Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মহানবী (সা.) এর উদ্ধৃতি দিয়ে হাদিস শোনালেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০১৯, ০৬:২৭ PM
আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৯, ০৬:২৭ PM

bdmorning Image Preview


নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের হামলায় শোক প্রকাশ করে আজ ‘আল নুর’ মসজিদের কাছে হ্যাগলি পার্কে সমবেত হন কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে যোগ দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নও।

শুক্রবার (২২ মার্চ) ১টা ৩২ মিনিটে হামলার শিকার আল-নূর মসজিদের পাশে নীরবতার কর্মসূচিতে অংশ নেন জেসিন্ডা। মুসলিমদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনিসহ শত শত কিউই নারী হিজাব পরে শোকানুষ্ঠানে হাজির হন। আসেন হাজারো নিউজিল্যান্ডার।

স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিওতে আজান প্রচার হয়। এরপরই দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

তার আগে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর উদ্ধৃতি দিয়ে শোকার্ত জনতাকে হাদিস শুনিয়ে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা বলেন, ‘নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বাসীরা (মুমিন) সবাই একটি দেহের মতো। দেহের একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে, পুরো শরীর ব্যথা-যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে।’

মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড আপনাদের দুঃখে ব্যাথিত। আমরা সবাই এক।’

মন্ত্রী ও নিরাপত্তা বাহিনীর বেষ্টনির ভেতরে অবস্থান করা আরডার্নের গায়ে কালো পোশাক ও মাথায় ওরনা ছিল।এমনকি হ্যাগলি পার্কের নারী পুলিশরাও একটি লাল গোলাপসহ কালো কাপড় মাথায় দিয়েছিলেন।

এসময় আল নূর মসজিদের ইমাম জামাল ফাওদা ফাওদার ভাষণ সকলের মনকে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করে দেয়।

ইমাম বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ আগে নিউজিল্যান্ডে ঘটে যাওয়া হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় পুরো নিউজিল্যান্ড যেন মাথা নত করেছে। গত শুক্রবার আমি এ মসজিদটিতে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন এক সন্ত্রাসীর চোখে-মুখে ঘৃণা ও ক্ষোভ দেখেছি। এতে অর্ধশত মুসল্লি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪২ জন। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ একই স্থানে দাঁড়িয়ে যখন চারপাশে তাকিয়েছি, তখন নিউজিল্যান্ড ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের চোখে ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখতে পেয়েছি। এতে আরও লাখ লাখ মানুষের হৃদয় ভরে গেছে, যারা আমাদের সঙ্গে এখানে শারীরিকভাবে নেই, কিন্তু আত্মীকভাবে আছেন। ’

তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আমাদের দেশকে শয়তানি মতাদর্শ দিয়ে ছিন্নভিন্ন করতে চেয়েছে, যা বিশ্ববাসীকে হতাশ করে দিয়েছে। কিন্তু এসব কিছু সত্ত্বেও আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে নিউজিল্যান্ড হচ্ছে একেবারে অবিচ্ছেদ্য। বিশ্ব ভালোবাসা ও ঐক্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখতে পারে। আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা বেঁচে আছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে কাউকে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দেব না।’

গত শুক্রবারের (১৫ মার্চ) ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় শোকে মুষড়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। হত-বিহ্বল হয়েছে গোটা পৃথিবী। শোকে মুহ্যমান হয়েছে মুসলিম বিশ্ব। আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদে এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড শুধু নিউজিল্যান্ডে নয়; পৃথিবীতেই নজিরবিহীন।

মর্মন্তুদ এই নৃশংসতার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্নের দরদী ও বিমর্ষ চেহারা দেখেছে বিশ্ববাসী। একদিকে হতাহতদের শোকার্ত পরিবারকে তিনি বুকে টেনে নিয়েছেন। অন্যদিকে মুসলিমসহ অভিবাসীদের আশ্বাস ও অভয় দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা তোমাদের শোকের সঙ্গী হয়তো হতে পারবো না। কিন্তু কথা দিচ্ছি, আমরা একসঙ্গেই চলবো।’

নিহত মুসলিমদের প্রতি সংহতি জানাতে প্রথম থেকেই পোশাক-পরিচ্ছদে নিজেকে অনন্য প্রমাণ করেছেন জেসিন্ডা। নিজেদের সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে হিজাব পরে তিনি মুসলিম কমিউনিটিতে হাজির হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) তিনি নিহতদের স্মরণে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আরবিতে ‘আসসালামু আলাইকুম (আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)’ বলে তার বক্তব্য শুরু করেন। কেবল তা-ই নয়, আমন্ত্রিত মুসলিমদের জন্য সংসদে নামাজের ব্যবস্থাও করে দেন জেসিন্ডা। এরপর অন্য ধর্মের অনুসারীরা প্রার্থনা করেন। তারপর তিনি উঠে গিয়ে সংসদে আসা মুসলিমদের সমবেদনা জানান। মুসলিম নারীদের বুকে টেনে নেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ‘আল নুর’ ও ‘লিনউড মসজিদে’ বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হন ৫০ জন। কট্টর শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী ২৮ বছরের ব্রেনটন ট্যারেন্ট এ হত্যাযজ্ঞ চালায়। নিহতদের মধ্যে পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন ৯ জন এবং বাংলাদেশের ৫ জন।

Bootstrap Image Preview