সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় হলুদের দাম ও সঠিক পরিচর্যার অভাবে চাষিরা আগ্রহ হারাচ্ছেন হলুদ চাষে। অনাবৃষ্টি ও পচন রোগেরসহ বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের কারনে ভাল ফলন না হওয়ায় অন্য চাষাবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা। তবে আকারে ছোট জমি চাষ করলে কিছুটা লাভ হচ্ছে চাষিদের। সে ক্ষেত্রে হলুদের উৎপাদন কম হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষাবাদ কম হয়েছে।
জানা গেছে, সাংসারিক কাজে নিত্য ব্যবহারের মধ্যে হলুদ একটি অন্যতম দ্রব্য। হলুদ রান্নার কজে যেমন লাগে, তেমনি কাচা হলুদ মানুষের চেহারার উজ্জলতা বৃদ্ধিসহ ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধক, রক্ত পরিস্কারক, হজমকারক,সহ কয়েক প্রকারের রোগের প্রতিশেধক ও বটে। কিন্তু এই প্রয়োজনীয় দ্রব্যটির উৎপাদন ভাল না হওয়াই এবং বাজারমূল্য কম থাকায় চাষিরা দিন দিন হলুদ চাষ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ কম হয়েছে যা লক্ষ মাত্রা অর্জনে ব্যর্থ। এ বছর ৩১০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে। গত বছর ৩৩০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়। আমরা চাষি ভাইদের পরিচর্যার ও বেশি জমিতে চাষ করতে আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি আগামী বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো।
উপজেলার এক হলুদ চাষি বলেন, এ বছর ২ বিঘা জমিতে হলুদের চাষ করেছেন তিনি। হলুদের উৎপাদন অনেক কম। এরপর আবার অনেক হলুদ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ২ বিঘা জমিতে আনুমানিক ৮০ মণ হলুদ হবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু হলুদের বীজ, জমির খাজনা এবং সারসহ আনুসঙ্গিক বিভিন্ন কাজে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। তবে আমার পাশের জমিতে হলুদ চাষের পাশাপাশি একই জমিতে বেগুন, ঝাল, ওল, মেটে আলু, কচুরমুখিসহ মিশ্র চাষ করায় ফলে কিছু লাভ হতে পারে। শুধুমাত্র হলুদ চাষ করলে এখন আর লাভ হয় না। হলুদ চাষের জন্য শ্রমিক সার, কীটনাশকের মূল্য অনেক বেশী থাকাসহ ভালো মানের বীজ পাওয়া যায় না।
অপরদিকে মাগুরা গ্রামের হৃদ্বয় আইচ জানান, আমি অল্প জায়গায় হলুদ চাষ করছি ছোট পরিসরে হলুদ চাষ করলে লাভ হয়। তার ৪ কাঠা জমিতে প্রায় ১০ মণ হলুদ হবে।
পরিমল জানান, তিনি ৯ কাঠা জমিতে হলুদ চাষ করে প্রায় ২৫ মণ হলুদ পাবেন বলে আশা করছেন। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ হাজার টাকা। ৯ কাঠা জমিতে হলুদ চাষ করতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
তালা সদরের হলুদ চাষি জানিয়েছেন, এক সময় তাদের অনেক জমিতে হলুদের চাষ হতো। কিন্তু উৎপাদন, পরিচর্যার ও কৃষি অফিসারারা সঠিক কোন পরামর্শ না দেওয়ায় এবং লাভ বেশী না হওয়ায় এখন আর হলুদের চাষ করেন না। বৃহৎ পরিসরে চাষাবাদ করলে লোকসান হয় অনেক বেশী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ-আল মামুন জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় হলুদ এখন অনেক কম উৎপাদন হচ্ছে। হলুদ চাষে পরিশ্রম বেশী, বীজের দাম বেশী। উপজেলায় গতবছর উঁচু জমিতে হলুদ চাষ হয়েছিল, তবে এবার উঁচু জমিতে ধান চাষ করায় হলুদের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে আশা করছি আগামীতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো।