রোহিঙ্গাদের বিপন্নতার অবসান ঘটানোর প্রত্যাশা নিয়ে ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্ক সিটিতে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন (এফআরসি)। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্নার্ড কলেজে এরআরসির দুই দিনের সম্মেলনে এক হচ্ছেন বিশ্বের অনেক শিক্ষাবিদ, মানবাধিকারকর্মীসহ জাতিসংঘের আইনজীবীরা।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, ওই সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটনকারী মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হবে। অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সুরক্ষার প্রশ্নও তোলা হবে সেখানে। এছাড়াও এফআরসি’র এক বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, নিউ ইয়র্কে আয়োজিত তাদের এক সম্মেলন থেকে ‘মিয়ানমার বর্জন’ কর্মসূচি শুরু করা হবে।
আয়োজকরা আরো জানান, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের অবসান ঘটানো আর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েলবিরোধী বিশ্ব-আন্দোলন বিডিএস-এর সাংগঠনিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হবে। বিডিএস-এর পূর্ণরূপ বয়কট, ডিভাস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাঙ্কশন্স অর্থাৎ বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং নিষেধাজ্ঞা। ২০০৫ সালে এই আন্দোলনের সূচনা।
দুনিয়াজুড়ে ইসরায়েলি পণ্য বর্জন, দেশটি থেকে পুঁজি প্রত্যাহার এবং ইসরায়েলি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত এ আন্দোলন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বহু খ্যাতিমান শিল্পী-বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন অঙ্গনের তারকা ব্যক্তিত্ব এই আন্দোলনে জড়িত। মার্কিন বুদ্ধিজীবী নোম চমস্কি, ভারতীয় লেখক অরুন্ধতী রায় আর পিংক ফ্লয়েড ব্যান্ডের রজার ওয়াটারের মতো বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিরা রয়েছেন এই আন্দোলনের সঙ্গে।
এফআরসির সমন্বয়ক মং জার্নি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার, খুনি সেনাবাহিনী ও সরকারের বিদ্বেষ-বিভ্রান্তি ও বর্ণবাদী রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত সামাজিক সংগঠনগুলোকে আমরা বয়কট করবো। ঠিক যেমনটা করা হয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিডিএস আন্দোলনের মাধ্যমে।’
অন্তারিও ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ওআইডিএ) এর প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ২৪ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরী। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা ঘর-বাড়ি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে মিয়ানমারবিরোধী কঠোর প্রস্তাব আনার প্রচেষ্টা নেওয়া হলেও রাশিয়া ও চীনের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।