‘যান্ত্রিকীকরণই গড়বে আধুনিক ও লাভজনক কৃষি’ এ প্রতিপাদ্যে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) চত্বরে শুরু হয়েছে জাতীয় কৃষি যন্ত্রপাতি মেলা। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া তিনদিনব্যাপী এ মেলার আজ দ্বিতীয় দিন। কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে আয়োজিত এই মেলায় নেই কৃষকের সরব উপস্থিতি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ‘জাতীয় কৃষি যন্ত্রপাতি মেলা-২০১৯’ এ মেলার উদ্বোধন করেনকৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলা চত্বরে নেই ক্রেতাদের আনাগোনা। কৃষকদের নিয়ে আয়জিত হলেও মেলায় কৃষকদের উপস্থিতি তেমন নেই। মেলায় হাতেগুনা যে কয়েকজন মেলায় এসেছেন তাদের বেশিরভাগই এসেছেন মেলার পণ্যদ্রব্য ঘুরে দেখার জন্য। এরা কেউ কৃষকও নন।
মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি এনেছে তার মধ্যে রয়েছে পাওয়ার টিলার, পাওয়ার রাইচ রিপার, রোটাভেটর, ডিস্ক প্লাউ, ডিস্ক হ্যারো, সাবসয়লার, মাওয়ার, সুগারক্যান হারভ্যাস্টার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, মিনি কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার, থ্রেসার, পটেটো প্লান্টার, পটেটো হারভেষ্টার এছাড়াও আরো অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতির সমাহার।
মেলায় যেসব যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা হয়েছে সেসব যন্ত্রপাতিও অনেক দামী। মেলায় প্রদর্শিত সর্বনিম্ন যন্ত্রপাতির দাম ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা। মেলা ঘুরে দেখা গেছে এমনও কিছু যন্ত্রপাতি আছে যেগুলোর দাম ১০ থেকে ২৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। যা কৃষকদের পক্ষে ক্রয় করা অসম্ভব।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ম্যাকানিকাল টার্নার আব্দুল খালেক বিডিমর্নিংকে বলেন, ঢাকায় মেলার আয়োজন করায় আমরা তেমন সাড়া পাচ্ছি না। মেলায় আমি গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকৃত কৃষকের দেখা পাইনি। এই মেলার আয়োজন যাদের জন্য তাদের দেখা পেতে হলে এই মেলার আয়োজন জেলা পর্যায়ে করা উচিত।
মেলায় আসা বাংলাদেশ বোর্ড এন্ড ফার্মাস এসোসিয়েশান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এগ্রোজোন বিডির স্বতাধিকারী বিডিমর্নিংকে বলেন, ঢাকায় এরকম একটি আয়োজন অবশ্যই ভালো। তবে মেলায় অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও স্থান পায়নি প্রয়োজনীয় ছোট-ছোট আধুনিক যন্ত্রপাতি যা খুবই হতাশাজনক। এই মেলাকে সাফল্যমন্ডিত করতে হলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মেলার আয়োজন করতে হবে। যাতে করে কৃষক আধুনিক যন্ত্রের সাথে পরিচিত হতে পারে, একই সাথে এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে লাভবান হতে পারে।
জামালপুর থেকে মেলায় আসা রহমান এন্ড হক রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন বিডিমর্নিংকে বলেন, যেরকম যন্ত্রপাতি দরকার তেমন তেমন যন্তপাতি নেই। ঢাকায় যারা এখানে মেলায় আসে তারা শখ করে দেখতে আসে। তারাতো যন্ত্রপাতি কিনে না। যাদের যন্ত্রপাতির দরকার তাদের পর্যন্ত পৌছাতে হলে জেলা পর্যায়ে মেলার আয়োজন করতে হবে। তাছাড়া তাদের প্রচার কম।
প্যারাগন পাম্পস লিমিটেডের মার্কেটিং অফিসার নুরুল ইসলাম বিডিমর্নিংকে বলেন, যেরকম সাড়া আশা করছিলাম সেরকম সাড়া আমরা পাইনি। মেলার প্রচারণা কম এবং মেলা ঢাকা কেন্দ্রিক হওয়ার প্রকৃত কৃষকদের উপস্থিতি কম। প্রকৃত কৃষকদের এসব আধুনিক যন্ত্রপাতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হলে জেলা-উপজেলা ম্রলার আয়োজন করে তাদের বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করলে কৃষকরা উপকৃত হবে। মেলায় কৃষই নেই তাহলে যন্ত্রপাতি বেঁচাকেনা হবে কীভাবে। লস হলেও আমরা মেলায় আসি শুধুমাত্র আমাদের প্রচারের জন্য।
প্রসঙ্গগত, মেলায় সরকারি ৮টি ও বেসরকারি ২১টি প্রতিষ্ঠানের ২৭টি স্টল ৩টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। বিভিন্ন প্রকার আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও ব্যবহার সম্পর্কে প্রযুক্তি-নির্ভর প্রদর্শনী সাজিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে মেলা। দ্বিতীয়বারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয় ও ডিএইর খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প।