Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাকিস্তানের কথোপকথন ফাঁস, খাবারে বিষ মিশিয়ে ভারতীয় সেনাদের হত্যার পরিকল্পনা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ মার্চ ২০১৯, ০৫:৫৮ PM
আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯, ০৫:৫৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


খাবারে বিষ মিশিয়ে ভারতীয় সেনাদের হত্যার নতুন পরিকল্পনা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই! এমনই একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য তাঁদের হাতে এসেছে বলে দাবি করলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।

তাঁদের দাবি, সম্প্রতি পাকিস্তানের একটি ফোন নম্বর থেকে বেশ কিছু কথোপকথন ধরা পড়েছে। তা থেকে জানা গিয়েছে, কাশ্মীরে পাক সেনা এবং আইএসআই-এর যে সব গুপ্তচররা রয়েছে, তারা সেনাদের খাবারে বিষ মেশানোর ষড়যন্ত্র করছে। ইন্ডিয়া টুডে-তে সম্প্রতি এই খবর প্রকাশিত হয়েছে।

ইতিমধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরের সেনা ক্যাম্পের রেশন ডিপোগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছেন গোয়েন্দারা। তবে শুধু জম্মু-কাশ্মীরই নয়, দেশ জুড়ে সেনাদের রেশন ডিপোগুলোতেও নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

পুলওয়ামা কাণ্ডের পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে একটা উত্তেজনার আবহ তৈরি হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমানবাহিনীর এয়ারস্ট্রাইক সেই উত্তেজনা চরমে ওঠে। এই টানাপড়েনের মধ্যেই বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান পাক সেনার হাতে ধরা পড়ে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে পাকিস্তান। এসময় ঢাকের তালে, ফুলের মালায় অভিনন্দনকে বরণ করে নেওয়া হয়।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পাকসেনার একটি কনভয়ে ওয়াঘায় পৌঁছান অভিনন্দন।

ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য মতে, অভিনন্দনকে প্রথমে অমৃতসর এয়ারবেসে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে অভিনন্দনকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হবে।

এর আগে শুক্রবার সকালে সড়ক পথে তাকে প্রথমে ইসলামাবাদ থেকে লাহৌরে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ওয়াঘা-আতারি সীমান্তে পৌঁছে।

অভিনন্দনকে অভিনন্দন জানাতে সকাল থেকে ওয়াঘা সীমান্তে হাজির হয়েছেন কয়েকশো মানুষ। সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কখন ফিরিয়ে দেওয়া হবে অভিনন্দনকে।

৩৫ বছর বয়সী এই পাইলটকে বুধবার থেকে পাকিস্তানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। তার MiG-21 বাইসন যোদ্ধা জেট বিমান জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর জেটে আক্রমণ করেছিল।এরপর তাকে আটক করে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী।বহু নাটকীয়তার পর বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে দেশটির প্রধামন্ত্রী ইমরান খান অভিনন্দনকে ফেরত দেয়ার ঘোষণা দেন। এতে খুশির ফোয়ারা বইছে গোটা ভারত জুড়ে।

অভিনন্দনকে কিছুক্ষণের মধ্যে ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হবে। অমৃতসর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে আট্টারিতে তাকে স্বাগত জানাতে আজ ভোর ৬ টা থেকেই ভিড় জমিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

বন্ধুদের সঙ্গে আট্টারিতে এসেছেন অমৃতসরের বাসিন্দা জিতেন্দর। তিনি বলেন, আমরা এখানে এসেছি আমাদের দেশের নায়ককে ঘরে স্বাগত জানাতে। আমরা আমাদের এই নায়ককে স্বাগত জানাই। তিনি বিমানবাহিনীর যুদ্ধে প্রভূত সাহস দেখিয়েছিলেন এবং পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ার পরেও একটুও বিচলিত হননি।

এদিকে ছেলেকে গ্রহণ করতে ওয়াগা সীমান্তে অপেক্ষা করছেন তার বাবা-মা।

বৃহস্পতিবার সকালেই দিল্লি পৌঁছান অভিনন্দনের বাবা ভারতের বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল এস বর্তমান এবং মা শোভা বর্তমান । সেখান থেকে দুপুরে ওয়াগা সীমান্তে পৌছান তারা।

ছেলে মুক্তি পাবে এই সংবাদে বৃহস্পতিবারই বাবা-মা চেন্নাই থেকে দিল্লি রওনা হন। বিমানে যাত্রীরা এদিন উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি শুভেচ্ছা জানান অভিনন্দনের বাবা-মাকে। সঙ্গে ছিল শুভেচ্ছা বার্তাও। এতে স্বাভাবিকভাবেই খুশি এস বর্তমান ও শোভা বর্তমানও। তাঁদের বিমানটি রাত ১টা নাগাদ দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

বুধবার এক বার্তায় তিনি বলেন, ‌'অভি জীবিত রয়েছে, আহত হয়নি, মনও চাঙ্গা রয়েছে! কী দুর্দান্ত সাহস নিয়ে কথা বলছনে একবার দেখুন... সত্যিকারের সৈনিক ... আমরা ওর জন্য গর্বিত।'

