আসন্ন জাতীয় বাজেটে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাজেট বরাদ্দ বিষয়ক বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সোমবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম- মুনিরা খান মিলনায়তনে বিকাল ৩ টায় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক তাহিয়া আনান ধীরা।
সভাপতি আয়শা খানম বলেন, ইক্যুয়ালিটির জন্য অর্থায়ন এবং বিশেষ পদক্ষেপ প্রয়োজন। বাংলাদেশের নারী আন্দোলন গত নব্বই দশক থেকেই এই বিষয়টি গ্রহণ করেছে। এখন ৪টি থেকে ৪০টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার বাজেট হচ্ছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রস্তাব রেখেছে জেন্ডার বাজেট এবং ইম্প্যাক্ট মনিটরিং করার জন্য সরকারি, বেসরকারি নারী আন্দোলন সমন্বয়ে সেল গঠনের সুপারিশ করেছে।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। তিনি বলেন, বণ্টন যদি জেন্ডার সংবেদনশীল হয়, তাহলে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনা যায়।
তিনি জেন্ডার বাজেট বলতে কি বোঝায়, মেথডলজি এবং এই বাজেটের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার শুরু করেছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ২৯% বরাদ্দ নারীদের জন্য। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নারীকে ক্ষমতায়িত করার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ কতটুকু সুফল আনতে পারছে তা জানার জন্য মনিটরিং করা জরুরি। জেন্ডার বাজেটের মূল লক্ষ্য নারীর ক্ষমতায়ন।
তিনি জেন্ডার বিভাজিত তথ্য উপাত্তের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন এবং নারী ও শিশুর জন্য পৃথক পূর্ণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজন। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বাল্যবিবাহ এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণ প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। তিনি নারীর জন্য আবাসন, নিরাপদ যানবাহন, ডে কেয়ার সেন্টারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বৃদ্ধি করার সুপারিশ করেন।
বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, নারী উন্নয়ন নীতির বাস্তবায়নের জন্য বাজেট বরাদ্দের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। প্রতিবছর কমপক্ষে ৫০ জন নারী উদ্যোক্তার পূঁজির ব্যবস্থা সরকার করবে আর এ জন্য বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে। এর মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন নারী উদ্যোক্তা হতে পারবে। স্কুলের পাঠ্যসূচিতে গার্হস্থ্য অর্থনীতি মেয়েদের এবং কৃষি শিক্ষা ছেলেদের আলাদা না করে দুটি বিষয়েই ছেলেমেয়েরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী গ্রহণ করার সুযোগ থাকতে হবে। জরায়ু মুখের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধের জন্য যে টিকা আছে তার মূল্য কমানোর জন্য সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসমিয়ার টেস্ট-এর ব্যবস্থা রাখার জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বেশি পরিমাণে ঋণ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি কর্মসূচিতে পুরুষ এবং তরুণ সমাজের অন্তর্ভুক্তির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
আলোচনা সভা পরিচালনা করেন মহিলা পরিষদের এডভোকেসি পরিচালক জনা গোস্বামী।