Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নিষিদ্ধ ঘোষিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০১৯, ০১:১৪ PM
আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৯, ০১:১৪ PM

bdmorning Image Preview


ট্রাম্প সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত দুটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ বছরের আগস্টে ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য এ সমস্ত নিষিদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হবে। ওই মাসেই রাশিয়া ও আমেরিকা আইএনএফ চুক্তি বাতিল কার্যকর হবে। তার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রে এতদিন নিষিদ্ধ হয়ে থাকা মিসাইলগুলোর পরীক্ষা করতে পারে।

দুই দেশের মধ্যকার আইএনএফ চুক্তি থাকার প্রেক্ষিতে এ অস্ত্রগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েকমাসে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একে অপরকে এ চুক্তি ভঙ্গ করার জন্য অভিযুক্ত করতে থাকে। এক পর্যায়ে দুই দেশই এ চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এর পরপরই দুই দেশ এ চুক্তির কারণে একদিন নিষিদ্ধ হয়ে থাকা সে সব অস্ত্র উন্নয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সামরিক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা বলেন, যে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হবে তার মধ্যে একটি এক হাজার কিলোমিটার এবং অন্যটির তিন থেকে চার হাজার কিলোমিটার দুরের লক্ষ বস্তুতে আঘাত হান্তে সক্ষম।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সই করা আইএনএফ চুক্তি থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

তিনি বলেছিলেন, রাশিয়া ৯এম-৭২৯ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস না করলে আমেরিকা আইএনএফ থেকে বেরিয়ে যাবে। রাশিয়া চুক্তি লঙ্ঘন করছে বলেও ট্রাম্প অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে রাশিয়া দাবি করছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেসব তথ্যের ভিত্তিতে রাশিয়াকে ৯এম-৭২৯ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বাতিল করার কথা বলছে তা সত্য নয়। এই ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসন অসত্যের আশ্রয় নিয়েছে। ১৯৮৭ সালে আইএনএফ চুক্তি সই করেছিল আমেরিকা ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন।

রাশিয়ার সাথে করা ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গেলে বিশ্বব্যাপী নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র তার পরমাণু অস্ত্রকে আরো আধুনিকায়নেরও সুযোগ পাবে।

গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার থেকে পরমাণু চুক্তিটির প্রতি দায়বদ্ধ না থাকা এবং ছয় মাসের মধ্যে এর থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেন। এর একদিন পর প্রেসিডেন্ট পুতিন আইএনএফ স্থগিত করার কথা ঘোষণা করেন।

ন্যাটো জানিয়েছে, এই চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তার মিত্রদের ‘পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে। পাশাপাশি ন্যাটো এও জানিয়েছে, রাশিয়ার ৯এম ৭২৯ স্থল থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পদ্ধতি এই চুক্তির লঙ্ঘন বলে যুক্তরাষ্ট্র যে অভিযোগ করেছে তার সাথেও তারা একমত পোষণ করছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘নতুন ধরনের অস্ত্র বানাতে ও পারমাণবিক অস্ত্রের আধুনিকায়ন’ করার জন্য পাল্টা এই চুক্তি থেকে রাশিয়াকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ওয়াশিংটন ‘একতরফাভাবে এবং সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে’ এই চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে চুক্তিটির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছে। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যেই তার অস্ত্রভাণ্ডার আধুনিকায়ন করার ঘোষণা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার নতুন পরমাণু নীতি ঘোষণা করে তখনই দেশটি সতর্ক করে বলেছিল, তারা দু’টি নতুন অস্ত্র ক্রয়ের পরিকল্পনা করছে। একটি নতুন ধরনের কম ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ও একটি নতুন ধরনের ক্রুজ মিসাইল, যা আইএনএফ চুক্তির লঙ্ঘন।

তবে পেন্টাগন জানিয়েছে, তখনই চুক্তির লঙ্ঘন হবে, যখন অস্ত্রগুলো মোতায়েন করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই জোর দিয়ে বলে আসছে যে, ১৯৮৭ সালে মস্কোর সাথে করা চুক্তিতে অস্ত্রের গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।

এ দিকে রয়টার্স জানায়, মার্কিন সরকার রাশিয়ার সাথে ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি বা আইএনএফ চুক্তি বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার বিরোধিতা করেছে করেছে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং এক বিবৃতিতে আইএনএফ চুক্তির ব্যাপারে ‘গঠনমূলক’ আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে চীন। সেইসাথে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সঠিকভাবে মতপার্থক্য নিরসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। শুয়াংয়ের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের ফলে ধারাবাহিক নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনবে। মার্কিন সরকার আইএনএফ চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে সমরাস্ত্র প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে বলে ইউরোপ ও রাশিয়া এর আগে যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তার পুনরাবৃত্তি করেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র।

Bootstrap Image Preview