এদিকে ফেরত আনতে ভারতীয় বিমানবাহিনী বিমান পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে পাকিস্তান।পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রস্তাব খারিজ করে পাকিস্তান সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে সড়ক পথে ফেরানো হবে অভিনন্দনকে।

উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে ভারতে ফিরিয়ে আনার রাস্তা ছিল দুটি। তার মধ্যে একটি ওয়াগা আর অন্যটি আকাশপথ। ভারত চায়নি ওয়াগা দিয়ে ফিরুক অভিনন্দন। ভিড় এবং সংবাদ মাধ্যমকে এড়িয়ে আকাশপথে তাঁকে ফেরাতে চেয়েছিল ভারত। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি পাকিস্তান।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, অভিনন্দন বর্তমানকে যাতে ছেড়ে দেয়া হয় সেজন্য ইসলামাবাদের উপর চাপ তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব। এই অধ্যায়ের শুরু থেকেই ভারতের লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানকে চাপে ফেলা।তবে ভারত সরকারের তরফে এই খবরের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।তবে আমেরিকার ভূমিকা যে ছিল সেটা নিয়ে সন্দেহের তেমন কোনো অবকাশ নেই।

এদিকে অভিনন্দনকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে তাকে লাহোরে নেয়া হচ্ছে। ইসলামাবাদ থেকে লাহোর হয়ে ওয়াগাহ-আতারি সীমান্তে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেই তাকে মুক্তি দেয়া হবে।

ইতিমধ্যে ভারতের সীমান্ত এলাকায় অভিনন্দনকে বরণ করে নিতে উৎসবের ফোয়ারা শুরু হয়ে গেছে। ভারতের তিন বাহিনীর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও যোগ দিয়েছেন এই আনন্দ উৎসবে।

দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আটক ভারতের পাইলটকে মুক্তি দিচ্ছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এমন ঘোষণা দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

পাইলটকে মুক্তির কারণ হিসেবে ইমরান খান বলেছেন, শান্তির বার্তা দিতেই ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে। তবে তিনি এও হুশিয়ারি দেন যে, পাইলটের মুক্তির সিদ্ধান্তকে পাকিস্তানের দুর্বলতা ভাববেন না।

নিউজ এইটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ সন্ধ্যায় ওয়াগা সীমান্তে পাইলট অভিনন্দনকে গ্রহণ করবেন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা।

ছেলেকে গ্রহণ করতে বৃহস্পতিবার দিল্লি পৌঁছেছেন অভিনন্দনের বাবা-মা। অভিনন্দনের বাবা ভারতের বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতীয় কমান্ডার অভিনন্দনকে ফেরালে যদি পাক-ভারত উত্তেজনা প্রশমিত হয়, তাতে আপত্তি নেই পাকিস্তানের। এ ব্যাপারে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলতে চান ইমরান খান।

মঙ্গলবার ভারতের বিমানবাহিনী পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে বিমান থেকে গোলাবর্ষণ করে। পর দিন সকালে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত ও এক পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, উত্তেজনা নিরসনে ভূমিকা রাখলে আমরা ভারতীয় পাইলটকে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত।

পরে পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, তিনি এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, আমি তাকে বলেছি যে, আমরা কোনো উত্তেজনা চাই না। তবে আমাদের এই ইচ্ছাকে দুর্বলতা ভাববেন না।

এর পর ইমরান খান বলেন, আমাদের কাছে একজন ভারতীয় পাইলট রয়েছেন। শান্তির নিদর্শন হিসেবে তাকে আমরা মুক্তি দিচ্ছি। সেই সময় পার্লামেন্ট সদস্যরাও তাকে সমর্থন দেন।

এদিকে অভিনন্দনকে আটক করার পর দুটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ পায়। এতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বলেন, আমরা দুই প্রতিবেশী শত্রু রাষ্ট্র হলেও পাকিস্তান সেনারা আমাকে আটকের পর চিকিৎসা দিয়েছেন। সম্মান করেছেন। পাক সেনারা খুবই ভদ্রলোক। আমি মনে করি পাকিস্তান সেনাদের কাছ থেকে আমাদের ব্যবহার শেখার আছে।

অভিনন্দন আরও বলেন, যারা পাকিস্তান সেনাদের বদনাম করেন তারা না জেনে করেন।

এ সময় পাকিস্তান সেনাদের এক সিনিয়র অফিসার বলেন, শত্রুদের প্রতি সদয় হওয়া, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা আল্লাহর রাসুলের নির্দেশ। পাকিস্তানের মুসলমান রাসুল (স.)-এর নির্দেশ পালন করছে মাত্র।

এছাড়া গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী গাড়িবোমা বিস্ফোরণে ভারতের ৪৪ সেনা নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে। এর পরই প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

Bootstrap Image Preview