Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচনে পরাজয়; অপমানে আত্মহত্যা স্কুলছাত্রীর

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১০:১৮ AM
আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৮:১৮ PM

bdmorning Image Preview


সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে মেমোশা আক্তার প্রমি (১১) নামের পঞ্চম শ্রেণির এক মেধাবী স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে।

মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দ্বিতীয় দফায় জানাজার নামাজ শেষে উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও (নোয়াপাড়া) গ্রামের বাড়িতে ওই স্কুলছাত্রীর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

গত সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নিজ বাড়ির শোবার ঘর থেকে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় প্রমির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়।

এলাকাবাসীর ধারণামতে, প্রমি স্টুডেন্ট কাউন্সল নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় সহপাঠিদের অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রানালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের প্রতি এলাকাবাসীর দাবি, তদন্ত সাপেক্ষে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসে সঠিক বিচার সম্পন্ন করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী নেটিজেনরাও গত তিন দিন ধরে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।

নিহতের পরিবার এবং সহপাঠিদের সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিপত্র অনুযায়ী সারা দেশে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একযোগে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন সম্পন্ন করতে ২০ ফ্রেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের দিনক্ষণ নির্ধারিত করে দেয়া হলেও বাদাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাষ্ট্রীয় শোক দিবসে (২৫ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন।

তিনটি শ্রেণিতে ১৭ প্রার্থীর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী স্কুলছাত্রী মেমোশা আক্তার প্রার্থী হন। তার প্রার্থীতার বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকের কোনো সম্মতি নেয়নি বলে জানা গেছে।

২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টায় ওই বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণ শুরু হলে বিকেল ৪টার দিকে ঘোষিত ফলাফলে মেমোশা আক্তার প্রাপ্ত ভোটে তৃতীয় হয়ে পরাজিত হন।

এ দিকে ভোটে পরাজিত হলে স্কুলেই কয়েকজন সহপাঠি মেমোশাকে ‘ফেইল ফেইল’ বলে অপমানসূচক নানা কথাবার্তা বলতে থাকলে এক পর্যায়ে মেমোশা কান্নারত অবস্থায় দ্রত বাসায় ফিরে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর মেয়ে খাবার টেবিলে না ফেরায় শোবার ঘরের দরজা খুলে পরিবারের সদস্যরা দেখেন আদরের মেয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আছে। মোমেশার দেহ উদ্ধার করে দ্রুত বাদাঘাট বাজারে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত স্থানীয় চিকিৎসক ওইদিন সন্ধায় তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে শোকাহত মা বলেন, ‘পরাজয় আঁচ করতে পেরে সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই মেয়ে আমার স্কুলে যেতে চায়নি। এরপর প্রধান শিক্ষক স্কুলের অপর তিন ছাত্রীকে বাসায় পাঠিয়ে আমার মেয়েকে চাপ দিয়ে স্কুলে ডেকে নিয়ে যান।’

মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের বাড়িতে মোমেশার দাফন শেষে তার বাবা মোশাহিদ শাহ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি কিংবা আমার স্ত্রীর কোনরকম সম্মতি ছাড়াই প্রধান শিক্ষক চাপ প্রয়োগ করে আমার মেয়েকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধ্য করেন। তারা নির্বাচনের নামে আমার মেধাবী কন্যাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করলেন।’

উপজেলার বাদাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান হাবিবের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি আসলে বুঝতেই পারিনি নির্বাচনে হেরে গিয়ে এমন একটি কোমলমতি ছাত্রী আত্মহত্যা করে ফেলবে।’

শিক্ষা অদিফতরের পরিপত্র ও রাষ্ট্রীয় শোক দিবস (২৫ ফেব্রুয়ারি) উপেক্ষা করে নিজের মনগড়া তারিখে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ বিষয়ে প্রশ্নে তিনি কোনরকম উত্তর না দিয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন।

তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আকিকুর রেজা খাঁন বলেন, ‘ওই স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা ও পুরো বিষয়টি আমি আমার উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’

Bootstrap Image Preview