শূন্য হাত নিয়ে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরছেন আরও ৮০ নিপীড়িত নারীকর্মী। নিজস্ব সম্বল হারিয়ে নিপীড়িত হয়ে দেশে ফেরত আসার ঘটনা যদিওবা নতুন নয়। প্রায় অধিকাংশই সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে উচ্চ বেতনে গৃহকর্মীর কাজ করতেি সৌদিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন তারা।
আজ রোববার রাত ৯টা ২০ মিনিটে এয়ার অ্যারাবিয়ার জি৯-৫১৫ ফ্লাইট যোগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন তারা। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম দেশে ফিরতে তাদের সহায়তা করছে।
সৌদি আরবের রিয়াদ ইমিগ্রেশন ক্যাম্প (সফর জেল) থেকে সরাসরি তাদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত এসব নারী নিয়োগকর্তা কর্তৃক নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে তারা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আর্থিক সহায়তায় এসব নারী শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কাউন্সিলর সারোয়ার আলম বলেন, ‘‘রিয়াদ এবং জেদ্দায় আমাদের দু'টি ‘সেফ হোম’ আছে৷ যেসব নারী কর্মী বিপদে পড়েন, তাঁদের আমরা সেখানে আশ্রয় দেই৷ এরপর তাঁদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি৷ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করি৷’’
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বিডিমর্নিংকে বলেন, ‘অপ্রত্যাশিত কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীকর্মী সৌদি আরবের জেল থেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরছেন। তাদের অধিকাংশই শুধু পরনের কাপড় নিয়ে দেশে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, "গতবছরে যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে যৌন নির্যাতনের কারণে অন্তঃসত্ত্বা নারীও আছেন৷ এছাড়া শারীরিক নির্যাতরে শিকার হয়েছেন অনেকেই৷ আরেকজন মেয়েকে আমরা পেয়েছি যে সৌদি আরবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন৷ এখন তাঁর বাবা তাঁকে আর পরিবারে ফেরত নিতে রাজি নন৷ আমরা বাধ্য হয়ে তাঁকে শেল্টার হোমে পাঠিয়েছি৷’
তিনি আরো বলেন, ‘মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে এসব নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।’
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম’-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরে প্রতি মাসে গড়ে ২০০ করে নারী শ্রমিক দেশে ফিরেছেন৷ সৌদি আরবের রিয়াদ এবং জেদ্দায় সেফ হোমগুলোতে গড়ে ২০০ জন করে নারী শ্রমিক আশ্রয় নিয়েছেন৷
উল্লেখ্য, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, ২০১৭ সালে অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯২৫ জন, যা মোট অভিবাসন সংখ্যার ১৩ শতাংশ। ১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত অভিবাসনপ্রত্যাশী নারী শ্রমিকদের একা বিদেশে যেতে বাধা দেয়া হলেও পরবর্তীতে ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে কিছুটা শিথিল করা হয়। ২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারী শ্রমিকের অভিবাসন হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মোট অভিবাসনের ১৯ শতাংশে।