Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নির্বাচনের কেন্দ্রে কেন্দ্রে টাকার খেলা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৪:৩৯ PM
আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৪:৩৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সময় ভোটারদের ঘুষ দিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগ পুরনো। এক্ষেত্রে নানা উপহারসামগ্রী, টাকা ও মদকে হাতিয়ার বানান প্রার্থীরা। ভোটারদের বাগে আনতে বৃষ্টির ওপর রুপি চালাচালি হয় তামিলনাড়ু রাজ্যে।

দেশটির ধনী প্রার্থীদের এ রাজ্যে ৫০০ থেকে ২০০০ রুপি অফার করা হচ্ছে। কারও কারও ক্ষেত্রে সেটি আরও বেশি, ১০ হাজার রুপি। কোনো কোনো ভোটারকে দেয়া হচ্ছে মোবাইল ফোনে টপআপ, বাইকের তেল, সোনার আংটি, সোনার চেইন, রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, এমনকি বিদেশ ভ্রমণের সুযোগও।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, তামিলনাড়ু রাজ্যের কেন্দ্রগুলো সামাল দেয়া ভারতের নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তামিলনাড়ু ও পুদুচেরিতে ১৮ এপ্রিল ভোটের দিন ১০ হাজার কোটি রুপির বেশি চালাচালি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে গোয়েন্দা সূত্রগুলো। নির্বাচন কমিশনও বেশ কঠোর ভূমিকায় রয়েছে। তারা প্রার্থীদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। নজরদারি চালাচ্ছেন ভারতের আয়কর দফতর ও শুল্ক দফতরের গোয়েন্দারাও।

ভোটের প্রচারে অংশ নেয়া মানুষকে দেয়া হচ্ছে অর্থ। বড় মাপের রোডশোর জন্য প্রায় ৩ হাজার মানুষের প্রয়োজন। ভাড়ায় সেসব মানুষ আনা হচ্ছে। মাথাপিছু দেয়া হচ্ছে ১৫০ রুপি।

এছাড়া ভোটের দিন প্রত্যেক এজেন্ট ১ থেকে দেড় হাজার ভোটার জোগাড় করবেন। তারা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে দিতে পারলে রয়েছে আকর্ষণীয় অফার। ৫০ লাখ থেকে কোটি রুপি, রয়েছে বিদেশে ভ্রমণের সুযোগ।

শুধু তামিলনাড়ু নয়, অন্যান্য রাজ্যেও নজরদারি বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন। শুধু বেআইনি মদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেই অভিযান নয়, কমিশনের নির্দেশে রাজ্যে রাজ্যে একই সঙ্গে সরকার অনুমোদিত মদের দোকানেও নজরদারি শুরু হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিং জানিয়েছেন, নলহাটি এলাকা থেকে হিসাববহির্ভূত আড়াই লাখ রুপি উদ্ধার হয়েছে। অভিযান চলছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, শুধু পুলিশি অভিযান নয়, এবারও আয়কর দফতরের তরফে অভিযান চলবে। নজরে থাকবে প্রচুর সোনাও। এসবের সঙ্গেই যে বিষয়টি যুক্ত হয়েছে, তা হল মদে নজরদারি।

মূলত ‘অতি স্পর্শকাতর’ এবং ‘স্পর্শকাতর’ এলাকায় মদ বিক্রির ওঠানামা দেখে কড়া পদক্ষেপ নেয়ার পথে হাঁটছে কমিশন। বিশেষ করে কোথাও আচমকা মদ বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে ওই এলাকাকে ‘স্পশর্কাতর’ হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্তও নিচ্ছে।

জেলার আবগারি সুপার বাসুদেব সরকার বলেন, ‘কোনো দোকানে গত বছর যে পরিমাণ মদ বিক্রি হয়েছিল, সেখানেই যদি এবার আগের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি মদ বিক্রি হয়, তা হলে সেই দোকানকে ‘স্পর্শকাতর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।’

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা অফিসে ‘কৃষকবন্ধু’র চেক বিলি করছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান। আর কিছুক্ষণ পরপরই হুমকি-ধামকি দিচ্ছলেন সামনে বসা কৃষক দিন-মজুরদের। বারবার আঙুল তুলে হুশিয়ারি দিচ্ছিলেন। শাসানিটা ছিল- আসছে লোকসভা নির্বাচনে শাসকদল তৃণমূলের প্রার্থীকে ভোট না দিলে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা আর মিলবে না।

ভোটটা তৃণমূলকেই দিতে হবে। না হলে কেড়ে নেয়া হবে কৃষকদের পরিচয়পত্র। মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণও পাবে না পরিবার। সোমবার ওই গোটা ঘটনায় ভোগালী-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মোদাস্সর হোসেনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার কথা বিরোধীরা। খবর ইন্ডিয়া টুডের।

মোদাস্সর শতশত ভোটারকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘পরিষ্কার বলছি, আজ ফটোকপি নিচ্ছি। আগামী দিনে চেক দেয়ার সময় পরিচয়পত্রের অরিজিনাল কেড়ে নেব।’ কৃষকের মৃত্যু হলে যে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা সরকারি প্রকল্পে রয়েছে, তা-ও দেয়া হবে না বলে মুদাস্সর জানিয়ে দেন।

তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর পর ২ লাখ টাকা করে পাওয়ার কথা। সেই টাকাও আর পাবে না।’ পেতে গেলে কী করতে হবে, সে কথাও বলেন তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান। তিনি বলেন, ‘ভোটটা আমাদের দিতে হবে। আমাদের প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী। তাকে জোড়াফুল চিহ্নে ছাপ দিতে হবে।’

ওই পঞ্চায়েতে সব গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ১১ হাজার ভোটার রয়েছে। সব ভোট যাতে তৃণমূলের বাক্সে পড়ে সে ব্যাপারে পঞ্চায়েতে দাঁড়িয়ে নির্দেশ দেন মুদাস্সর। মুদাস্সরের এ দিনের ‘নির্দেশ’ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তৃণমূল নেতৃত্ব।

তবে যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা বলেন, ‘কী ভাবে ওই চেকবিলি হচ্ছিল সেটা ভেবেই অবাক হচ্ছি! এ ভাবে করা যায় নাকি। সরকারি অফিসে দাঁড়িয়ে কোনো প্রধান দলের প্রচার করতেও পারেন না। রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি। কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো হবে।’

রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর সাধারণত সরকারি প্রকল্পের কোনো চেকই বিলি করা যায় না। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখছে কমিশন।

Bootstrap Image Preview