Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ধূমপানের ব্যাপারে ইসলামে যেটা বলা হয়েছে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১০:২২ AM
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১০:২২ AM

bdmorning Image Preview


ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। মানুষের কল্যানের জন্য এমন কোনো বিষয় নেই যেটা আলোচনা কারা হয়েছে। এক অনুষ্ঠানে ডা. জাকির নায়েকের কাছে এক ব্যক্তি জানতে চান- ধূমপান করা হারাম কি না। এ বিষয়ে ডা. জাকির নায়েকের বক্তব্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-

‘ধূমপানের কথা যদি বলতে হয়, অনেক বছর আগে যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নত হয়নি বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ সে সময় বলতেন যে ধূমপান মাকরূহ। একটা হাদীসের উপর ভিত্তি করে বলা যেটা আছে সহীহ বুখারীতে (খণ্ড নং-১,অধ্যায়-আযান,হাদীস নং-৮৫৫) নবীজী (সা.) বলেছেন, কখনোও কেউ যদি কাঁচা রসুন বা পেঁয়াজ খায় সে আমার কাছ থেকে, মসজিদ থেকে দূরে থাকবে।

নবীজী (সা.) বলেছেন, পেঁয়াজ বা রসুন খাওয়ার পরে মসজিদে এসো না কারণ বাজে গন্ধ বের হয়। আর ধূমপান করলে তো আরো বাজে গন্ধ বের হয়। পেঁয়াজ, রসুনের চেয়ে বেশি গন্ধ। এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে যেহেতু পেঁয়াজ বা রসুন খাওয়া মাকরূহ, এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞগণ ফতোয়া দিলেন ধূমপান করা মাকরূহ।

কিন্তু এখন বিজ্ঞান অনেক উন্নত হয়েছে। আমরা এখন জানতে পেরেছি যে ধূমপান জিনিসটা আসলে এক ধরনের ধীর গতির বিষক্রিয়া। তামাক আপনি যেভাবে নেন না কেন ধূমপানের মাধ্যমে, সিগারেট অথবা বিড়ি বা হুক্কা খেলেন কিংবা তামাক চিবোলেন এই তামাকের মধ্যে রয়েছে বিষক্রিয়া। এখন আমরা জানি যে এটা ধীর গতির বিষক্রিয়া। আর এ কারণে বর্তমান পৃথিবীর বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ তারা বলেন ধূমপান করা হারাম। শুধু মুসলিম  বিশেষজ্ঞ না অমুসলিমরাও বলেন আর সেজন্যই সংবিধি বদ্ধ সতর্কীকরণ থাকে। সিগারেটের প্যাকেটে একটা সতর্কীকরণ দেয়া থাকে যে, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

আবার অনেক দেশে লেখা থাকে যে ডাক্তারের সতর্কবাণী অথবা সার্জেনের সতর্কবাণী ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর সিগারেটের বিজ্ঞাপন খবরের কাগজে বা কোনো ম্যাগাজিনে থাকুক,বাধ্যতামূলক ভাবে এই সতর্কবাণীটা দিতে হবে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। 

শুধুমাত্র মুসলিমরা নয় অমুসলিমরাও এ ব্যাপারে একমত যে ধূমপান এক ধরনের ধীর গতির বিষক্রিয়া। আর বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানে বলছে প্রতি বছর ৪০ লাক্ষের ও বেশি মানুষ মারা যায় শুধু ধূমপানের কারণে। সব ধরনের তামাক সেবন করলে সংখ্যাটা আরো বেশি হবে।

এছাড়া আরো একটা পরিসংখ্যান বলা হয়েছে, আমি এ ব্যাপারটা জেনেছি যখন আমি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ছিলাম যে ফুসফুসে ক্যান্সারে যারা মারা যায় তাদের ৯০ ভাগেরও বেশি মৃত্যুর কারণ ধূমপান, সিগারেট, বিড়ি বা এরকম কিছু। লংকায় যারা মারা যায় তাদের ৭০ থেকে ৭৫ ভাগের ক্ষেত্রে একমাত্র কারণ ধূমপান। ধূমপান আসলে একটা ধীর গতির বিষ। এতে ঠোঁট কালো হয়ে যায়, হাতের নখ কালো হয়ে যায়, ঠোঁটের ক্ষতি হবে, হাতের আঙ্গুলের ক্ষতি হবে, ক্ষতিগ্রস্থ হবে পাকস্থলী, এতে করে দেখা যাবে কষ্টকাঠিন্য, খাওয়া দাওয়া অনিহা আসে, এতে যৌন ক্ষমতা কমে যেতে পারে, দেখা গেল হয়তো ঔষুধ ঠিক মত কাজ করছে না, এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এটার উপরে একটা লেকচার দেয়া যায় যে ধূমপান কেন হারাম। আমার একটা লেকচারে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম। এখানে বলার সময় নেই। তবে বিভিন্ন রিসার্চ এর উপর নির্ভর করে চারশো‘র ও বেশি এ বিষয়ে ফতোয়া দিয়েছেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞগণ, 

