গত জুন থেকে এ বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১ হাজারটি সিগন্যাল পাঠানো হয়েছে মঙ্গল গ্রহে থাকা রোভার অপরচুনিটিকে। বলা হয়েছে, ‘'ওপি (অপরচুনিটির ডাক নাম) জেগে ওঠো। হাই, হ্যালো বলো। সাড়া দাও, প্লিজ।’’ জাগিয়ে তোলার জন্য শেষবারের মতো তাকে বার্তা (সিগন্যাল বা কম্যান্ড) পাঠিয়েছিল নাসা। ‘‘হাই ওপি, হাই... হ্যালো’। কিন্তু না, জেগে উঠল না অপরচুনিটি!
জানা যায়, গত বছরের জুনের শুরুর দিকে পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরি (জেপিএল)-র সঙ্গে শেষবারের মতো যোগাযোগ হয়েছিল অপরচুনিটির। তারপর ভয়ঙ্কর ঝড় উঠে মঙ্গলের এক প্রান্তে। আর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গোটা মঙ্গলে। অপরচুনিটি ছিল তখন মঙ্গলের প্রেজারভেন্স ভ্যালিতে। সেই ‘প্রাণঘাতী’ ঝড় আর তার সঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া ধুলোবালিতেই ‘অন্ধ’ হয়ে যায় রোভার অপরচুনিটির ক্যামেরা, সিগন্যাল রিসিভার ও সেন্ডার যন্ত্রগেলো।
গত বছরের জুনের গোড়ার দিকে পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরি (জেপিএল)-র সঙ্গে শেষ বারের মতো বার্তা বিনিময় হয়েছিল অপরচুনিটির। তারপর এক ভয়ঙ্কর ঝড় শুরু হয় মঙ্গলের এক প্রান্তে। আর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল গোটা মঙ্গলে। অপরচুনিটি তখন ছিলো মঙ্গলের প্রেজারভেন্স ভ্যালিতে।সেই ‘প্রাণঘাতী’ ঝড় আর তার সঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া ধুলোবালিতেই ‘অন্ধ’ হয়ে যায় রোভার অপরচুনিটির ক্যামেরা, সিগন্যাল রিসিভার ও সেন্ডার যন্ত্রগুলি।
২০০৩ সালে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল এয়ারফোর্স স্টেশন থেকে মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্যে রওনা হয় অপরচুনিটি। সাত মাস পর ২০০৪-এর ২৪ জানুয়ারি মঙ্গলে নামে অপরচুনিটি। লাল গ্রহের ‘মেরিডিয়ানি প্লেনাম’ এলাকায়। তার ‘যমজ বোন’ রোভার ‘স্পিরিট’ মঙ্গলে পা ছুঁইয়েছিল ঠিক তার ২০ দিন আগে। স্পিরিট অবশ্য নেমেছিল মঙ্গলের অন্য আর এক প্রান্তে। ১০৩ মাইল (১৬৬ কিলোমিটার) চওড়া ‘গুসেভ ক্রেটার’ এলাকায়। স্পিরিট অবশ্য খুব বেশি দিন বাঁচেনি। মঙ্গলের বুকে ৫ মাইল (৮ কিলোমিটার) এলাকা ঘুরে ২০১১-য় শেষ হয়ে যায় স্পিরিটের মিশন।
নাসার বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, লাল গ্রহ মঙ্গলে বড়জোর ৯০টি মঙ্গল-দিন টিকতে পারবে অপরচুনিটি। সেই সব হিসেব ওলটপালট করে দিয়ে ৫ হাজার মঙ্গল-দিন সক্রিয় থেকেছে অপরচুনিটি। এখনও পর্যন্ত মঙ্গলের বুকে আর কোনও রোভারের এত বেশি দিন ধরে সক্রিয় থাকার রেকর্ড নেই। মঙ্গলের বুকে অনেক কাজও করেছে ৩৮৪ পাউন্ড (১৭৪ কিলোগ্রাম) ওজনের এই রোভারটি। কখনও অপরচুনিটি এগিয়েছে বিশাল বিশাল পাথর, দৈত্যাকার পাথরের বোল্ডার বা চাঙড়ের উপর দিয়ে, কখনওবা বড় বড় নুড়ি-পাথর বিছানো ঢালু পথ ধরে পাহাড়ে উঠেছে, নেমেছে। এক পাহাড় থেকে গিয়েছে অন্য পাহাড়ে। চড়েছে অধুনা মৃত বিশাল বিশাল আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে। চড়েছে পর্বতচুড়োয়। আবার তরতরিয়ে নেমে গিয়েছে শুকিয়ে যাওয়া নদীর গভীর খাদে।
২০০৪-এর জানুয়ারি থেকে ২০১৮-র জুন, এই ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে মঙ্গলের বুকে কী কী কাজ করেছে অপরচুনিটি-
১. এক দিনে মঙ্গলের বুকে সবচেয়ে বেশি পথ হেঁটেছিল এই রোভারই। ৭২১ ফুট বা ২২০ মিটার। ২০০৫-এর ২০ মার্চ। এই রেকর্ড নেই আর কোনও রোভারের। না, আর এক রোভার ‘মিস কিউরিওসিটি’রও নেই।
২. মঙ্গলে পথ হেঁটেছে ১ হাজার ১০০ গজ বা ১ হাজার মিটার। যা একটি রেকর্ড।
৩. জেপিএল-এ নাসার গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠিয়েছে ২ লক্ষ ১৭ হাজারেরও বেশি ছবি। এটিও রেকর্ড।
৪. ৫২টি দৈত্যাকার শিলাখণ্ডের হদিশ দিয়েছে। যেগুলি ভরে রয়েছে বিভিন্ন রকমের খনিজ পদার্থে। ব্রাশ দিয়ে আরও ৭২টি শিলাখণ্ডকে ঝেড়ে-পুঁছে পরিষ্কার করেছে। যাতে ওই শিলাখণ্ডগুলিও খনিজ পদার্থ ভরা কি না, তা স্পেকট্রোমিটার ও মাইক্রোস্কোপিক ইমেজার যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা যায়। এটাও রেকর্ড।
৫. মঙ্গলের বুকে যেখানে প্রথম পা ছুঁয়েছিল অপরচুনিটি, সেখানেই সে প্রথম হদিশ দিয়েছিল খনিজ পদার্থ হেমাটাইটের। জলে যে খনিজের জন্ম হয়। অভূতপূর্ব আবিষ্কার।
৬. ‘এনডেভার ক্রেটার’ এলাকা আবিষ্কার করেছিল অপরচুনিটি রোভার। এমনকী, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছে, ওই এলাকায় এখনও কোন কোন বিশাল হ্রদে পানি রয়েছে তরল অবস্থায়।