নদীমাতৃক আমাদের বাংলাদেশের বর্তমানে দিন দিন নামে নদ-নদীর চিহ্ন শুধু মাত্র রয়ে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী অনেক নদীর সংখ্যা। অনেক স্থানে এখন নদী খোঁজে পাওয়াই দায়। নদ-নদী কমে যাওয়ার কারণে কমে আসছে পানির উৎসও। ফলে পানি সংকটে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে চাষাবাদ। বিশেষ করে আমন জমিতে এক সময় বোরো চাষ হলেও এখন অনেক আমন জমিতেই পানির অভাবে বোরো চাষ সম্ভব হয় না।
রবিবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় হবিগঞ্জে বৃষ্টি শুরু হয়। একটানা ৪ ঘন্টার বর্ষণে কৃষকের মনে রঙ্গিন স্বপ্নের অঙ্কুর জন্ম দেয়। বৃষ্টির পরশে ফেঁটে চৌচির হয়ে যাওয়া মাটিতে ফিরে প্রাণ, সতেজতা ছড়ায় ধানের গাছে।
হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর এবং চুনারুঘাট উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর বোরো ধানের জমিতে কিন্তু যখন জমিতে (ফাল্গুন মাসের শেষ দিকে) ধান আসার কথা তখনই সেচের অভাবে জমি ফেঁটে চৌচির হয়ে যায় গিয়েছিল ।
দুই উপজেলার প্রায় ১০ হাজার কৃষকের মাথায় হাত পড়ে। অনিশ্চয়তার মাঝে পড়েছিল চলতি বোরো মৌসুমে হবিগঞ্জের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর আমন জমিতে বোরো ধানের চাষ। পানির অভাব দেখা দেয়ায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিল।
জমির এমন অবস্থা দেখে কৃষকরা প্রায় সর্বশান্ত হয়ে সব রাস্তা হারিয়ে দিশেহারা। ঠিক তখনই আল্লাহ তালার রহমতে আশার নতুন সূূূূর্য হয়ে আলো জাগিয়েছে আসে মাত্র ৪ ঘন্টার বৃষ্টি।
এবিষয়ে চুনারুঘাটের কৃষক কামাল মিয়া বলেন, আমার প্রায় ১৯ একর (১ একর সমান ৩২ শতক) জায়গায় বোরো আবাদ করেছি। পানির অভাবে এবার এই জমি থেকে ধান পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু রবিবারের বৃষ্টির কারণে আমি এবং আমার মত সব কৃৃৃষকের জমির জন্য অনেক ভালো হয়েছে। এখন আর বৃষ্টি না হলেও চলবে।
মাধপুুুর উপজেলার কৃষক আলী হোসেন বলেন, পানির অভাবে আমনের জমিগুলোতে বোরো চাষ করা সম্ভব হয় না। তারপরও এবছর ৫ একর জায়গায় চাষ করেছিলাম। কিন্তু পানির অভাবে জমির মাটি ফেঁটে চৌচির হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রবিবারে বৃষ্টিতে জমিগুলোর অনেক ভালো হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী বলেন, সেচ সংকটের জন্য এবার আমন জমিতে বোরো চাষ করতে কৃষকরা মনোবল হারিয়ে ফেলেছিল।
আমরা জেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বোরো চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় জেলায় মোট সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর আমন জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে। তবে সেচের অভাবে জমিগুলো নষ্ট হওয়ার পথে ছিল।
তিনি আরও বলেন, রবিবারের বৃষ্টিতে অনেক স্থানে বোরো ফসলের ক্ষতি হলেও হবিগঞ্জে হয়েছে ব্যতিক্রম। বৃষ্টির কারণে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমি নষ্ট হওয়ার পথ থেকে বাঁচল। না হলে অন্তত ১০ হাজার কৃষকের মাথায় হাত পড়ত।