জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়া শামীমা বেগমের (১৯) নবজাতক ছেলের মৃত্যুতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ।শামীমার সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় সরকারের ‘উদাসীন’ ও ‘অমানবিক’ সিদ্ধান্তকে দায়ী করেছে লেবার পার্টি।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সিরিয়ার শরণার্থীশিবিরে শামীমার ২০ দিন বয়সী নবজাতক জারাহ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আগে শামীমার আরও দুটি সন্তান অসুস্থতা ও অপুষ্টিতে ভুগে মারা যায়।
জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যের দ্য টাইমসের সাংবাদিক অ্যান্টনি লয়েড সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় একটি শরণার্থীশিবিরে সাক্ষাৎ পান শামীমার। ওই সাংবাদিককে শামীমা বলেন, তিনি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। যেকোনো দিন তাঁর সন্তানের জন্ম হতে পারে। নবাগত সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরতে চান। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শামীমা বলেন তিনি আইএসে যোগ দেওয়ার জন্য অনুতপ্ত নন। তবে তিনি মনে করেন, আইএসের দিন ফুরিয়ে এসেছে।
ব্রিটিশ সরকার শামীমার ছেলের মৃত্যুকে মর্মান্তিক বলে মন্তব্য করে বলেন , সরকার সিরিয়ায় যাওয়ার বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে সতর্ক করে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদের প্রতি আকৃষ্ট না হতে এবং সংঘাতপূর্ণ বিপজ্জনক এলাকায় না যেতে লোকজনকে বাধা দিতে সরকার যা যা করার সব করবে।
শামীমার সন্তানের মৃত্যুর খবরে ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ডিয়ানে অ্যাবট বলেন। এ ঘটনায় সরকার উদাসীন ও অমানবিক ছিল কাউকে রাষ্ট্রহীন করা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। একজন ব্রিটিশ নারী তাঁর নাগরিকত্ব হারিয়েছেন বলে আজ একটি নির্দোষ শিশুকে মরতে হলো।
কনজারভেটিভ এমপি ও বিচার বিভাগবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ফিলিপ লি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এই দুঃখজনক ঘটনায় সরকারের ‘নৈতিক দায়বদ্ধতা ছিল। শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করা এবং তাঁকে যুক্তরাজ্যে ফেরার সুযোগ প্রত্যাখ্যান করার ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, এটা নৈতিকতা দিয়ে নয়, জনগণের দ্বারা চালিত হয়েছে।
সমালোচনার মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেন,যেসব শিশুকে এই পরিস্থিতির দিকে টেনে নেওয়া হয়েছে, তাদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ ছাড়া আমার কিছুই করার নেই।
উল্লেখ্য,আইএসে যোগ দিতে শামীমা মাত্র ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাজ্য ছাড়েন। পরে আইএসের সদস্য এক ডাচ্ তরুণকে তিনি বিয়ে করেন। তাঁর স্বামী আত্মসমর্পণের পর সিরিয়ায় এখন বন্দী। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন শামীমা। গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় শরণার্থীশিবিরে জন্ম নেয় তাঁর ছেলে।২০১৫ সালে শামীমার সঙ্গে তাঁর আরও দুই বন্ধু খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসে যুক্তরাজ্যে ছেড়ে যান। শামীমার বন্ধু খাদিজা বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আমিরার ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানা যায়নি।