বুধবার পাকিস্তানী বাহিনীর হামলায় দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিতসহ দিনভর নানা নাটকীয় ঘটনাগুলোর বিষয়ে ভাষণ দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বুধবার বিকেলে তিনি এই ভাষণ দেন। ভাষণে ইমরান খান ভারতের হামলার জবাবে পাকিস্তানের পাল্টা হামলা চালানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, ১৪ই ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরে আত্মঘাতী হামলার তদন্তে সহায়তা করার জন্য নয়াদিল্লীকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমরা ভারতকে বলেছিলাম যে, তোমরা যদি একতরফা কোনো ব্যবস্থা (হামলার পথ বেছে নাও) নাও, তাহলে আমরা পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হবো। কিন্তু ভারত নিজেরাই বিচারক, জুরি আর জল্লাদের ভূমিকা নিয়েছে।’
টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন,‘যদি এই হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটতেই থাকে এবং উত্তেজনা বিরাজমান থাকে, তাহলে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ আমার বা নরেন্দ্র মোদী- কারোর হাতেই থাকবে না। আমরা আপনাকে আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছি। মানবিক শুভবুদ্ধিকে অবশ্যই বিজয়ী করতে হবে।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন,‘ভারত আক্রমণ চালানোর সাথে সাথেই আমরা পাল্টা হামলা চালাইনি। কারণ আমরা আগে পরিস্থিতি পুরোপুরি বোঝার চেষ্টা করেছি। আর এরপরই আমরা ভারতে হামলা চালিয়েছি কেবল একটা বার্তা দেয়ার জন্যই যে, পাকিস্তান একটি স্বার্বভৌম দেশ এবং আমরা (হামলা চালাতে) ভারতে প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখি।’
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন,‘আমি ভারতকে বলতে চাই যে, তাদের যে অস্ত্র আছে এবং একইসাথে পাকিস্তানের যে অস্ত্র আছে, তাতে আমাদের কোনো পক্ষেরই ভুল হিসেবের কোনো সুযোগ নেই। যদি এই উত্তেজনা, হামলা-পাল্টা হামলা আরো বৃদ্ধি পায়, তবে পরিস্থিতি আমার বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-কারোরই নিয়ন্ত্রনে থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের সামরিকবাহিনীর হামলায় দুটি ভারতীয় মিগ যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করা হয়েছে।
যদিও এর আগে ভারত বলেছিল যে, তারা একটি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে।
ইমরান খান আরো বলেন,‘আমরা তাদের দুটো মিগ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছি। আটককৃত পাইলটেরা আমাদের সাথেই আছে।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন,‘কিন্তু এরপর আমাদের গন্তব্য কি? আমি ভারতকে প্রশ্ন করছি। আমাদের অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন,‘দু'পক্ষের হাতে যে ধরনের অস্ত্র আছে তা নিয়ে কোন পক্ষেরই ভুল হিসেবের সুযোগ নেই। সে কারণে আমি ভারতের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন শুভ বুদ্ধির উদয় হয়। ভারতের সাথে যে দ্বন্দ্ব আছে তা নিরসনে আমাদের প্রজ্ঞা এবং বিবেচনা ব্যবহার করতে হবে।’
পাকিস্তানের আকাশ সীমায় প্রবেশ করার পর দুটি ভারতীয় বিমান বিধ্বস্ত করার দাবি করেছে পাকিস্তান এবং সেই সাথে দুই পাইলটকে আটকের কথাও জানিয়েছে তারা। এর মধ্যে এক পাইলটের একটি ভিডিও পরিচয় প্রকাশ করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ভিডিওতে ওই পাইলট নিজের পরিচয় জানিয়েছেন।
পাকিস্তান জানিয়েছে, তাদের হাতে এখন ভারতের দুই পাইলট বন্দী আছেন। তার মধ্যে একজনের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে- চোখ বাঁধা অবস্থায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর ইউনিফর্ম পরা এক লোক বলছে, আমার নাম উইং কমান্ডার অভিনন্দন এবং আমার সার্ভিস নম্বর ২৭৯৮১। আমি একজন ফ্লাইং পাইলট, আমার ধর্ম হিন্দু।
তার কাছে আরো বিস্তারিত পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি দুঃখিত স্যার, আমার এরচেয়ে বেশি বলার অনুমতি নেই’।
ভিডিওতে এরপর ওই উইং কমান্ডারের ইউনিফর্মে লাগানো ব্যাজ দেখানো হয়। ওই ভারতীয় পাইলট আবার বলেন, ‘আমি কি একটি ছোট্ট তথ্য পেতে পারি স্যার?, আমি কি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে আছি?’
এছাড়া পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওই দুই পাইলটের কাছে থাকা কাগজপত্র, ব্যক্তিগত কিছু জিনিস, অফিশিয়াল সরকারি নথি, একটি পিস্তলের ছবি প্রকাশ করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও তাদের লাইভ আপডেট বিভাগে পাকিস্তান কর্তৃক গ্রেফতারকৃত পাইলটের ভিডিও প্রকাশের খবর দিয়েছে।
বুধবার ভোররাতে ভারতীয় যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালানোর পর উত্তেজনার সূত্রপাত। পাকিস্তানি বিমান পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতের আকাশ সীমায় প্রবেশ করে। পাকিস্তান দাবি করেছে তারা ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এবং দুই পাইলটকে আটক করেছে। অন্যদিকে ভারত বলেছে, তারাও পাকিস্তানের একটি বিমান ভূপাতিত করেছে।
পাকিস্তান বিমান ভূপাতিত করার ছবি, ভিডিও ইত্যাদি প্রকাশ করলেও ভারতের পক্ষ থেকে কিছু প্রকাশ করা হয়নি এখনো। ডন পত্রিকায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, এই হামলার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আমাদের আত্মরক্ষার অধিকার, ইচ্ছা আর সামর্থ্য প্রমাণ করা।
পাকিস্তান আইএসপিআরের ডিজি মেজর জেনারেল আসিফ গফুর হামলার কথা নিশ্চিত করে বলেন, পাকিস্তান বিমানবাহিনী এই হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান বিমানবাহিনী পাকিস্তানি আকাশসীমার ভেতরে দুটি ভারতীয় বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। একটি বিমান আজাদ কাশ্মিরের ভেতরে পরে, অপরটি নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে ভারত-অধিকৃত কাশ্মিরে ভূপাতিত হয়। ভারতীয় বিমানের একজন পাইলটকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কিছুদিন আগে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর বহরে আত্মঘাতি হামলার ঘটনা থেকেই দুই দেশের উত্তেজনা শুরু। এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি ভারতের। পাকিস্তান যদিও তা অস্বীকার করেছে। এরপর কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা আর হুমকি পাল্টা হুমকির পরিস্থিতি বিরাজ করছে সীমান্তের দুই পাশে। বুধবার ভারতের পক্ষ থেকে প্রথম পাকিস্তানের আকাশীসীমায় ঢুকে হামলার দাবি করা হয়।
এদিকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আরো হামলার আশঙ্কায় পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকার অন্তত ১০টি বিমান বন্দর বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। পাকিস্তানেরও কয়েকটি বিমান বন্দরে বিমান উঠানামা বন্ধ রয়েছে।