নাম জুলিয়েন বাগউইজা। তিনি বলেছেন, তার স্বামীর মেজাজ খারাপ থাকলে সহিংসতা ছাড়া তাদের যৌন মিলন হতে পারতো না। এ জন্য  মি. বাগউইজা এখন তার যৌন সহিংসতার জন্য দু:খিত বোধ করেন। বিবিসির কাছে তিনি অনুতাপের সাথেই বর্ণনা করছিলেন বিশেষ করে একটি ঘটনার কথা।

তখন তার স্ত্রী চার মাসের অন্ত:সত্বা। তিনি স্থানীয় মেয়েদের এক সমবায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গোপনে কিছু টাকা জমাচ্ছেন, এ কথা জানার পর স্বামী দাবি করলেন, তাকে এক জোড়া জুতো কেনার টাকা দিতে হবে। স্ত্রী তা দিতে অস্বীকার করায় তার পেটে লাথি মারেন মি. বাগউইজা।

‘আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে তার পেটে একটা লাথি মারলাম’ বলছিলেন তিনি, তাতে তার স্ত্রী মাটিতে পড়ে গেলেন, তার দেহ থেকে রক্ত বেরুতে লাগলো। তার প্রতিবেশীরা ছুটে এলেন, তাকে হাসপাতালে নেয়া হলো।

মি. বাগউইজা বললেন, ‘এটা ঠিক যে ওই টাকাটা তারই ছিল, কিন্তু আজকাল যেমন হয় যে মেয়েদের হাতে অর্থ থাকলে তারা নিজেদের ক্ষমতাবান মনে করে এবং তারা সেটা প্রদর্শন করে।’

তার গ্রামের একজন নির্মাণকর্মী বিবিসিকে তার জীবনের কথা বলেন।

তার ভাষায়, সহিংসতা ছিল তার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগের একমাত্র উপায়।

‘আমি তাকে নিজের সম্পদ বলে মনে করতাম আমি ভাবতাম আমি তার সাথে যা খুশি তাই করতে পারি। যেমন ধরুন, আমি বাড়ি ফিরলাম- স্ত্রী আমাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করলো। অমনি আমি তাকে একটা ঘুষি মারলাম।’

অর্থ উপার্জনকারী মেয়েদের ব্যাপারে আফ্রিকান পুরুষদের মনে যে লুকোনো বিরাগ রয়েছে- অনেকের মতে সেটাই হলো আধুনিক আফ্রিকান পুরুষদের সংকটের মূল।

বহুকাল ধরে এ মহাদেশে পুরুষরা বেড়ে উঠেছে এই ধারণা নিয়ে যে, পুরুষ মানেই হলো শক্তি, যার ক্ষমতা আছে তার নিজের পরিবারকে খাদ্য ও সুরক্ষা দেবার।

কিন্তু এখন পুরুষদের মধ্যে বেকারত্বের হার উচ্চ, অন্যদিকে নারীরা অনেকে চাকরি করছে, তাদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে ক্রমশ। তাই চিরাচরিত সেই পুরুষের ভুমিকা পালন করা এখন কঠিন হয়ে উঠছে।

মি. বাগউইজার মতে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন একজন নারীকে মনে করা হয় পৌরুষের প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে।

এক জরিপ অনুযায়ী কঙ্গোতে প্রতি ঘন্টায় গড়ে প্রায় ৪৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

দেশটির পূর্বাংশে দীর্ঘদিন ধরে যে সামরিক সংঘাত চলছে, তাতে প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়া গ্রুপগুলো মেয়েদের গণধর্ষণ ও যৌনদাসী বানানোকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

কঙ্গো মেন’স নেটওয়ার্ক নামে এনজিওর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইলট আলফন্স বলছেন, ‘কিন্তু এটাকে শুধু যুদ্ধের পটভুমিতে দেখলে চলবে না। ব্যাপারটা আরো গভীর।’

আমরা মেয়েদেরকে আমাদের অধীনস্থ হিসেবে দেখার এই মানসিকতাটা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। পুরুষরা মনে করে তাদের যে কোন সময় যৌনমিলন করার অধিকার আছে। যে ক্ষমতা ও সামাজিক অবস্থান কঙ্গোলিজ পুরুষরা চায়, যৌন সহিংসতাটা তারই একটা বহিপ্রকাশ মনে করেন তিনি।

আলফন্স বলেন, তিনি নিজেও অতীতে একাধারে সহিংসতা করেছেন এবং তার শিকারও হয়েছেন।

‘আমরা বাড়িতে, স্কুলে দু জায়গাতেই বহু মার খেয়েছি। আর গ্রামে আমরা মারামারির আয়োজন করতাম। কখনো আমি আমার বান্ধবীকে পেটাতাম, কিন্তু দু:খ প্রকাশ করতে হতো তাকেই। আমার বোনকে লক্ষ্য করেও একদিন আমি একটা ছুরি নিক্ষেপ করেছিলাম।’

তবে কঙ্গোতে এখন যৌন সহিংসতা ঠেকাতে একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গী নেয়া হচ্ছে।

এতে পুরুষদের উৎসাহিত করা হচ্ছে যেন তারা তাদের পৌরুষ সম্পর্কে এতদিনের লালিত ধারণাগুলোকে নিজেরাই প্রশ্ন করতে শেখেন।

মি. আলফন্স এবং তার সহকর্মীরা যৌন সহিংসতার মূল কারণগুলো মোকাবিলা করতে পুরুষদের সভার আয়োজন করেন এবং এতে মেয়েদেরকে নেতৃত্বমূলক ভুমিকায় রাখেন।

প্রতি সপ্তাহে ২০ জনের মতো পুরুষ পিতৃত্ব, নারী-পুরুষ সমতা এবং পৌরুষের ইতিবাচক ধারণা নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, নারীদের অনেকেই বলছেন এসব সভায় যোগ দেবার পর তাদের স্বামীদের মাঝে পরিবর্তন আসছে। পরিবর্তন এসেছে মি.বাগউইজার স্ত্রীর সাথে আচরণের মধ্যেও।

সেটা হয়তো শতভাগ নয়, কিন্তু তার পরেও এটা একটা ইতিবাচক সূচনা বলে মনে করেন তিনি।

Bootstrap Image Preview