দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্টিত হতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে আবাসিক হলগুলোতে ভোটকেন্দ্র না রাখার বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য ছাত্রসংগঠনগুলো একমত।
তারা চায়, হলভিত্তিক ভোটকেন্দ্রগুলো কলাভবন, কার্জন হলের মতো একাডেমিক ভবনগুলোতে স্থানান্তর করা হোক। এতে নির্বাচন–প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে। আর ছাত্রলীগ বলছে, এই দাবি অবান্তর ও হাস্যকর।
ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জনে গঠিত কমিটির কাছে ছাত্রসংগঠনগুলোর দেওয়া প্রস্তাবগুলো ঘেঁটে এই চিত্র দেখা গেছে। নির্বাচন উপলক্ষে ১৪টি ছাত্রসংগঠন প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ১১টি সংগঠনের দাবি, হলগুলোতে ছাত্রলীগের আধিপত্য থাকায় নির্বাচন-প্রক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে বলে ভোটকেন্দ্র কাছের একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর করা প্রয়োজন।
তবে ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ৮ (ই) ধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হলে একটি করে ভোটকেন্দ্র থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট হলের সদস্যরা শুধু ওই হলের ভোটকেন্দ্রেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
আবাসিক হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করার দাবির বিষয়ে ঢাবিতে সক্রিয় ১৩টি সংগঠন বলছে তারা হলের বাহিরে ভোটকেন্দ্রের পক্ষে অন্য দিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতারা চান হলেই ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হোক। বাংলাদেশ জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগ (বিসিএল) বলেছে, শিক্ষার্থীরা যেখানে ভোট দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, সেখানেই যেন ভোট নেওয়া হয়। অন্য সব সংগঠনের নেতারা বলেন, আবাসিক হলগুলোতে ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত হবে না।
ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জনে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেছেন, আগামী রোববার তাঁরা ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ করবেন। সেখানে ভোটাররা যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য বলবেন। তাঁরা বলবেন, এ রকম (হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র) একটি বিষয় অনেকেই উল্লেখ করেছেন এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বিষয়টি চিন্তা করা উচিত। তবে অধ্যাপক মিজানুর রহমান এ-ও বলেন, ‘হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র করার বিষয়টি অনেকেই বলেছেন, আমি তাঁদের বলি, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কি কলকাতায় করা সম্ভব?’
হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র চাওয়া ছাত্রসংগঠনগুলো আরও বলছে, দীর্ঘ সময় ধরে ডাকসু অচল থাকায় হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের আধিপত্য জারি রয়েছে, ছাত্রত্ব নেই, এমন নেতারাও হলে থাকেন। হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী। তাই ২৮ বছর পর হতে যাওয়া ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে স্থাপন করা উচিত।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। আসলে ছাত্রলীগ হল দখল করে রাখেনি বরং ছাত্রলীগের সদস্যসংখ্যা হলে বেশি বাম সংগঠনগুলোর সদস্যসংখ্যা কম হওয়ায় তাদের কাছে মনে হচ্ছে ছাত্রলীগ হল দখল করে রেখেছে।’