কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আড়তগুলোতে আসতে শুরু নতুন ধান, কিন্তু সঠিক দাম পাচ্ছে না কৃষকেরা। ইতিমধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হলেও এখন বাকী রয়েছে ৭০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়নি। বৈশাখের শুরুতেই ভৈরব বাজারের আড়তগুলোতে নতুন ধান আমদানি হচ্ছে। বিশেষ করে হাওর জনপদের কয়েকটি উপজেলা এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ধান আসছে বাজারে।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) আড়তগুলোতে প্রতি মণ মোটা ধান ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং চিকন ধান ৫০০ থেকে শুরু করে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
হাওর এলাকা ছাড়াও স্থানীয়ভাবে ও আশপাশের এলাকার নতুন ধানও ভৈরবের পাইকারি আড়তগুলোতে আমদানি হচ্ছে বলে আড়ত মালিকরা জানান। ভৈরব, আশুগঞ্জসহ মুন্সীগঞ্জের রাইস মিল মালিকরা বর্তমানে আমদানিকৃত নতুন ধান কিনছেন।
কৃষকদের দাবি, প্রতি বিঘা বোরো জমিতে সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি শ্রমিক, জ্বালানি তেলসহ সব মিলিয়ে ১২/ ১৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর খানি প্রতি গড়ে ১৮-২০ মণ ধান উৎপাদন হলে বর্তমান মূল্যে মুনাফা হয় না। এ দিকে বাজারে নতুন চাল আমদানি হওয়াই চালের দামও কমে গেছে।
ভৈরব বাজারে প্রতি কেজি চিকন বিআর ২৮/২৯ চাল পাইকারি ৩৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মোটা চালের দাম ৩৩ টাকায় বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। ফলে রাইস মিল মালিকরাও নতুন ধান কিনে লাভবান হচ্ছে না বলে তারা জানান।
জানা গেছে, বাণিজ্য নগরী ভৈরব বাজারে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, সিলেট জেলার প্রায় ২০টি উপজেলা থেকে নতুন ধান আমদানি হচ্ছে। হাওরের সঙ্গে নদীপথে ভৈরবের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় ট্রলারযোগে প্রতিদিন হাজার হাজার মন ধান আমদানি হচ্ছে। ভৈরব বাজারে প্রায় শতাধিক ধানের আড়ত রয়েছে। আড়ত মালিকরা কমিশনের মাধ্যমে কৃষক ও ফরিয়া পাইকারদের আমদানিকৃত ধান ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। দুই মাস আগে ভৈরববাজারে ধানের দাম মোটামুটিভাবে সন্তুুষ্টজনক দামে ধান বিক্রি হয়েছে বলে জানান ক্রেতারা।
ভৈরব ধান আড়ৎ মালিকরা জানায়, বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে দিকে ধানের বাজারে ব্রি-ধান ২৮ প্রতি মণ ৪৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ধানের দাম প্রতি মণে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা কমেছে। তবে আমদানিকৃত বেশিরভাগ নতুন ধান ভেজা থাকায় দাম কম বলে মিল মালিকরা জানান।
সরকার এবার ধান-চাল কিনতে প্রতি কেজি ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে ২৮ টাকা, আর চাল ৩৬ টাকা। তবে সরকারি খাদ্যগুদামে শুকনা ধান সরবরাহ করতে হবে। স্থানীয় গুদামগুলোতে এখনও ধান-চাল কেনা শুরু হয়নি, তবে আগামী মাস থেকে সরকার ধান-চাল ক্রয় করবে বলে জানা যায়। কৃষকের উৎপাদিত সব ধান সরকার কিনতে পারবে না এবং সরকারি গুদামে ধান দেয়া জটিল বলে বেশির ভাগ কৃষক বাজারেই ধান বিক্রি করে থাকে।
ধান বিক্রেতা সরুজুল ইসলাম জানান, প্রতি এক খানি জমিতে ধান ফলাতে খরচ পড়ে ১২/১৩ হাজার টাকা। আর প্রতি এক খানি জমিতে ধান উৎপাদন হয় ১৭ /১৮ মণ। উৎপাদিত ধান বর্তমান বাজার দামে বিক্রি করলে কৃষকের উৎপাদনের খরচের প্রায় অর্ধেক ঘারতি থাকে। কৃষকদের দাবি সরকার যদি কৃষকদের ধান উৎপাদনে সরকারি অনুদান বা ভূতৃকির ব্যবস্থা করে তাহলে দেশের কৃষকরা বাচঁবে।
অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে ভৈরবে আসা আ. করিম মিয়া জানান, প্রতি বছর গ্রামের মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে জমি চাষ করে। সে জমিতে ফসল উঠানের পর দেনা শোধ করতে তাড়াতাড়ি ধান বিক্রি করতে হবে। কিন্তু বাজারে ধান বিক্রি করে কোনো মুনাফা পাব না। সরকারি মূল্য পেলে লাভবান হতাম বলে জানান তিনি।
ভৈরব উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ আলী শরীফ খান জানান, আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক গরিব, তাই তাদের বৈশাখ মাসের শুরুতেই ধান বিক্রি করতে হয়। কয়েকদিন পর ধান বিক্রি করলে কৃষরা ভালো দামে ধান বিক্রি করতে পারতেন। সরকারি গুদামে বেশি বেশি ধান কিনলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পেতেন।
ভৈরব খাদ্যশষ্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবীর জানান, বাজারে আসা ধান বেশিরভাগই ভেজা, তাই দাম কম। আমদানিকৃত ধান শুকিয়ে বিক্রি করলে কৃষকরা দাম একটু বেশি পেতেন। নতুন ধান বাজারে আমদানি হলে প্রতি বছরই শুরুতে দাম কম থাকে। এ ছাড়া বাজারে ধানের দাম কম-বেশির ব্যাপারটি আড়ত মালিকদের ওপর নির্ভর করে না বলে তিনি জানান।