১লা ফেব্রুয়ারি Ô`ওয়ার্ল্ড হিজাব ডেÕ (বিশ্ব হিজাব দিবস)। বিশ্ব হিজাব দিবসের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশি নাজমা খানের নাম। ১১ বছর বয়সে নাজমা খান বাংলাদেশের বাহিরে নিউইয়র্কে পরিবারের সাথে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠা নাজমা খানের মনমগজে কেবলই ইসলামী জীবন ধারার চেতনা। প্রাইমারী স্কুল জীবন থেকেই একজন মুসলিম নারী হিসেবে পর্দার বিধানকে লালন করতেন। অবশ্য এজন্য তাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। হয়েছেন অপমান, অপদস্থ, লাঞ্চি। তবুও থেমে থাকেননি। তিনি ভেঙে পড়েননি এবং স্তব্ধও হননি।
এক স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, ১১ বছর বয়সে যখন আমি স্কুলের একমাত্র হিজাবী” মেয়ে ছিলাম, তখন আমাকে কেবলমাত্র হিজাব পড়ার কার‡Yই আচরনগত নানান বৈষম্যের স্বীকার হতে হয়েছে। মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় আমাকে বলা হতো ব্যাটম্যান অথবা নিনজা”। আর ৯/১১ এর পরে তারা আমাকে ওসামা বিন লাদেন / টেরোরিস্ট এসব পর্যন্ত বলত! যা সত্যিই আমার জন্যে দুঃসহ ছিল!
অদম্য নাজমা খান অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়াতে তার সিদ্ধান্তে অটল থেকে ফেইসবুক, টূইটারসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে তার ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য ছড়িয়ে দেন। তিনি বিশ্বের সকল মুসলিম ও অমুসলিম নারীদের অন্তত একদিনের জন্য হলেও হিজাব পড়তে আহ্বান জানান। এরপর ২০১৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ফ্রান্স, জার্মানির বিশ্বের প্রায় ৫০টির মতো দেশে নারীরা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে হিজাব দিবস পালন করেন। পরবর্তিতে তা আরো ব্যাপক ভাবে বিশ্ব নারীদের আকৃষ্ট করে। ২০১৭ সালে বিশ্বের প্রায় ১৪০টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়। নাজমা খান মনে করেন, হিজাব পরিধান করার জন্য যে মুসলিম হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। হিজাব মূলতঃ শালীনতার জন্য পরিধান করা হয়। তাই তিনি এটা পরিধান করায় কোনো সমস্যা দেখেন না। তার এই কথায় ব্যাপক সাড়া মেলে। ফলে দেখা যায়, হাজারো অমুসলিম নারী হিজাব পরে দিবসটি পালন করে।
হিজাব কেমন হওয়া উচিৎ!
মহান আল্লাহ বলেনঃ আর হে নবী! মুমিন মহিলাদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানগুলোর হেফাজত করে আর তাদের সাজসজ্জা না দেখায়, যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় তা ছাড়া। আর তারা যেন তাদের ওড়নার আঁচল দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে। তারা যেন তাদের সাজসজ্জা প্রকাশ না করে, তবে নিম্নোক্তদের সামনে ছাড়া স্বামী, বাপ, স্বামীর বাপ, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, নিজের মেলামেশার মেয়েদের, নিজের মালিকানাধীনদের, অধীনস্থ পুরুষদের যাদের অন্য কোন রকম উদ্দেশ্য নেই এবং এমন শিশুদের সামনে ছাড়া যারা মেয়েদের গোপন বিষয় সম্পর্কে এখনো অজ্ঞ। তারা যেন নিজেদের যে সৌন্দর্য তারা লুকিয়ে রেখেছে তা লোকদের সামনে প্রকাশ করে দেবার উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে। (সুরা নূরঃ ৩১আয়াত)
আল্লাহ আরো বলেন, হে নবী! তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদেরকে বলে দাও তারা যেন তাদের চাদরের প্রান্ত তাদের ওপর টেনে নেয়। এটি অধিকতর উপযোগী পদ্ধতি, যাতে তাদেরকে চিনে নেয়া যায় এবং কষ্ট না দেয়া হয়। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরাঃআহযাবঃ ৫৯ আয়াত)
উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ের মাধ্যমে আমরা বুঝলামঃ- পোষাক হতে হবে ঢিলেঢালা। এমন পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকতে হবে, যেটিতে দেহের গঠন, স্তর বুঝা যায়। এমন পাতলা পোষাক পরা যাবেনা যাতে শরীর দেখা যায়। মেয়েরা ছেলেদের মতো এবং ছেলেরা মেয়েদের সাদৃশ্যমূলক পোষাক পরতে পারবেনা।(এটা সুস্পষ্ট হারাম) অন্য ধর্মের পোষাকের সাথে সাদৃশ্যমুলক পোষাক পরা যাবেনা। মেয়েদের জন্যে পোষাকে সুগন্ধী ব্যাবহার না করা। কারন এতে গায়ের মাহরাম আকৃষ্ট হওয়ার সুযোগ থাকে।