ঋতু বৈচিত্রের এদেশে ঘুরেফিরে ভিন্ন ভিন্ন ঋতু প্রকৃতিতে হাজির হয় নানান রূপে। শীতের পরে আসে বসন্ত, আর বসন্ত মানেই গাছে গাছে নানান ফুলের সমাহার। যা বাংলার প্রকৃতির এক অপরূপ চিত্র। গাছের শাখায় নতুন পত্র-কুড়ি, নতুন ফুল। ফাল্গুন এলেই বাংলার পত্রহরিৎ অরণ্যে নতুন এ পত্র-কুড়ি দেখা যায়। নতুন ফুলে-ফলে ভরে ওঠে গাছের শাখা প্রশাখা। আর বাংলার গাছে গাছে আমের মুকুলের এ চিত্র এমন কোনও বাঙালি নেই, যাকে দোলায় না।
আমের মুকুল দেখতে যেমন-তেমন, এর জাদু হচ্ছে গন্ধে। এর মৌ মৌ গন্ধ পাগল করে সকল বাঙালিকেই। শুধু তাই নয় এ সময়টায় দেখা যায় মৌমাছির দল গুন গুন শব্দে, মনের আনন্দে আহরণ করে মধু। মৌমাছির এ গুন গুন সুরও কেড়ে নেয় অনেক প্রকৃতি প্রেমিকের মন।
গাছে গাছে আমের মুকুল দেখেই মনে পড়ে যায় পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতার পংক্তিগুলো যা ছোটবেলায় সুর করে পড়াহতো ঃ “ঝড়ের দিনে মামার দেশে, আম কুড়াতে সুখ; পাকা জামের শাখায় উঠি, রঙিন করি মুখ। সেই কবিতার বাস্তব রূপ পেতে বাকি রয়েছে আর মাত্র কয়েক মাস। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের জন্য বিখ্যাত হলেও সময় অনেকটাই পাল্টে গেছে। এখন এই তালিকায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলাও নিজের স্থান করে নিয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে নানা জাতের আম। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই আম চাষের জমি বাড়ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আম বাগানের সারি সারি গাছে শোভা পাচ্ছে কেবলই মুকুল। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। চারদিকে ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা ঘ্রাণ। তবে আমের ফলন নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিকরা।
এদিকে মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুকুলে ভরে গেছে বাগানসহ ব্যক্তি উদ্যোগে লাগানো আম গাছগুলোতে। তবে বড় আকারের চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গাছে বেশি মুকুল ফুটেছে। সেই মুকুলের গন্ধে বাগান মালিকদের চোখে ভাসছে স্বপ্ন। বাগান মালিক মাসুদ রানা বলেন, তিনি তার বাগানে বিভিন্ন জাতের শতাধিক আম গাছ লাগিয়েছেন। এর মধ্যে আম্রপালি, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি, ক্ষিরসাপাতি, বারি-৪, হাড়িভাঙা অন্যতম। ইতোমধ্যে এসব গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। গাছের পুরো মুকুল ফুটতে আরো কয়েক সপ্তাহ লাগবে বলেও তিনি জানান।
বাগান মালিক মাসুদ রানা জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে তার বাগানের আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ গাছ মুকুলে ছেয়ে গেছে। কিছু গাছে গাছে মুকুল বের হচ্ছে। তারা আরও জানান, মুকুল আসার পর থেকেই তারা গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছেন। মুকুল রোগবালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ স্প্রে করছেন তারা। বাগান মালিকরা জানান, বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। এ অবস্থা থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এবারের আবহাওয়া অত্যন্ত ভাল। যা আমের বাম্পার ফলনের জন্য উপযোগী। তবে সবকিছুই প্রকৃতির ওপর নির্ভর করছে।