তারা বলেছেন যে ধূমপান করা হারাম। তামাক সেবন করাটাই হারাম। কিছু কিছু দেশে যেমন-পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা আমাদের ভারতের বিশেষজ্ঞগণ বলেন এটা মাকরূহ কিন্তু পুরো পৃথিবীতে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞই বলেন ধূমপান ‘হারাম’।

আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, (সূরা-আরাফ, অধ্যায়-৭, আয়াত-১৫৭) ‘যারা আনুগত্য অবলম্বন করে রসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে, পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষণা করেন ও অপবিত্র জিনিসকে হারাম করে যা তোমাদের জন্য খারাপ তা নিষিদ্ধ করে।’

তাহলে নবীজী (সা.) যা দিয়েছেন তিনি যেগুলোকে ভালো বলেছেন সেগুলোকে আমরা গ্রহণ করবো,আর যেগুলো খারাপ সেগুলো থেকে বিরত থাকবো। এটাই হচ্ছে আইন। আর আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, (সূরা-বাকারা, অধ্যায়-২, আয়াত-১৯৫) ‘তোমরা নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’

তার মানে নিজেকে মেরে ফেলো না। যেহেতু ধূমপান এক ধরনের ধীর গতি সম্পন্ন বিষক্রিয়া, তাই এটা আত্মহত্যা করার মত। বিষক্রিয়া, প্রত্যেক দিন আপনার ক্ষতি হবেই। এর উপর ভিত্তি করে চারশো’র ও বেশি ফতোয়া দেওয়া হয়েছে যে ধূমপান করা হারাম। আর এছাড়াও আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন- (সূরা-আরাফ, অধ্যায়-৭, আয়াত-৩১) ‘পানাহার করো কিন্তু অপচয় করবে না।’

পবিত্র কুরআনে (সূরা-আল ইসরা, অধ্যায়-১৭, আয়াত- ২৬ ও ২৭) ‘যে তোমরা অপচয় করো না,বাজে খরচ করো না,যারা অপচয় করে তারা তো শয়তানের ভাই।’

আমরা সবাই জানি ধূমপান করা আসলে অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে টাকার একটা নোট নিয়ে অথবা সবুজ রং এর ডলার বা পাউন্ড নিয়ে তারপর সেটাতে আগুন ধরিয়ে দিলেন। যখন ধূমপান করেন তখন সিগারেটে আগুন ধরান এটা আসলে টাকা পুড়িয়ে ফেলা, হোক সেটা রুপি বা টাকা বা ডলার বা পাউন্ড অথবা রিয়াল, এটা অপচয় ছাড়া কিছুই না, আর ইসলামে হারাম। আর আমি কারণও দেখাতে পারি কেন এটা হারাম। যখন ধূমপান করেন তখন তাতে পাশের লোকের আরো বেশি ক্ষতিও হয়, অন্যের ক্ষতি তো হতে পারে। আর ধূমপান করলে যখন ধোঁয়াটা বাইরে ছাড়েন তাতে পাশের লোকের বেশি ক্ষতি হয়। যে ধূমপান করে তার চেয়ে যে করে না তার বেশি ক্ষতি হয়। যদি কেউ সিগারেট খেয়ে ধোঁয়া ছাড়ে তার পাশে যে থাকে তার শরীরেও ধোঁয়া চলে যায় এতে করে ধূমপায়ীর চেয়ে পাশের লোকের বেশি ক্ষতি হয়। সেজন্য সিঙ্গাপুরে বাইরে ধূমপান করা নিষিদ্ধ,নিজে একাকী খেতে পারে কিন্তু বাইরে জনসাধারনের সামনে খাওয়া নিষিদ্ধ। তাহলে ধূমপান করা ক্ষতি কর সেজন্য এটা হারাম।

Bootstrap Image Preview