Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যেভাবে এলো ঘূর্ণিঝড় ফণী’র নাম

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ০৬:২৮ PM
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ০৬:২৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ঘূর্ণিঝড় 'ফণী' আরো জমাট বেধে এখন বড় ধরণের ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে, যাকে আবহাওয়াবিদরা বর্ণনা করছেন 'সিভিয়ার সাইক্লোন' হিসাবে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি এখন কক্সবাজার থেকে ১২৭০ কিলোমিটার আর মংলা থেকে ১১৯০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ৯৪ কিলোমিটার।

যে কারণে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে

তিনি জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী এখন ওড়িশার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তবে উপকূলের কাছাকাছি গিয়ে একটু ঘুরতে পারে। ঝড়টির বর্তমান গতি হিসাব করলে সেটি আগামী ৩ বা ৪ মে'র দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের খুলনা সুন্দরবন এলাকা অতিক্রম করতে পারে। বুধবার নাগাদ পরিষ্কার হয়ে যাবে, ঝড়টি কোন দিকে যাচ্ছে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, আগামী ১/২ দিনের মধ্যে গরম কমতে শুরু করবে। শুক্রবার থেকে মেঘ বা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

কিন্তু ফণী নামটির অর্থ কী?

ঘূর্ণিঝড় 'ফণী' নাম দিয়েছে বাংলাদেশ। এর অর্থ সাপ বা ফণা তুলতে পারে এমন প্রাণী। ইংরেজিতে (Fani) লেখা হলেও এর উচ্চারণ ফণী।

কিভাবে এই নামটি এলো?

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে।

যেমন ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার আটটি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান, যাদের প্যানেলকে বলা হয় WMO/ESCAP।

এর সময় ঝড়গুলোকে নানা নম্বর দিয়ে সনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হতো। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন মনে হতো।

এ কারণে ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোয় ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়।

সে সময় আটটি দেশ মিলে মোট ৬৪টি নাম প্রস্তাব করে। সেসব ঝড়ের নামের মধ্যে এখন 'ফণী' ঝড়কে বাদ দিলে আর সাতটি নাম বাকী রয়েছে।

এর আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ করা হতো।

ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বলা হলেও আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকায় যাকে ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বলা হয় টাইফুন।

ঝড়ের নামের তালিকা

বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর উপকূলের আটটি প্রস্তাব অনুসারে একটি তালিকা থেকে একটির পর একটি ঝড়ের নামকরণ করা হয়। আঞ্চলিক এই আটটি দেশ একেকবারে চারটি করে ঝড়ের নাম প্রস্তাব করে।

যেমন ফণী নামটি বাংলাদেশের দেয়া। এরপরের ঝড়ের নাম হবে ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী ভায়ু। তারপরে আরো ছয়টি ঝড়ের জন্য এখনো নাম তালিকায় রয়েছে।

সেগুলো হলো হিক্কা, কায়ার, মাহা, বুলবুল, পাউয়ান এবং আম্ফান। এই নামগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা আবার বৈঠকে বসে নতুন নামকরণ করবে।

ফণীর মাধ্যমে শেষ সাইকেল শুরু হলো। এরপরে আরো সাতটি ঝড়ের পর বাংলাদেশ আবার চারটি ঝড়ের জন্য নাম দেবে।

এর আগে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা নামগুলো ছিল হেলেন, চাপালা ও অক্ষি। তবে বেশির ক্ষেত্রে ঝড়ের নামকরণে মেয়েদের নামের প্রাধান্য দেখা গেছে।

ফণী নামটি কোথা থেকে এলো?

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলছেন, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার বৈঠকে বাংলাদেশের এক বা একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অংশ নিয়ে থাকেন। আগে থেকে তারা আলোচনা করে নেন যে, কি নাম হবে।

আবহাওয়া দপ্তরের সাবেক পরিচালক শাহ আলম বলছেন, ''এখন ঝড়ের যেসব নাম আসছে, সেগুলো অনেক আগে ঠিক করা হয়েছিল। এমনকি আমি যতদিন দায়িত্বে ছিলাম, তখন আমাদের কোন নাম প্রস্তাব করতে হয়নি। আগে ঠিক হওয়া নামগুলোই এখনো শেষ হয়নি।''

তিনি জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বা সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অংশ নিয়ে থাকে। তারা ঝড়ের নামগুলো করে থাকেন।

পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সেই তালিকা থেকে ঝড়ের নাম বাছাই করা হয়।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলছেন, ঝড়ের নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়, যাতে সেটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক ভাবে কোনরকম বিতর্ক বা ক্ষোভ তৈরি না করে।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন ২০১৩ সালে একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হয়েছিল 'মহাসেন।' ২০০৩ সালে নামটি প্রস্তাব করেছিল শ্রীলঙ্কাই।

কিন্তু সেখানকার ধর্মবিশ্বাসীদের একজন দেবতার নাম ছিল 'মহাসেন'। ফলে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এমনকি শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমে সেটিকে নামহীন ঝড় বলে বর্ণনা করা হয়। পরবর্তীতে রেকর্ডপত্রে ঝড়টির নতুন নাম নির্ধারণ করা হয় 'ভিয়ারু'।

কিভাবে ঝড় তৈরি হয়?

সমুদ্রের উষ্ণ পানির কারণে বায়ু উত্তপ্ত হঠাৎ করে এসব ঝড়ের তৈরি হয়।

তখন তুলনামূলক উষ্ণ বাতাস হালকা হয়ে যাওয়ার কারণে ওপরে উঠে যায়, আর ওপরের বাসা ঠাণ্ডা বাতাস নীচে নেমে আসে। এসে নীচের বায়ুমণ্ডলের বায়ুর চাপ কমে যায়। তখন আশেপাশের এলাকার বাতাসে তারতম্য তৈরি হয়।

সেখানকার বাতাসের চাপ সমান করতে আশেপাশের এলাকা থেকে প্রবল বেগে বাতাস ছুটে আসে। আর এ কারণেই তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড়ের।

এরফলে প্রবল বাতাস ও স্রোতের তৈরি হয়। যখন এসব এই বাতাসের ভেসে ঝড়টি ভূমিতে চলে আসে, তখন বন্যা, ভূমিধ্বস বা জলোচ্ছ্বাসের তৈরি করে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

Bootstrap Image Preview