ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে মো. আবদুর রহিম ওরফে শরিফ নামে আরো এক মাদ্রাসাছাত্র।
এ নিয়ে তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিল। আবদুর রহিম ওই মাদ্রাসার ফাজিল প্রথম বর্ষের ছাত্র। সে চরচান্দিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চরচান্দিয়া গ্রামের হাজী আবদুস শুক্কুরের ছোট ছেলে।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৩টায় ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে হাজির করা হয় আবদুর রহিমকে। সেখানে নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে ঢাকার কামরাঙ্গীর চর এলাকা থেকে ভাগ্নের বাসা থেকে আবদুর রহিমকে গ্রেফতার করে পিবিআই।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, শরিফ স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার নির্দেশে ও পরামর্শে নুসরাতকে হত্যার জন্য গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগানো হয়। এ জন্য ২৮ ও ৩০ মার্চ দুই দফা কারাগারে থাকা মাদ্রাসার অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করা হয়। ৪ এপ্রিল সকালে ‘অধ্যক্ষ সাহেব মুক্তি পরিষদের’ সভা করা হয়। রাতে ১২ জনের এক সভায় হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত ও দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। তার (রহিম) দায়িত্ব পড়ে মাদ্রাসার গেটে। সেখানে নুর উদ্দিন, আবদুল কাদেরও ছিল। মাদ্রাসার ছাদে বোরকা পরে ছিল শাহাদাত, জোবায়ের ও জাবেদ। এ ছাড়া ছাদে ছিল মণি ও পপি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, আবদুর রহিম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, মামলার দুই আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম এবং মো. আবদুর রহিম ওরফে শরিফসহ তিনজন স্বীকারোক্তিতে একই ধরনের কথা বলেছে। তাদের স্বীকারোক্তি থেকেও মণির নাম ওঠে আসে।
উল্লেখ্য, নুসরাতকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন নুসরাতের মা। এ মামলায় গত ২৭ মার্চ গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ সিরাজ। ওই মামলা তুলে নিতে গত ৬ এপ্রিল নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।
নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় মারা যান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় তাকে।