ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সঙ্গে ছবি তোলার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করলেন স্বতন্ত্র জোটের ভিপি পদপ্রার্থী অরণি সেমন্তি খান।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরের এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, শোভনের সঙ্গে ছবি তোলার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন সেমন্তি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে পরাজিত সহ-সভাপতি (ভিপি)শোভন স্বতন্ত্র জোটের সেমন্তির সঙ্গে সৌহার্দমূলক আলাপ করতে গেলে তখন সেমন্তিকে তাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে দেখা যায় না। এমনকি তখন তাদের আলাপচারিতায় ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রসঙ্গ উঠে আসে।
প্রায় ৩১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়- রোকেয়া হলে ভোট গ্রহণকালে হামলার জন্য সেমন্তির পাশ থেকে কেউ একজন শোভনকে দায়ী করে কথা বলছিলেন।
এসময় শোভন ও সেমন্তি হাত মেলালে শোভনের এক সমর্থক তাদের দুজনের একটি ছবি তুলতে চান। এসময় রোকেয়া হলে হামলাকারীদের নির্দেশদাতা হিসেবে শোভনের সঙ্গে সেমন্তি ছবি তুলতে অপারগতা জানান।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, শোভনের পাশ থেকে একজন প্রস্তাব করে বলেন, “ভাই, আপনাদের একটা ছবি...”। কিন্তু সেমন্তি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “না, এই লোক কালকে রোকেয়া হলে বলছে- এদের ধরে মারো। এই লোকের সঙ্গে ছবি তুলবো না। সন্ত্রাসীদের সাথে ছবি তুলি না।” এসময় ছাত্রলীগ সভাপতিকে চলে যেতে দেখা যায়।
এর আগে বিকালে টিএসসিতে নূরকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। এসময় তিনি ঢাবি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা নির্বাচনের ফল মেনে নিন। আমরা ক্যাম্পাসে সৌহার্দ বজায় রেখে একসাথে ভাই ভাই হয়ে পথ চলব। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেকোনো বিষয় মিলেমিশে সমাধান করব।
ভিপি নুর বলেন, শোভন আমার বড় ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যিলয়ের সব ছাত্র সংগঠন কাধে কাধ মিলিয়ে একসাথে কাজ করব। পরীক্ষা ও ক্লাশ বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো।
তিনি আরও বলেন, আমরা চেয়েছিলাম একটি দৃষ্টান্তমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। পুন:নির্বাচনের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় পপ্রশাসন বিবেচনা করবে।
এ সময় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে নবনির্বাচিত ভিপি বলেন, আমি দুপুরে নির্বাচিত ভিপি হিসেবে ক্যাম্পাসে আসলে আমার ওপর হামলা হয়। ছাত্রলীগ হামলা করে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টর এবং ছাত্রলীগ সভাপতি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন, আমি হামলার ঘটনায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহার করলাম।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভরত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘মানুষকে দূরে ঠেলে দিয়ে লাভ নাই। কারণ, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে চলতে হবে। সবাই তো আমাদের। কে আপন, কে পর? সবাই তো আপন। তুমি যদি মানুষকে পর করে দাও তাহলে তো হবে না। তোমাকে মনে রাখতে হবে তুমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী। ছাত্রলীগ কর্মীদের মন ছোট হতে পারে না। ছাত্রলীগ কর্মীদের মন অনেক বড় হতে হয়।’
ভিসির বাসভবন অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শোভন বলেন, ‘এই অবরোধ বা এই ভিসির বাড়ির সামনে দাঁড়ানো আল্লাহর ওয়াস্তে আমি তোমাদের বলতেসি, তোমরা ভিসির বাসার সামনে থেকে সরে যাও। তোমরা কার জন্য করতেসো, ছাত্রলীগের জন্যই তো করতোসো, আমাদের জন্যই তো, আমার জন্যই তো করতেসো, আমি এইখানে বলতেসি। তোমরা আমার কথা মানবা না? আমি তো ব্যক্তি না, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি, আমার একটা জায়গা আছে, আমার জায়গাটা তোমরা নষ্ট করো না।’
‘তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের শুধু না, সারা দেশের ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করি। আমরা সেই সব ছাত্রদের দেখে রাখবো, এটা আমাদের দায়িত্ব। দায়বোধের জায়গা থেকে আমরা এটা করবো’ বলেও যোগ করেন তিনি।
শোভন বলেন, ‘আমি তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছি তোমরা পাঁচ মিনিটের মধ্যে এই জায়গা ছেড়ে দিবা। যদি না যাও, তাহলে আমি বুঝবো তোমরা আমাকে মানো না।’
সবার সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘অনেক সময় অনেক কিছুর কারণে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার জন্য দেশের ভালোর জন্য নিজেকে বলি দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার জন্য আমরা সবাইকে একসাথে নিয়ে কাজ করতে চাই। নূরও আমাদের সঙ্গে কাজ করবে।’
শোভন কথা বলার সময় নেতাকর্মীদের অনেকে উচ্চস্বরে কাঁদছিলেন। সে সময় এ আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এরপরই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে (ভিসি চত্বর) থেকে সরে গেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
ওই বক্তব্য দেওয়ার পর শোভন যান টিএসসি চত্বরে। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন নূর ও বিরোধী বিভিন্ন জোটের নেতাকর্মীরা। টিএসসিতে পৌঁছেই নূরকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন শোভন।
এদিকে শোভনের এমন বক্তব্যের প্রশংসা করছেন সবাই। অনেকেই বলছেন, ‘শোভন ভাই নির্বাচনে আপনি হেরে গিয়েও জিতে গেছেন!’
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৩টা ১৭ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর। তিনি পেয়েছেন ১১ হাজার ৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন পেয়েছেন ৯ হাজার ১২৯ ভোট। নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জয়লাভ করেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
এছাড়াও ডাকসুর মোট ২৫টি পদের মধ্যে ২৩ টিতেই ছাত্রলীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। ১৮টি হল সংসদের মধ্যে ১২ টিতে ভিপি পদে জয়ী হয়েছে ছাত্রলীগ। বাকি ছয়টি হলে ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।