দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়েছে বলে দাবি করে বেসরকারি সংস্থা ‘গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ’ (আরডিসি) বলেছে, নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তাই সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। একইসঙ্গে একটি জাতীয় টাক্সফোর্স গঠন করতে হবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। আরডিসি’র সাধারণ সম্পাদক জান্নাত-এ ফেরদৌসীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য্য, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান ও ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য নূর আহমেদ বকুল। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন আরডিসি’র সিনিয়র রিসার্স ফেলো আসাদুল্লাহ সরকার।
মুল বক্তব্য উত্থাপনের পর আলোচনায় অংশ নিয়ে পংকজ ভট্টাচার্য্য নারী নির্যাতন নিয়ে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, সুবর্ণচরে ভূক্তভোগী নারীর জবাববন্দি ও আসীদের স্বীকারোক্তিতে স্পষ্ট হয়েছে, ওই ঘটনার পিছনে নির্বাচনই প্রধান কারণ। কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা ঘুরে এসে জানালো ঘটনার সঙ্গে নির্বাচনের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তাহলে কিভাবে সুবিচার পাওয়া যাবে? তিনি আরো বলেন, মাদক ও জঙ্গিবাদের মতো এক্ষেত্রেও সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। একইসঙ্গে একটি জাতীয় টাক্সফোর্স গঠন করতে হবে। যারা নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করবে। এছাড়া নারী ও শিশু সুরক্ষায় জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গণ কমিটি গঠনের সুপারিশ করেন তিনি।
সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান বলেন, নারী নির্যাতন বন্ধে আইন থাকলেও আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই। ফলে আসামীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। যে কারণে শিশু থেকে বৃদ্ধা ধর্ষণসহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে। তাই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো দায়িত্বশীল ও জনগণকে সচেতন হতে হবে।
সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান সাবেক ছাত্র নেতা নূর আহমেদ বকুল। তিনি আরো বলেন, অনেক নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট পাওয়া গেছে। তাই রাজনৈতিক নেতাদের এটা বন্ধে দায়িত্ব নিতে হবে। চাপ সৃষ্টির জন্য সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সারাদেশে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে সহিংসতা কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে দেশে নারী নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে মূল বক্তব্যে আসাদুল্লাহ সরকার বলেন, প্রতিদিনই নারী ও শিশু ধর্ষণসহ নানা ধরণের নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। আর এসংক্রান্ত মামলার দীর্ঘসূত্রিতা ও আসামীরা শাস্তি না পাওয়ার কারণে নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে।
একশন এইড-এর গবেষণা তথ্য তুলে ধরে সেখানে বলা হয়, দেশের শতকরা ৬৬ ভাগ নারী নিজেদের ঘরেই নির্যাতনের শিকার। সহিংসতার শিকার মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ ভূক্তভোগী বিচার পায়। ৯৬ দশমিক ৯ শতাংশ ভূক্তভোগীর অভিযোগ শুনানীর পর্যায়ে যায় না। আর ৩২ শতাংশ মামলা আদালত থেকে খারিজ হয়ে যায়। ৭৫ শতাংশ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় বলেও প্রবন্ধে দাবি করা হয়।