Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চিহ্নমেলায় দুই বাংলার লেখক-পাঠক-সম্পাদকদের মিলনমেলা

রাবি প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০১৯, ০৭:৫২ PM
আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯, ০৭:৫২ PM

bdmorning Image Preview


উঁচু উঁচু গগনশিরিষ গাছের পাশে আমবাগান। পাশে প্যারিস রোড। সেই বাগানে গাছের ছায়ায় বসে ছিল একদল ছোট কাগজকর্মীদের সম্মিলন। যেখানে দেশ ও বিদেশের দুই শতাধিক বর্ষীয়ান লেখকেরা তাদের প্রকাশিত বই দিয়ে পাঠকের মনের খোরাক জোগাতে এসেছেন। এসেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, শহীদ কাদরী, ভারতের বিখ্যাত উপন্যাস তাত্ত্বিক কথাশিল্পী দেবেশ রায়, প্রবাল কুমার বসুর মতো বিখ্যাত লেখকেরা। এ দৃশ্যের দেখা মেলে মেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য বিষয়ক ছোটকাগজ ‘চিহ্ন’ কর্তৃক আয়োজিত 'চিহ্নমেলা চিরায়তবাংলা'য়।

মেলায় একটি মূল মঞ্চ, লেখকদের আড্ডামঞ্চ, চিহ্ন প্রত্রিকার প্রদর্শনী ও বিশেষ প্রদর্শনী ছাড়াও ছিল দেশের ৯০টি ছোট কাগজকর্মীর সম্পাদক ও দেশের বাইরে থেকে ৩০টি স্টল। ছিল ১২৫টি ছোট কাগজকর্মীদের বইয়ের স্টল। পশ্চিম বাংলার স্টলগুলোর মধ্যে ‘দশদিশি’, ‘শব্দ শাব্দিক’, ‘নৌকো’, ‘কবিতা ক্যাম্পাস’, ‘প্রথমত সময়’  উল্লেখযোগ্য।

মেলায় প্রবেশ করতেই দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ মিনারকে ঘিরে বিভিন্ন চিত্রকর্ম সাজিয়ে রাখা হয়। সেখানে একটি চিত্রকর্মে দেখা যায় একজন গ্রাম্যবধূ পানি ভর্তি কলসি নিয়ে গাছের নিচ দিয়ে ফিরছেন। এরকম আরো গ্রাম্য দৃশ্য এখানে প্রদর্শনীর মাধ্যমে ফুটে উঠে।

মূল মঞ্চে কবির প্যাথোস ও আজকের কবিতা বিষয়ে আড্ডা, ‘চিহ্ন’ প্রকাশিত শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা গ্রন্থ পাঠ উন্মোচন, আলোচনা, বিশিষ্ট কবিদের কবিতা পাঠ ও 'সাহিত্য বিজ্ঞান: দোঁহে অভেদ' বিষয়ে কথা বলেন ইমিরেটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক। এ ছাড়াও কলকাতা গানের দল ‘মনভাষা’ পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

লেখক আড্ডা মঞ্চে প্রবাল কুমার বসুকে তার কবিতা, গল্প ও কাব্যনাট্য বিষয়ে লেখার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যে শব্দগুলো আমি কবিতায় ব্যবহার করতে পারি না সেগুলো আমি চিন্তা করলাম কাব্য সংলাপের মাধ্যমে ব্যবহার কারতে পারব। এ জন্য কাব্য নাটক লিখতে শুরু করি। আবার গল্প লিখতে প্রশান্তি পাই তাই গল্প লিখি।

একজন কবি সাহিত্যিককে পুরস্কার দেওয়া হলে কি একজন ভালো কবির বা লেখকের মর্যাদা দেওয়া হয়? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক জন লেখকের যখন সারাজীনের লেখার সময় শেষ হয়ে যায় তার স্বীকৃতি পাবার জন্য তাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে উপহারের প্রয়োজন আছে। আর যদি তাকে কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার দেওয়া হয় তাহলে তার গুরুত্বটা আরও বেশি বৃদ্ধি পায়। এখানে উপহারটা বা পুরস্কাটা যেহেতু মানুষই দেয়, সেহেতু একজন লেখককে পুরোপুরি মর্যাদা দেওয়া হয় না। এখানে কে উপহার তুলে দিচ্ছে আর কাকে উপহার তুলে দেওয়া হচ্ছে তার উপর নির্ভর করছে একজন লেখকের মর্যাদা।

মেলায় সাহিত্য বিষয়ক ছোট কাগজ ‘চিহ্ন’ একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। প্রদর্শনীতে সকল ছোট কাগজের প্রকাশিত সংখ্যা পাওয়া যায়, যা বিক্রয়ের জন্য নয়। আর বাকি স্টলগুলো থেকে পাঠকেরা স্টলে প্রদর্শিত বই দেখে সেই প্রত্রিকা স্টলে গিয়ে তাদের পছন্দের বই কিনতে পারেন।

