মন্দিরের রীতি ভেঙে সেখানে প্রবেশের করেছিলেন গৃহবধূ কনকদুর্গা। ভারতের কেরালা রাজ্যে সবরিমালার মন্দির দর্শন শেষে বাড়ি ফিরে শাশুড়ির হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন তিনি। মারধরের পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই সময়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২ জানুয়ারি সবরিমালার আয়াপ্পা মন্দিরের ভেতর প্রবেশ করে ইতিহাস রচনা করেন কেরালার কনকদুর্গা ও বিন্দু আম্মিনি। তাদের দুজনেরই বয়স প্রায় ৪০। প্রাচীন প্রথা ভেঙে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ভিত্তিতে পুলিশ পাহারা নিয়ে তারা মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করেন এবং বিগ্রহ দর্শন করেন। নারীমুক্তির অন্যতম উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করার কারণে তাদের নাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
মন্দির থেকে বাড়ি ফেরার পর শ্বশুরবাড়িতে চরম হেনস্তার শিকার হন কনকদুর্গা। তার অভিযোগ, কাঠ দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন শাশুড়ি। মাথায় চোট নিয়ে তাকে পেরিনথালমান্না জেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় নিগ্রহের মামলাও দায়ের করেছে পুলিশ।
গোঁড়া হিন্দু নায়ার পরিবারের মেয়ে কনকদুর্গা একটি আধা সরকারি সংস্থায় কর্মরত। দপ্তরের বৈঠকে যোগ দিতে গত ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে তিরুবনন্তপুরমের উদ্দেশে রওনা দেন। বৈঠক শেষ হলে কোঝিকোড়ের বিন্দুর সঙ্গে তিনি প্রথমে ২৪ ডিসেম্বর সবরিমালার মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করে বিফল হন। ভক্তদের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়ে তারা কিছু দিন আত্মগোপন করেন। পরে ২ জানুয়ারি পুলিশ পাহারা নিয়ে আয়াপ্পা মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করে তারা বিগ্রহ দর্শনে সফল হন।
তবে সবরিমালা মন্দিরে কনকদুর্গার প্রবেশের বিষয়টি জানতেন না তার পরিবারের সদস্যরা। সংবাদমাধ্যমে সেই খবর দেখে তার ভাই দাবি করেছেন, পুলিশ ও সিপিএম’র প্ররোচনায় তার বোন এমন কাজ করেছেন।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়, কেরালা রাজ্যে প্রায় ৮০০ বছরের প্রাচীন সবরিমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের প্রবেশাধিকার দিয়েছে ভারতের সুপ্রীম কোর্ট। প্রাচীন বিশ্বাস যে ওই বয়সের নারীরা ঋতুযোগ্যা, অন্যদিকে মন্দিরটির পূজ্য দেবতা আয়াপ্পা একজন ব্রহ্মচারী, ফলে চিরকুমার এই দেবতার কাছাকাছি ঋতুযোগ্যা নারীরা গেলে তিনি রুষ্ট হতে পারেন। সেজন্যই পেরিয়ার ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভেতরে, এক পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত ওই মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের প্রবেশাধিকার ছিল না। তবে ওই মন্দিরটি ছাড়াও ভারতে এমন আরও কিছু মন্দির রয়েছে, যেখানে নারীদের প্রবেশাধিকার নেই।