চলার পথে বিশেষ করে গণপরিবহনে যৌন হয়রানি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এক অভিনব কৌশল নিয়েছেন জিনাত জাহান নিশা নামে এক তরুনী।
জিনাত জাহান নিশা এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, বাসে, রাস্তায় নিজের সাথে হওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রতিবাদ, ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলাম ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ লেখনি দিয়ে খোঁপার কাঁটায়। এবার নিয়ে এলাম তা টি-শার্টে।
বাংলাদেশি ডিজাইনার নিশা ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা)) চারুকলা অনুষদ থেকে চিত্রকলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন।
গত ৪ এপ্রিল রাত ১২টা ৪৮ মিনিটে “BJNS’ – বিজেন্স” নামের এক ফেসবুক পেইজে ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ স্লোগান লেখা টি-শার্ট গায়ে নারীদের জনপরিসরে বিচরণের ১২টি ছবি (মডেলিং) আপলোড করা হয়।
‘বিজেন্স’ এর পোস্টে বলা হয়–
বাসে, রাস্তায় নিজের সাথে অথবা মেয়েদের সাথে হওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রতিবাদ, ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলাম ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ লেখনি দিয়ে খোঁপার কাঁটায়। এবার এলো তা টি-শার্ট এ। এই টি-শার্ট পরলেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গুলো বন্ধ হয়ে যাবেনা৷ আমাদের সোচ্চার আওয়াজ -ই পারে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো নির্মূল করতে।
বিজেন্সের নতুন সংযোজন টি-শার্ট।
বিঃ দ্রঃ অনুমতি ছাড়া এই লেখনি, ছবি কোথাও বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন না দয়া করে।
এদিকে সেখানে আপলোড করা ছবিগুলো থেকে কয়েকটিকে এডিট করে ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ এর স্থলে অশ্লীল কিছু বাক্য যুক্ত করে বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা হয়। এবং মূল ছবিগুলোর মতো ভুয়া ছবিগুলো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে সেই অশ্লীল বাক্যযুক্ত ছবিগুলোকে ‘সত্য’ বলে ধরে নিয়েছেন, এবং এমন কার্যকলাপের সমালোচনা করছেন।
ফেসবুকে সুলতান মাহমুদ নামে একজন লিখেছেন, আপনাদের এমন কুরুচি পুর্ণ বিজ্ঞাপনে আমার অনেকগুলো মন্তব্য ছিলো। বলতে গেলে আমার অবস্থা বেহাল হবার উপক্রম হবে। তাই এখানেই নিরব। তবে এমন অবস্থা আপনাদের কাম্য নয়। বিজ্ঞাপন দিতে গিয়ে নিজেরাই বিজ্ঞাপন হওয়া ঠিক না। বাংলাদেশের পুরুষরা সত্যি অন্য রকম এক আইডল। বাসে উঠার পর কখনও কি দেখছেন কোন মেয়ে নিজ থেকে উঠে গিয়ে কোন ছেলেকে বসতে দিয়েছে!! না' এরকম অবস্থা বিরল।
তিনি আরো লিখেছেন, আমি দেখেছি অসংখ্য ছেলেকে মেয়েদের রিস্পেক্ট করে নিজের আসনে বসাতে। সেদিন ফার্মগেট থেকে আসার পথে এক ছেলেকে দেখলাম সিট না পেয়ে মহিলা সিটে বসে পরেছে। কিছুক্ষণ পর এক মহিলা বাসে উঠেই যেন, আকাশ থেকে পরার উপক্রম।ইচ্ছা মত বকে ছেলেটাকে সিট থেকে উঠিয়ে তিনি সিটে বসে যেন মনে হচ্ছে ৩য় বিশ্বযুদ্ধের জয়ের স্বাদ নিচ্ছেন। বাম দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনটা সিট ই মহিলার দখলে। অথচ সিটগুল ছিল স্রেফ পুরুষের জন্য। ঐ মহিলার আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে আস্তে করে আপুদের বল্লাম-- প্লিজ এটা তো পুরুষদের সিট। আমাদের কে আমাদের সিট ছেড়ে দিতে পারেন। আরো মজার ব্যাপার হল - তিনটা মেয়ের পাশেই কিন্তু তিনজন পুরুষ ছিল। মেয়েগুলো আগের মহিলার কান্ড দেখে নিজ থেকে উঠতে গেলে আমি বারণ করলাম। আপনাদের উঠার দরকার নেয়। শুধু ঐ আপুটাকে একটু মার্জিত ব্যবহার শিখিয়ে দিবেন। গা ঘেঁষে বসবেন না। ভাল কথা। এই বাক্যলাপ দারা যদি বুঝান পুরুষরা নিজ থেকে আপনাদের গা গেসে বসতে অভ্যস্ত তাহলে চরম একটা ভূল করবেন। বাসে উঠে কোন সিট না পেলে আপনাদের কি অবস্থা হবে একবার ও ভেবে দেখেছেন? পুরুষরা ও যদি লিখে দেয় গা ঘেঁষে বসবেন না! তাহলে তো কেল্লা খতম।
ফারজানা ইসলাম লিখেছেন, অশ্লীলতা কখনো প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না!!
আকবর হোসেন শিপন নামে একজন লিখেছেন, লোকাল বাসে চড়বেন না, তাহলে কেউ গাঁ ঘেষেও দাঁড়াতে পারবে না।
এম আরমান খান জয় নামে আরো একজন লিখেছেন, দেখুনঃ কি ভাবে অপপ্রচার করা হচ্ছে.... গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না, আজকে কয়েক জন মেয়ে "গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না" লেখা টি-শার্ট পরে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ/পেজে। এই বিষয়টা ওনাদের কাছে ভালো মনে হয়েছে বলে প্রতিবাদ এই ভাবে করেছে। সব বিষয়ের মত এই বিষয়টাতেও দুইটা পক্ষ হয়ে গেছে, এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু, এই লেখাটা ইডেটিং করে নোংরামি করছে একশ্রেণির মানুষ নোংরা ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে। ভাষা গুলো এতোটাই নোংরা যে বলার মত না। তাই, সকলের কাছে অনুরোধ প্রতিবাদ করুন যুক্তিতর্ক দিয়ে নোংরামি আর নোংরা ভাষার ব্যবহার করে না। যদি প্রতিবাদকারীদের পোশাক ভালো না লাগে বা কারো মনে হয় প্রতিবাদের কৌশলটা অযৌক্তিক। তাহলে, কোনটা যৌক্তিক সেট তুলে ধরুন।