মেলায় বিবর্তনের আলোয় সংগ্রহের ইতিহাস-১ ও বিবর্তনের আলোয় সংগ্রহের ইতিহাস-২ এ ১৯৪৭ সালে আগের ডাকটিকিট, সিনেমায় নায়িকাদের ছবির উপরের সিগনাচার, লর্ড ডালহৌসীর স্বাক্ষর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বহস্তে লেখা চিঠি, বাংলার প্রথম সংবাদপত্র প্রভৃতি হাজারো সমাহারে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

মেলার ‘পেন্সিল’ নামের এই কাগজের কর্মীরা একটু ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করে। সেখানে দেখা যায় ছন ও খড়ের সাহায্যে একটি ঘর তৈরী করে- যা গ্রাম বাংলার আদিমকারে গ্রামের ছন খড়ের দিয়ে নির্মিত ঘরগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই চিত্র বহন করছে এই স্টলটি। খড়ের ঘরে তাদের প্রকাশিত বিভিন্ন বই প্রদর্শন করে। সেখানে দর্শকদের ভিড়ও ছিল অনেক।

মেলায় সৃজনশীল ও মননশীল শাখায় দুই জন সাহিত্যিককে পুরস্কার প্রদান করা হয়। সৃজনশীল শাখায় কুড়িগ্রামের সরকার মাসুদকে এবং যশোরের কৃষ্ণনগ উপজেলার হোসেন উদ্দিন হোসেনকে মননশীল শাখায় পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়াও আট জন ছোটকাগজ সম্পাদককে পুরস্কৃত করা হয়।

কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, লেখক-সাহিত্যিকদের মিলনমেলার কর্ণধার চিহ্ন পত্রিকার সম্পাদক শহীদ ইকবাল। তিনি শুধু চিহ্ন পত্রিকার এমন একটা বিশিষ্টতা অর্জন করেছে যাতে মনে হয়, প্রতিনিয়তই এই বাংলা কবিতা, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে নিজে পথ তৈরি করে এগিয়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশে সাহিত্য চর্চা, জ্ঞানের চর্চা অন্ধকার হৃদয়ের তলে যাকিছু থাকে তা আমরা কিছুতেই উপরে আনতে পারি না। এমনকি তা আমরা অনুভবও করতে পারি না।’

চিহ্নপ্রধান ও মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শহীদ ইকবাল বলেন, বাংলা সাহিত্যে সৃজনশীল ও মননশীল লেখক তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে চিহ্নের পথচলা। এ মেলার ফলে দুই বঙ্গের সাহিত্যিকরা একত্রিত হন। এতে তাদের সঙ্গে আমাদের তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনার আদান-প্রদান ঘটে।

ভারতের ‘দশদিশি’ প্রত্রিকার সম্পাদক অতনু শাসন মুখোপাধ্যায় বলেন, আমরা কলকাতা থেকে ২০১৯ সালেই প্রথম চিহ্নমেলায় যোগদান করলাম। ব্যবস্থাপনা আমাদের মুগ্ধ করেছে। আমরা আগামী দিনেও চিহ্ন প্রত্রিকা এবং তাদের আয়োজিত মেলার শুভকামনা করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রত্রিকার সম্পাদক আব্দুল হালিম বলেন, অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে চিহ্নমেলা চিরায়ত বাঙলা হয়ে গেলো। যেখানে দুই বাংলার দুই শতাধিক লিটলম্যাগ কর্মীদের স্টলসহ চিহ্ন পরিপূরক কাগজ ‘¯œান’ কর্মীদের প্রকাশিত বই পড়ার আগ্রহ ও উৎসাহ দেখা দিয়েছে। অনেক পাঠকের সামবেশ ঘটেছে এখানে। 

কাহ্নপা প্রত্রিকার একজন সদস্য নুরে আফজা উর্মী বলেন, কাহ্নপা প্রত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অনীক মাহমুদের অনেকগুলি বই প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকেরা অনেকে এসব বই অনেক আগ্রহ সহকারে কিনছে। এদের  মধ্যে ‘তখনো বৃষ্টি ঝরছিল’, ‘দিন যাপনের গ্লানি’, ‘রূপবন্ধ’, ‘কবিসত্তা ও  কাব্যকলা’ গ্রন্থগুলো অনেক বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাঠকেরা। 

সারাদিন এপার বাংলা ও ওপার বাংলার লেখক-পাঠকে-সম্পাদকদের বিচরণে মুখরিত ছিল এই মেলা। দেশের 

উল্লেখ্য, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শহীদ ইকবাল সাহিত্য বিষয়ক ছোটকাগজ ‘চিহ্ন’ ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব লেখকেরা তাদের গবেষণা লদ্ধ জ্ঞান বইয়ে প্রকাশ করতে পারে না তাদের গবেষণালদ্ধ জ্ঞানকে প্রকাশ করে থাকে এই প্রত্রিকার মাধ্যমে।

Bootstrap Image Preview